এটিএমে স্কিমার লাগিয়ে প্রতারণা। —ফাইল চিত্র
যাদবপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় একের পর এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েবের তদন্তে নেমে ওই এলাকারই দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কিয়স্ক চিহ্নিত করল পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই দু’টি এটিএমেই স্কিমার লাগিয়ে প্রতারকরা গ্রাহকদের ডেবিট কার্ডের তথ্য চুরি করেছে। তবে গোয়েন্দাদের অনুমান, ওই স্কিমার যন্ত্র লাগানো হয়েছিল এ বছর এপ্রিল মাসে। সেই সময় গ্রাহকদের কার্ড থেকে চুরি করা তথ্য ব্যবহার করে টাকা তোলা হচ্ছে দিল্লির বিভিন্ন এটিএম থেকে।
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রতারিতরা গত এক বছর কোন কোন এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন তার একটা তালিকা তৈরি করি আমরা। সেখান থেকে আমরা কয়েকটি এটিএম খুঁজে পাই, যেগুলো থেকে প্রতারিতরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সময় গত এক বছরে টাকা তুলেছেন। সেই তালিকা থেকেই পাওয়া যায় ওই দু’টি এটিএম।’’ গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই দু’টি এটিএম থেকে এ বছরের এপ্রিল মাসে স্কিমার ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছিল। পাকড়াও করা হয়েছিল রোমানিয়ার নাগরিক দুই এটিএম জালিয়াতকে। এরা গত বছরের এটিএম জালিয়াতিতে গ্রেফতার হওয়া দলেরই সদস্য। সেখান থেকেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ ওই দু’টি এটিএমে লাগানো স্কিমার দিয়েই তথ্য চুরি করা হয়।
গোয়েন্দাদের দাবি, ওই ঘটনার পরে আবার কোনও দল স্কিমার লাগিয়ে তথ্য চুরি করেছে এমন সম্ভবনা কম। কারণ, ওই চত্বরের সব এটিএমেই অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস লাগানো রয়েছে। তার পাশাপাশি গত বছরের স্কিমিংয়ের ঘটনা ঘটার পর থেকে সমস্ত ব্যাঙ্কই তাদের ডেবিট কার্ডে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপের বদলে মাইক্রেো চিপ ব্যাবহার শুরু করে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের জালিয়াতি দমন বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন,‘‘মাইক্রোচিপ থেকে এটিএমে কার্ড সংক্রান্ত তথ্য যায় এনক্রিপটেড হয়ে। সেই তথ্য জালিয়াতরা চুরি করলেও লাভ নেই। কারণ তা ডিকোড করার ‘কি’ (চাবি) তাদের কাছে নেই। ফলে ওই তথ্য দিয়ে তারা কোনও লেনদেন করতে পারবে না।”
আরও পড়ুন: ‘নির্মলা’ নন, ‘নির্বলা’ সীতারামন, এ বার অধীরের কটাক্ষ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে
গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন, অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইসকে ধোঁকা দিয়ে ফের কোনও নতুন পদ্ধতি স্কিমাররা ব্যবহার করছে কি না। তবে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা, এপ্রিল মাসে লাগানো স্কিমার দিয়ে চুরি করা তথ্যই কোনও ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এক তদন্তকারী বলেন,‘‘এপ্রিল মাসে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই রোমানীয় নাগরিককে, তখন আমরা দেখেছিলাম, এটিএমে লাগানো স্কিমিং ডিভাইস থেকে লাইভ ছবি এবং তথ্য হোটেলে বসে পাচ্ছে তারা। হতেই পারে, আমরা ওদের পাকড়াও করার আগে পর্যন্ত যে সমস্ত গ্রাহকদের তথ্য ওরা পেয়েছিল তা সেই সময়েই দলের অন্য কোনও সদস্যকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।” কারণ, রোমানীয় গ্যাংয়ের ৮ জন সব মিলিয়ে ধরা পড়লেও একজনের নাগাল পায়নি পুলিশ। সে সেই সময়ে নেপালে পালিয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: শহরে ফের এটিএম জালিয়াতি, যাদবপুরে একের পর এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা গায়েব
সোমবার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা বলেন,‘‘আমরা এখনও পর্যন্ত ২২টি একই রকম প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তের দায়িত্ব নিচ্ছে।” তিনি জানিয়েছেন, এ দিন ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সঙ্গে গোয়েন্দারা বৈঠক করেন। একটি যৌথ দল গঠন করে শহরের সমস্ত এটিএম পরীক্ষা করে দেখা হবে। খতিয়ে দেখা হবে, নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক আছে কি না। সঙ্গে প্রত্যেকটি থানাকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এলাকার সব ক’টি এটিএমে দিনে অন্তত একবার ‘ভিজিট’ করতে। স্কিমারের মতো কোনও যন্ত্র লাগানো হয়েছে কি না দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে গোয়েন্দাপ্রধানের পরামর্শ, সমস্ত গ্রাহক যদি প্রতি তিনমাসে এক বার করে এটিএম পিন বদলে ফেলেন তাহলে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কমে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy