Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Santosh Mitra Square Durga Puja

সজলের পুজো ঘিরে সংঘাতের আবহ! পুলিশি শর্ত নিয়েই যত অসন্তোষ সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের

সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার পুজো কমিটিকে এ বছর পুজো আয়োজনের আগে বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। থানার সেই চিঠিকে বেআইনি বলে কটাক্ষ করেছেন ওই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা সজল ঘোষ।

(বাঁ দিকে) সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজোর এ বারের থিম।— নিজস্ব চিত্র। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজোর এ বারের থিম।— নিজস্ব চিত্র। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:১১
Share: Save:

সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের দুর্গাপুজোর আয়োজন মানে আলাদা আকর্ষণ। পুজো আসার অনেক আগে থেকেই মানুষ খোঁজ রাখেন এ বার কোন থিমে হবে মণ্ডপ। ভিড় নিয়ন্ত্রণে নিতে গত কয়েক বছর বিতর্কও তৈরি হয়েছে নেবুতলা পার্ক নামেও পরিচিত ওই পুজোকে ঘিরে। তবে এ বার পুজোর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেল নতুন এক বিতর্ক। পুজো কমিটিকে ক’দিন আগেই একটি নোটিস ধরিয়েছে পুলিশ।‌ এ বছরের আয়োজনে কিছু শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর সেই সব শর্তকে হুমকি হিসাবেই দেখছেন ওই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা তথা বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ যে সব শর্ত দিয়েছে সেগুলো তো হুমকির মতো। আমরা যে কোনও আলোচনায় যেতে রাজি, কিন্তু হুমকি দিলে তা মানব না। আর পুলিশ তো এমন অনেক শর্ত দিয়েছে যা মানা সম্ভবই নয়।’’ সজলের এই মন্তব্যের পরে একটা বিষয় স্পষ্ট যে বিজেপি নেতার পুজো নিয়ে বিতর্ক অনেক দূর গড়াবে।

শিয়ালদহের কাছে এই পুজো দেখতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় করেন। সেই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পুলিশকেও। গত পুজোতেই এখানে তখনও অযোধ্যায় উদ্বোধন না হওয়া রামমন্দিরের আদলে মণ্ডপ দেখতে বিপুল ভিড় হয়েছিল। উদ্বোধনে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পুজোর সব দিনেই ভিড় সামাল দিতে নাকানিচোবানি খেতে হয় পুলিশকে। এ বারেও ওই পুজোর থিমে চমক রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ বারে থিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরে লাস ভেগাস শহরের বিখ্যাত আলোর গোলক বা স্ফিয়ার। তাতে নানা রকম আলোর খেলা দেখা যাবে বলে আগাম একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে পুজো কমিটি। দর্শনার্থী সামলাতে যাতে অসুবিধা না হয়, আগেভাগেই তা নিশ্চিত করতে পুলিশ একটি নোটিস পাঠিয়েছেন স্থানীয় মুচিপাড়া থানার আইসি চিত্রদীপ পাণ্ডে। আর সেই চিঠি নিয়েই যত বিতর্ক। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সজলের দাবি, ‘‘কলকাতায় অনেক বড় বড় পুজো হয়। কোনও কমিটিকেই এমন শর্ত বেঁধে চিঠি দেয়নি পুলিশ। আমাকেই কেন, সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে।’’

কী কী শর্ত দিয়েছে পুলিশ? পুলিশের পক্ষে শুরুতেই বলা হয়েছে, কলকাতার অন্যতম বড় পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার। সেখানকার ভিড়ের কথা মাথায় রেখে জনগণের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আয়োজনের ত্রুটিতে কোনও রকম প্রাণহানি কাম্য নয়। এর পরে পুলিশ নোটিসে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের পুজোয় স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা বৃদ্ধি, সিসিটিভির সংখ্যা বৃদ্ধি, দর্শনার্থীদের প্রস্থানের জায়গা বড় করার মতো একাধিক শর্ত দেওয়া হয়েছে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, মণ্ডপের সামনের দিকে মাঝামাঝি অংশে পুলিশের জন্য একটি বিশেষ মঞ্চ করতে হবে, যাতে সেখান থেকে নজরদারি চালানো যায়। ভিড়ের সময় কমিটির তরফে কম করে ২৫০ জন ও ভিড় না থাকলে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। ৩৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথাও বলে হয়েছে। গত বছর ১৪টি সিসিটিভি ছিল। এই মণ্ডপ দর্শনের পরে একটি সরু গলি দিয়ে দর্শনার্থীদের বার হতে হয়। তাতেও খানিক আপত্তি পুলিশের। একই সঙ্গে বলা হয়েছে মণ্ডপের বাইরের অংশে কোনও স্টল দেওয়া যাবে না, পাশের মাঠে যে মেলা বসে সেখানে নাগরদোলা জাতীয় কিছু বসানো যাবে না। এ নিয়ে সজল বলেন, ‘‘এটা কোনও কথা হল নাকি! স্টল বসবে না, নাগরদোলা বসবে না এটা মানা যায় না। আর পুলিশ কি এটাও ঠিক করে দেবে যে কোনখানে ৩৬টা সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে!’’

এখানেই না থেমে পুলিশের এই চিঠিকে বেআইনি বলে কটাক্ষ করেছেন সজল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই চিঠি আসলে হুমকি চিঠি, আমরা তার কাছে নতিস্বীকার করব না। আমরা আলোচনা করতে পারি। কিন্তু হুমকি দিয়ে কিছু চাপিয়ে দেবে, তা মানব না। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা রাজি। সম্পূর্ণ সহযোগিতাও করব। কিন্তু হুমকি দিলে মানব না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মণ্ডপে কত জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন, কোথায় কী স্টল বসবে, তা পুলিশ ঠিক করে দেবে? স্টল তো দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুরসভার জায়গায়। পুলিশ কখনও সর্বেসর্বা হতে পারে না। আমাকে যে নোটিস দেওয়া হয়েছে, তা বেআইনি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE