তখন আগুনের গ্রাসে রেল ভবন। ফাইল চিত্র
নিউ কয়লাঘাট ভবনের ১৪ তলা আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে জানার পরেও দমকল, পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকেরা কেন লিফট ব্যবহার করতে গেলেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিলই। তবে অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে বাড়িটির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বেশি সময় নেওয়া কেন হল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আপাতত রেলের যাত্রীদের আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রাখতে বুধবার থেকে ভবনের তেতলা পর্যন্ত খোলা রেখে কাজ শুরু করার অনুমতি দিয়েছে দমকল। সিইএসসি-র পক্ষ থেকে ওই অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করার কাজও শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এ দিন বিদ্যুতের টানা জোগান নিশ্চিত করতে দু’টি জেনারেটর সেটও নিয়ে আসেন রেল কর্তৃপক্ষ। অগ্নিকাণ্ডের পরে বিদ্যুৎ না থাকায় প্যাসেঞ্জার রিজ়ার্ভেশন সিস্টেম (পিআরএস) সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে। কোনও মতে ডিজ়াস্টার রিকভারি সার্ভার থেকে গত দেড় দিন ধরে কাজ চালানো হয়েছে। এ দিন থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিয়ালদহ স্টেশনের বুকিং কাউন্টারও সোমবার রাতের পরে ফের সচল হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের পরে দূরপাল্লার ট্রেনের অনলাইন টিকিট ছাড়াও সব ধরনের ট্রেনের টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া কার্যত থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। রেলের যাত্রীদের প্যাসেঞ্জার রিজ়ার্ভেশন সিস্টেমের প্রধান সার্ভার নিউ কয়লাঘাট ভবনের তেতলায় রয়েছে।
বহুতলটির ১৪ তলায় আগুন লেগেছে বোঝার পরেও দমকল, পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকেরা যে ভাবে লিফটের মাধ্যমে উপরে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন, তাতেই কেন আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রেলের আধিকারিকদের একাংশের মতে, তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কর্মীদের দ্রুত বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে আরও বড় বিপত্তি দেখা দিতে পারত। দমকলের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ ভবনের মানচিত্র দিতে না-পারায় উদ্ধারকাজে সমস্যা বাড়ে। এই ডামাডোল এবং সিদ্ধান্তহীনতার টানাপড়েনেই ন’জনকে বেঘোরে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে বলেও প্রশাসনের একাংশ মনে করছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বহুতল বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার পরিকল্পনাও (ইভ্যাকুয়েশন প্ল্যান) কারও কাছেই স্পষ্ট ছিল না বলে অভিযোগ। প্রায় ৪৮ বছরের পুরনো ওই বাড়িতে আগে অগ্নিকাণ্ড ঘটেনি। কিন্তু সেই সঙ্গে বিপদ এড়ানোর ছিটেফোঁটা প্রস্তুতিও ছিল না বলে অভিযোগ। সোমবার
নিউ কয়লাঘাট ভবনের অগ্নিকাণ্ড আদতে সেই বেহাল দশাই বেআব্রু
করে দিয়েছে।
তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে পিআরএস সার্ভার ছাড়াও একাধিক সার্ভার অকেজো হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেই আশঙ্কা থেকেই কি বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করতে দেরি হল? আগুনের মাত্রা কতটা, তা বুঝে তবেই কি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা ভেবেছিলেন আধিকারিকেরা? রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডলও কি আগুনের বহর কতটা, তা বুঝতেই লিফটে চড়ে উপরে গিয়েছিলেন? দিনভর মুখে মুখে ঘুরেছে এই সব প্রশ্নই।
সোমবার অগ্নিকাণ্ডের বেশ কিছুটা সময় পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় বলে অভিযোগ। তত ক্ষণে লিফটের মারাত্মক অঘটন ঘটে গিয়েছে। দমকল, পুলিশকর্মী, রেলের আধিকারিকরাও বিপদের গ্রাসে চলে গিয়েছেন। দমকলের আধিকারিকদের একাংশের মতে, যে কোনও বৈদ্যুতিক আগুনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাই প্রথম কাজ। কারণ, সংযোগ চালু থাকলে শর্ট সার্কিটের ফলে লাইনে প্রভূত তাপ উৎপন্ন হয়ে আগুন আরও বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে আগুন মোকাবিলার এই প্রাথমিক পাঠও মেনে চলা হয়নি। ১৪ তলা থেকে যে ভাবে নীচের তলাগুলিতে আগুন ছড়িয়েছে, তাতে সেই আশঙ্কাই জোরদার হচ্ছে। ভবনের ১৪ ও ১৩ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। ১২ তলাও ক্ষতিগ্রস্ত।
আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করার পিছনে রেলের আধিকারিকদের একাংশ গঙ্গার হাওয়াকে দূষছেন। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেরি হওয়ারে কোনও ভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ওই ভবনের বিদ্যুতের ওয়্যারিং নিয়েও রেলের কর্মী আধিকারিকদের মনেই প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বহু পুরনো ওয়্যারিং ছাড়াও তারের জট ছিল বিভিন্ন জায়গায়। যা প্লাইউড এবং ফলস সিলিং দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ।
ফরেন্সিক তদন্তের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণেও প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রায় দিন-রাত কাজ চলা ওই অফিসে আগুন চিহ্নিত করার আধুনিক ব্যবস্থা নেই কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। রেলের তরফেও ঘটনার কাটাছেঁড়া চলছে। ভবিষ্যতে এমন বিপত্তি ঠেকাতে কী করণীয়, তার নির্দিষ্ট সুপারিশ করার কথা রেলের তদন্ত কমিটির। দেরিতে হলেও এতগুলি প্রাণের বিনিময়ে সচেতনতার পাঠ নিতে চলেছে রেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy