ট্যাক্সির ডিকিতে এ ভাবেই সব্জির বস্তার আড়ালে রাখা ছিল সুজাতা গায়েনের রক্তমাখা দেহ—নিজস্ব চিত্র।
ট্যাক্সির বুট খুলতেই দেখা গেল শাক-সব্জি বোঝাই একটা সাদা রঙের বস্তা। সন্দেহ করার কিছু নেই। কিন্তু বস্তার পিছন থেকে যেন উঁকি দিচ্ছে একটা অন্য কিছু। কৌতূহলী হয়ে বস্তাটা একটু বাঁ দিকে সরাতেই বস্তার পিছনে দেখা গেল মানুষের মাথা!
আর তা থেকেই ঘণ্টা চারেকের মধ্যে হত্যা রহস্যের সমাধান করল কলকাতা পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার ভোর বেলায়। ভোর সওয়া চারটে নাগাদ পশ্চিম চৌবাগার কাছে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের উপর নাকা চেকিং করছিল প্রগতি ময়দান থানার মোটরসাইকেল পেট্রল পার্টি। পুলিশকর্মীরা একটি হলুদ রঙের ট্যাক্সি দাঁড় করান। রুটিন তল্লাশি করতেই তাঁরা ট্যাক্সির বুট খুলতে বলেন চালককে। নাকার অন্য পুলিশকর্মীরা লক্ষ্য করেন, চালক বুটের ডালা খুলতেই ট্যাক্সিতে বসা এক ব্যক্তি নেমে চম্পট দেওয়ার তাল করছে। পুলিশ কর্মীরা তাঁকে পাকড়াও করার ফাঁকেই তত ক্ষণে সব্জির বস্তার আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়েছে বছর ষাটেকের এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ। ট্যাক্সিতে চালক ছাড়া ছিলেন এক মহিলা এবং এক পুরুষ যাত্রী।
প্রগতি ময়দানের আড়ুপোতার ঘটনাস্থল যেখানে সুজামনিকে খুন করা হয়েছে—নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: রাস্তায় পড়ে মৃত্যু, দেখল শহর
সঙ্গে সঙ্গে প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ ট্যাক্সিচালক-সহ তিন জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। জেরায় জানা যায়, ট্যাক্সির সওয়ার মহিলার নাম মলিনা মণ্ডল এবং তাঁর সঙ্গী পুরুষ যাত্রীর নাম অজয় রং। জেরার মুখে প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে মলিনা এবং অজয় স্বীকার করেন, দেহটি কবরডাঙার বাসিন্দা সুজামনি গায়েনের। মৃত মলিনার বড় মেয়ের শাশুড়ি। মেয়ের সঙ্গে তার শাশুড়ির বিবাদের জেরে মলিনা, অজয় এবং মলিনার স্বামী— তিন জন মিলে সুজামনিকে লাঠি দিয়ে মেরে, গলা টিপে খুন করেছে। তার পর ট্যাক্সিতে দেহ তুলে সব্জির বস্তার আড়ালে নিয়ে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কোথাও দেহটি ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই পাকড়াও হয় তারা।
আরও পড়ুন: মর্গের পথে রাস্তায় পড়ল করোনা-দেহ
ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, সুজামনি কালীঘাটের মন্দিরে ফুল বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবারও তিনি ফুল বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন মলিনা এবং তাঁর ভাই অজয়। তাঁরা ট্যাক্সিতে করে সুজামনিকে নিয়ে আসেন মলিনার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার আড়ুপোতার বাড়িতে। সেখানেই সুজামনিকে দুপুরের খাওয়ার পর খুন করে অজয় এবং মলিনা। তারপর লাউ শাক এবং আরও কিছু সব্জি কেনে তারা। বস্তার মধ্যে সুজামনির দেহ ভরে তার উপর সব্জি এবং শাক চাপা দিয়ে চৌবাদার কাছে খালের লকগেটে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল অভিযুক্তরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান জমি সংক্রান্ত কোনও বিবাদের জেরে এই খুন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তায় এর আগেও কয়েকটি নাকাতে আটকেছিল ওই ট্যাক্সি। কিন্তু কোনও জায়গাতেই গাড়ির ডিকি খোলা হয়নি বা খুললেও দেহটি চোখে পড়েনি পুলিশের। এমনকি পরমা আইল্যান্ডের নাকাতেও চালক বা যাত্রীদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু না দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। চৌবাগার ওই নাকা পেরিয়ে গেলে সহজেই দেহটি লোপাট করতে পারত ওই তিন জন। কয়েক দিন আগেই কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা ভোরবেলা এবং সন্ধ্যার মুখে শহরের রাস্তায় পুলিশের নজরদারি শিথিল হচ্ছে বলে সতর্ক করেছিলেন বাহিনীকে। সেই শিথিলতা কাটিয়ে নজরদারি বাড়াতেই সুফল মিলল হাতেনাতে। লালবাজারের এক শীর্ষ পুলিশকর্তা স্বীকার করেন, ‘‘এ দিনের ঘটনা প্রমাণ করে দিল, নাকাতে তল্লাশি আরও সতর্ক ভাবে করতে হবে। রুটিন তল্লাশি করে লাভ হবে না।” প্রগতি ময়দান থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরমা আইল্যান্ডের নাকা পেরলেও চৌবাগায় ফের পুলিশ আটকানোয় অভিযুক্তরা স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে এক জন পালানোর চেষ্টা করে।” অভিযুক্তদের জেরা করে হরিদেবপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ ইতিমধ্যেই কবরডাঙার ঘটনাস্থল চিহ্নিত করেছে। বিভাগীয় ডিসি গৌরব লাল জানিয়েছেন, মলিনা, অজয়, ট্যাক্সিচালক ছাড়াও, মলিনার স্বামী বাসু মণ্ডলকে পাকড়াও করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy