—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কালীপুজোর আগে বাজি বাজার বসবে। কিন্তু সেখানে বিক্রি হওয়া বাজি বৈধ কিনা, তার আগাম কোনও পরীক্ষা হবে না। চলতি বছরে এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। সম্প্রতি বাজি ব্যবসায়ী, উৎপাদক এবং পুলিশকর্তাদের মধ্যে হওয়া বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও এ কথাই লেখা রয়েছে। এর পরেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মী, সচেতন নাগরিক থেকে বাজি ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তাঁদের দাবি, অন্যান্য বার পরীক্ষা হওয়ার পরেও যেখানে বেআইনি বাজির রমরমা দেখা যায়, সেখানে কোনও রকম পরীক্ষা ছাড়াই বাজি বাজার বসতে দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে? এই সুযোগে বেআইনি, নিষিদ্ধ বাজির রমরমা কারবার ফের শুরু হবে না তো? অনেকে আবার বলছেন, ‘‘এগরা, দত্তপুকুর, বারুইপুরে একের পর এক বাজি বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনার পরেও হুঁশ হল না?’’
লালবাজারের কর্তাদের যদিও দাবি, এখন দেশের অন্য জায়গার মতো পশ্চিমবঙ্গেও ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দবাজি ফাটানোর ছাড়পত্র রয়েছে। তাই শব্দদূষণ রোখার জন্য আলাদা করে আর শব্দমাত্রা পরীক্ষার প্রয়োজন কী? পুলিশের দাবি, ‘‘যে বৈধ বাজি বাজার বসে, সেখানে শুধুমাত্র সবুজ বাজিই বিক্রি করার ছাড়পত্র রয়েছে। তাই আর আলাদা পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’’ একই রকম দাবি শহিদ মিনার বাজি বাজারের উদ্যোক্তা শান্তনু দত্তের। তিনি বললেন, ‘‘বাজি পরীক্ষা করা এখন বাহুল্য। নিয়মই তো বদলে গিয়েছে।’’
‘সবুজ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক তথা পরিবেশকর্মী নব দত্ত যদিও বললেন, ‘‘আসলে সরকার জোর করে উৎসব করাতে চাইছে। উৎসবে যাতে কোনও রকম আঁচ না পড়ে, সেই জন্য সব রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এই কারণেই বাজির পরীক্ষাও বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের এখানে বলা হচ্ছে, শিবকাশী থেকে বৈধ বাজি আসছে। ফলে, পরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু শিবকাশীর বাজি নিয়ে তো সুপ্রিম কোর্টই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আসলে প্রশ্নটা হল, পরিবেশ রক্ষার। আমাদের এখানে সেটাই ভাবা হচ্ছে না। দিল্লিতে সমস্ত রকম বাজি নিষিদ্ধ হয়েছে। কারণ আদালতের নির্দেশ মেনে সেখানকার প্রশাসনও সেটাই চেয়েছে।’’
প্রতি বছর কালীপুজোর সপ্তাহখানেক আগে থেকে কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে শহরে চার জায়গায় বাজি বাজার বসে। বেহালা, কালিকাপুর, টালা এবং ময়দান বাজি বাজারের সেই ব্যবসায়ীরা বৈধ বাজি বাজারে স্টল দেন। তার আগে পুলিশের উদ্যোগে এই বাজি বাজারে কোন কোন বাজি বিক্রি করা যাবে, সেই পরীক্ষা হয় টালা ময়দানে। দমকল, পুলিশের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত থাকেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরাও।
এই মুহূর্তে শুধুমাত্র সবুজ বাজিতে ছাড়পত্র রয়েছে। বলা হয়েছে, সবুজ বাজি তৈরি করে পাঠাতে হবে কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি-তে। তারা বাজি পরীক্ষা করে সবুজ বাজির শংসাপত্র দেবে। বাজির বাক্সের গায়ে লাগানো থাকবে কিউআর কোড। নিরি-র তৈরি মোবাইল অ্যাপ থেকে শুধুমাত্র ওই কিউআর কোড স্ক্যান করে পাওয়া যাবে নিরি-র শংসাপত্র।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর চারটি বাজি বাজারের প্রতিনিধিরা নিজেদের মতো করে কয়েকটি বাজি নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসেন। কিন্তু শুধুমাত্র নিরি-র শংসাপত্র থাকলে তবেই সেই বাজি পরীক্ষা হবে বলে জানিয়ে দেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা। এতেই বাদ হয়ে যায় বেশির ভাগ বাজি। নতুন জটিলতা তৈরি হয় এই সমস্ত বাজির মধ্যে মাত্র একটি শব্দবাজি হওয়ায়। দেখা যায়, পরীক্ষা করতে এসে শব্দমাত্রা মাপার যন্ত্র আনলেও রাখা হয়নি ধোঁয়া পরীক্ষা করার কোনও রকম ব্যবস্থা। ফলে এই ধরনের পরীক্ষার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জটিলতা তৈরি হয় পরীক্ষার সময়ে নিরি-র কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার কারণেও।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা জানান, পরীক্ষা হওয়া বাজির শংসাপত্র দেখে ছাড়পত্র দিতে পারে শুধুমাত্র নিরি। তাদের অনুপস্থিতিতে এই কাজ পুলিশকেই করতে হবে। কিন্তু পুলিশও দায় নিতে চায়নি। এর পরে নানা টালবাহানার শেষে কোনও মতে পরীক্ষা শেষ হয়।
কিন্তু এ বার পরীক্ষাই না হলে যেমন খুশি বাজি বিক্রির পথ তৈরি হবে না তো? ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘বাজি ব্যবসায়ীদেরই এ বার সতর্ক হতে হবে। চোরাগোপ্তা অন্য বাজি বিক্রি না করার ব্যাপারে কড়া হতে হবে বাজারের উদ্যোক্তাদেরই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy