Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বেসরকারি বাসে স্বয়ংক্রিয় দরজার প্রস্তাব

কেন এমন প্রস্তাব? পুলিশ বলছে, গত বছর শহরে মোট দুর্ঘটনার অন্তত ২৮ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাসের ভূমিকার কথা।

বিপজ্জনক: চলন্ত বাস থেকে এ ভাবে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করতে চায় ট্র্যাফিক পুলিশ। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বিপজ্জনক: চলন্ত বাস থেকে এ ভাবে যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করতে চায় ট্র্যাফিক পুলিশ। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৮
Share: Save:

চলন্ত বাস থেকে উঠতে বা নামতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। তা ঠেকাতে এ বার সরকারি এসি বাসের মতো বেসরকারি বাসেও স্বয়ংক্রিয় দরজা এবং বড় লুকিং গ্লাস বসাতে চায় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে ট্র্যাফিক বিভাগের তরফে পরিবহণ দফতরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছে লালবাজার। যা নিয়ে বৈঠকও করেছে দুই দফতর। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ওই প্রস্তাবে সায় রয়েছে পরিবহণ দফতরের। বিশেষত, বড় লুকিং গ্লাসের বিষয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশ কমিশনারের মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকে ট্র্যাফিক বিভাগের এই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।

কেন এমন প্রস্তাব? পুলিশ বলছে, গত বছর শহরে মোট দুর্ঘটনার অন্তত ২৮ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বাসের ভূমিকার কথা। দিন কয়েক আগে তালতলায় একটি বেসরকারি বাস থেকে নামছিলেন এক বৃদ্ধা। পুরো নামার আগেই বাসটি ছেড়ে দেয়। ফলে পড়ে যান তিনি। বাসের পিছনের চাকায় পিষে যায় বৃদ্ধার পা। এমন ঘটনা একাধিক ঘটেছে শহরে। যদিও তালতলার ঘটনার ক্ষেত্রে চালক ও কন্ডাক্টরের দাবি, তাঁরা বাস থামানোর আগেই নামতে যান বৃদ্ধা। পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, দরজা খোলা ও বন্ধ হওয়া চালক নিজে নিয়ন্ত্রণ করলে এমন দুর্ঘটনা অনেকটাই কমবে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি বাসগুলির সামনের দিকে থাকে ছোট লুকিং গ্লাস। যার ফলে যাত্রীদের ওঠা-নামা স্পষ্ট দেখতে পান না চালকেরা। অভিযোগ, তার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যাত্রী পুরোপুরি নামা বা ওঠার আগেই গাড়ি ছেড়ে দেন তাঁরা। আর এতেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের দাবি। আবার বাসের সামনে দিয়ে কেউ রাস্তা পারাপার করলে তা-ও ছোট লুকিং গ্লাসের জন্য অনেক সময়ে চালকের চোখ এড়িয়ে যায়। বর্তমানে সরকারি এসি বাসে বড় লুকিং গ্লাস বা ‘ফ্রন্ট মিরর’ রয়েছে। এ বার বেসরকারি বাসে ওই ধরনের আয়না লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে। যাতে যাত্রীদের ওঠা-নামা এবং বাসের সামনে কেউ আছেন কি না, তা সহজেই দেখতে পান চালক।

দ্বিতীয়ত, শহরে চলা সরকারি এসি বাসগুলির দরজা খোলা এবং বন্ধের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন চালক নিজে। ট্র্যাফিক পুলিশের প্রস্তাব, বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রেও সেই দায়িত্ব চালকের হাতে থাকুক। যাতে নির্দিষ্ট স্টপ এলে তবেই দরজা খুলবে। বছর দশেক আগে স্বয়ংক্রিয় দরজার বেসরকারি বাস শহরের রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু সেগুলি চলত দরজা খোলা রেখেই। ফলে ওই বাস বেশি দিন চলেনি।

সে কারণে এ বার বেসরকারি বাসে স্বয়ংক্রিয় দরজা বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা নিয়ে তেমন আশাবাদী নয় লালবাজার। বেসরকারির বাস সংগঠনগুলির সঙ্গে বসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সরকারি একটি সূত্রের দাবি। ট্র্যাফিক পুলিশের এই প্রস্তাব নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে বাস সংগঠনগুলির মধ্যেও। ‘সারা বাংলা বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্তমানে শহরে যত বেসরকারি বাস চলে, সেগুলিতে এই ব্যবস্থা চালু করা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। একই সঙ্গে সব বাসে এই ব্যবস্থা করতে গেলে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। তাই প্রশাসনকে বলব, নতুন বাস রাস্তায় নামার সময়ে ওই শর্ত বাধ্যতামূলক করা হোক।’’ অন্য দিকে ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্‌স’-এর তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যাত্রী-সুরক্ষার স্বার্থে তাঁরা সরকারের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy