Advertisement
E-Paper

বলপ্রয়োগের ধারা যুক্ত ট্যাংরা মামলায়

গৃহবধূকে অ্যাম্বুল্যান্সে টেনে তোলার চেষ্টা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে এ দিনও সংশয় প্রকাশ করেছেন লালবাজারের কর্তারা।

ট্যাংরা কাণ্ডে পরীক্ষায় ব্যস্ত ফরেন্সিক কর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

ট্যাংরা কাণ্ডে পরীক্ষায় ব্যস্ত ফরেন্সিক কর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১১
Share
Save

ট্যাংরায় গৃহবধূকে অ্যাম্বুল্যান্সে টেনে তুলে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ এবং তাঁকে বাঁচাতে যাওয়া শ্বশুরকে সেই অ্যাম্বুল্যান্সেরই পিষে মারার অভিযোগের মামলায় বৃহস্পতিবার নতুন ধারা যোগ করল পুলিশ। এ ছাড়া, এই অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে ডিডি হোমিসাইডকে।

মঙ্গলবার মধ্যরাতের এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে ৩০৮ ধারা (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা) এবং ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো) মামলা করেছিল পুলিশ। আর এ দিন শিয়ালদহ আদালতে এর সঙ্গেই তারা যুক্ত করেছে ৩৫৭ ধারা (অপরাধজনক বলপ্রয়োগ), ৩৪১ ধারা (অন্যায় ভাবে বাধাপ্রদান) এবং ৩৪ (একই উদ্দেশ্যে অপরাধ ঘটানোর চেষ্টা) ধারা।

তবে গৃহবধূকে অ্যাম্বুল্যান্সে টেনে তোলার চেষ্টা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে এ দিনও সংশয় প্রকাশ করেছেন লালবাজারের কর্তারা। প্রায় ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করে পুলিশের ব্যাখ্যা, ওই ভিডিয়োয় অভিযোগকারিণী এবং তাঁর আত্মীয়দের যে সময়ে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে, তার চার সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক অ্যাম্বুল্যান্সটিকে উল্টো দিক থেকে আসতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘চার সেকেন্ডে এত কিছু ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব?’’

আরও পড়ুন: ‘শিনজিয়াং শহরটা যেন ঘরেই বন্দি, ফিরে এলাম’

লালবাজারের এক কর্তা এ দিন সন্ধ্যায় এ-ও দাবি করেন, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাস্তা পার হতে গিয়েই ওই বৃদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে পড়ে গিয়েছিলেন। তার জেরেই ‘দুর্ঘটনা’! যদিও ফরেন্সিক সূত্রের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে পাওয়া রক্তের ছিটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে বোঝা যাবে, বৃদ্ধের শরীরের কোন দিকে গাড়িটির ধাক্কা লেগেছিল। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে পড়ে যাওয়াতেই যদি বৃদ্ধের মৃত্যু হয়ে থাকে বা চার সেকেন্ডে ‘এত কিছু’ ঘটে যাওয়া নিয়ে পুলিশের সন্দেহ থাকে, তা হলে অপরাধজনক বলপ্রয়োগ বা অন্যায় ভাবে বাধাপ্রদানের ধারা যুক্ত করা হল কেন?

ধৃত: ট্যাংরার ঘটনায় শিয়ালদহ আদালতে দুই অভিযুক্ত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা পুলিশের বিশেষ কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে যা উঠে এসেছিল, তার ভিত্তিতে ধারা প্রয়োগ করা হয়। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী ধারা যোগ করার পথ খোলা রাখা হয়েছিল। অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে ধারা যুক্ত হল।’’

অভিযোগকারিণী গৃহবধূ এ দিনও কিন্তু স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘মিথ্যে বলব কেন? আমার সাত বছরের ছেলে এবং পাঁচ বছরের মেয়ে রয়েছে। তারা স্কুলে পড়ে। আমায় রাস্তায় বেরোতে হয়। এমন অভিযোগ করলে এবং আমার পরিচয় প্রকাশ হলে সমাজে কী পরিস্থিতির মুখে পড়ব, আমি জানি। তবু চুপ করে থাকিনি। আমাদের অভিযোগ নিয়ে পুলিশ আরও সংবেদনশীল হোক।’’ তাঁর শাশুড়ি এ দিন আদালতের বাইরে বলেন, ‘‘বৌমার চিৎকার শুনে ছুটে যাই আমরা। অথচ সবটাকেই মিথ্যে প্রমাণ করতে চাওয়া হচ্ছে।’’ আদালতে সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মৃতের বৌমার অভিযোগ গুরুতর। যা তদন্তসাপেক্ষ।’’ অভিযোগকারিণীর আইনজীবী লাল্টু দে দাবি করেন, ‘‘ধৃত চালক ও তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশ শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করুক।’’

ধৃতের আইনজীবী ইয়াকুব খানের পাল্টা দাবি, ‘‘এক রোগীর বাড়ির ডাক পেয়ে চালক অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ছুটছিল। সেই সময় পথচারী রাস্তার মাঝখানে অসচেতন ভাবে আসায় ধাক্কা লাগে। এ ক্ষেত্রে পথচারীর সতর্ক থাকা প্রয়োজন। আমার মক্কেলদের জামিন চাই।’’ অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ রায় বলেন, ‘‘কারা অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলেন, তাঁদের আদালতে হাজির করানো হোক।’’ ধৃতদের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলি‌শি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

এ দিন নতুন ধারা সংযোজনের আগে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোড দু’ঘণ্টার জন্য অবরোধ করেন মৃতের আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। সেখানেই মৃতের ছেলে দাবি করেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা মিথ্যে দাবি করছে। পুলিশ ওদের কথা কেন শুনছে? অপহরণের চেষ্টার ধারা না দেওয়ার উদ্দেশ্য কী?’’

এই দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যেই এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। অ্যাম্বুল্যান্স থেকেও নমুনা সংগ্রহ করে তাঁরা গোবিন্দ খটিক রোডের ৬৩ মিটার (২০৬ ফুট) জায়গা চিহ্নিত করেছেন। মঙ্গলবার রাতে যা কিছু ঘটেছিল, তা ওই ৬৩ মিটারের মধ্যেই বলে মন্তব্য করেন উপস্থিত এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, ‘‘হাত ধরে টানা বা গাড়ির ধাক্কা দেওয়ার কোনও প্রত্যক্ষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এখনও পর্যন্ত হাতে পাইনি। ফলে গাড়িটির গতি এবং তার তুলনামূলক বিচারের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, যে ফুটেজটি তাঁদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫৩ মিনিট নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সটি বেরিয়ে যাচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্সটি আসছিল তপসিয়ার দিক থেকে। তপসিয়ার দিকের সিসি ক্যামেরায় অ্যাম্বুল্যান্সটির ছবি ঠিক ক’টায় ধরা পড়েছিল, তা দেখা হচ্ছে। এর পর ওই সময় এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ইঞ্জিনের গতি তোলার ক্ষমতা পরখ করে বোঝার চেষ্টা হবে, গাড়িটি ওই ৬৩ মিটারের মধ্যে বা তার আশেপাশে কোথাও দাঁড়িয়েছিল কি না বা দাঁড়ালে সেখানে কী ঘটেছিল।

Crime Tangra Kolkata Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}