ডিজে বাজিয়ে উল্লাস। ফাইল চিত্র
চাকদহ পারে, কলকাতা পারে না। কেন? ডিজে বন্ধ করা নিয়ে নদিয়ার চাকদহের সাফল্যে একই সঙ্গে উচ্ছ্বসিত এবং হতাশ পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে এখন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। পুলিশ-প্রশাসন যতই ডিজে-র উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করুক, গত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, ডিজে-র তাণ্ডব এক চুলও কমেনি। চলতি বছরেও যে তার অন্যথা হবে, এমনটা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।
পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, তিন বছর আগেই লাগাতার আন্দোলনের জেরে চাকদহকে ‘নো ডিজে জ়োন’ বলে ঘোষণা করেছিল চাকদহ পুরসভা। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সমন্বয় রেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ শহরের মাথাব্যথার কারণ হওয়া সত্ত্বেও শব্দবাজির পাশাপাশি ডিজে-র দাপট রুখতে কলকাতা পুরসভার কোনও ভূমিকা দেখা যায় না। এ বিষয়ে পুরসভা নিশ্চুপ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা।
নির্ধারিত শব্দমাত্রা যেখানে সর্বোচ্চ ৬৫ ডেসিবেল, সেখানে ডিজে-র শব্দ শুরু হয় কমপক্ষে ১৮০-২২০ ডেসিবেল থেকে। প্রতিমা আনা থেকে বিসর্জন, সবটাই চলে উচ্চগ্রামে ডিজে বাজিয়ে। মাইকে সাউন্ড লিমিটার লাগানো বাধ্যতামূলক হলেও অনেক জায়গাতেই যে সেই কাজ হয়নি, তা স্বীকার করে নিচ্ছে খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা মাইক্রোফোনের পিছনে সাউন্ড লিমিটার লাগানোর কথা। কিন্তু সেটা যে সব জায়গায় হয়েছে তা একেবারেই নয়।’’
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, প্রত্যেক মাইকে সাউন্ড লিমিটার লাগানো আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তার পরিবর্তে উৎসেই, অর্থাৎ মাইক তৈরির সময়েই যদি শব্দবিধি মেনে তা তৈরি হয় বা তাতে সাউন্ড লিমিটার লাগিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে সে সমস্যা থাকে না। দু’বছর আগে মাইক নিয়ে একটি মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে প্রস্তাবও জমা পড়েছিল। পরিবেশ আদালত সেই প্রস্তাবকে ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে গ্রহণ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, পুরসভা, পঞ্চায়েত-সহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল অডিয়ো নির্মাণ সংস্থাগুলিকে লাইসেন্স দেওয়ার আগে যেন দেখে নেওয়া হয় শব্দবিধি মেনে সংশ্লিষ্ট যন্ত্র বা মাইক তৈরি হচ্ছে কি না। ওই মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘একটা করে মাইকে সাউন্ড লিমিটার লাগিয়ে কখনওই ডিজে-র শব্দতাণ্ডব ঠেকানো যাবে না। জাতীয় পরিবেশ আদালত উৎসেই শব্দ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। সেটা কোথাও মানা হয় না।’’
ডিজে-র বিরুদ্ধে আন্দোলন করা চাকদহের পরিবেশকর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ডিজে বাজার কথা বন্ধ জায়গায়। তা কেন রাস্তায় আসবে? এ নিয়ে আমরা লাগাতার আন্দোলন করেছি। তার পরে পুলিশ ও পুরসভা সক্রিয় হয়েছে।’’
কিন্তু কলকাতা পুরসভা এ ক্ষেত্রে নীরব কেন? যে ভাবে দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বাঙুরে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে সফল হলেও কলকাতা পুরসভা এখনও প্লাস্টিক বন্ধে অনেকটাই পিছিয়ে, সে ভাবেই কি চাকদহের কাছে হারছে কলকাতা?
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশই কলকাতায় ডিজে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের এখানে কিছু করার নেই। কয়েকটা জায়গায় ডিজে হয়তো লুকিয়ে-চুরিয়ে বাজে। সেটা আলাদা বিষয়।’’ কিন্তু চাকদহ পুরসভা শুধু ডিজে-ই নয়, শব্দবাজি বন্ধ নিয়েও আলাদা করে নির্দেশিকা জারি করেছে তিন বছর আগে। সেখানে কলকাতা পুরসভার শব্দদূষণ নিয়ে কেন কোনও ভূমিকা নেই? স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘পুরসভার পরিবেশ দফতর ঢেলে সাজানো হবে। পরিবেশবিদদের পরামর্শ নেওয়া হবে। আগামী দিনে সব করা হবে।’’
আগামী দিন? অর্থাৎ চলতি বছরে ডিজে-র দৌরাত্ম্য কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy