নতুন ঠিকানাতেও মনমরা পোকো। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
অবশেষে নতুন ঘরে ঠাঁই মিলেছে। কিন্তু মেজাজটা এখনও খিটখিটে। খাওয়ার ইচ্ছে নেই, কাউকে দেখলেই রাগ প্রকাশ করে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা!
এক দিন কেটে গেলেও এখনও এমনই আচরণ করছে দু’বছরের পোকো। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘নিজের মালিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু চোখের সামনে দেখে, তা মেনে নিতে পারেনি পোকো।’’ শেষ দু’দিন ধরে স্প্যানিয়েল প্রজাতির ওই কুকুরের চিৎকারেই সন্দেহ বেড়েছিল প্রতিবেশীদের। তাঁরাই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। আর তাতেই গত সোমবার বালির আনন্দনগরে একটি বাড়ির তালা ভেঙে উদ্ধার হয় মালিক তথা যুবক অর্পণ দাসের ঝুলন্ত পচাগলা দেহ। সেই বাড়িতেই প্রায় ছ’দিন বন্দি হয়ে ছিল ওই পোষ্য।
তালা খোলার পরে যাতে ওই পোষ্যকে সামলানো যায় তার জন্য সে দিন আগে থেকেই ডগ হ্যান্ডলারের ব্যবস্থা রেখেছিল পুলিশ। কোল্যাপসিবল গেটের তালা ভেঙে তা খোলামাত্রই এক লাফে বাইরে এসে চিৎকার জুড়ে দিয়েছিল কুকুরটি। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টার পরে তার গলায় চেন পরিয়ে বাইরে আনতে পেরেছিলেন স্থানীয় ডগ হ্যান্ডলার সনৎ হাজরা। তবে কুকুরটিকে তিনি রাখতে পারবেন না বলেও পুলিশকে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন। অর্পণের দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর কুকুরটিকে বাড়ির গ্রিলের দরজার সঙ্গেই বেঁধে রাখা হয়েছিল। কুকুরটি কাকে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবছিল পুলিশও। নিশ্চিন্দা থানার তরফে স্থানীয় ভাবে অনেককেই অনুরোধ করা হয় পোষ্যটির দায়িত্ব নিতে। কিন্তু অর্পণের পরিজনেরাও রাজি হননি। শেষে কুকুরটির ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন স্থানীয় কয়েক জন যুবক। তা দেখে সোমবার রাতে পুলিশের অনুমতি নিয়ে আনন্দনগর থেকে ওই কুকুরটিকে নিজের ঘোষপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন দীপায়ন ভট্টাচার্য।
অর্পণ কী নামে পোষ্যকে ডাকতেন, তা কেউই জানতেন না। অগত্যা দু’বছরের স্প্যানিয়েলটিকে বাড়িতে এনে দীপায়নই নাম দেন, ‘পোকো’। ওই যুবকের মা তপতীদেবী বলেন, ‘‘আমরা সকলেই কুকুরপ্রেমী। আর একটা অবোলা জীব এ ভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, সেটাও ঠিক নয়। তাই ছেলে নিয়ে আসায় খুশিই হয়েছি।’’ দীপায়নের ঘরের সামনের বারান্দাতেই চেন দিয়ে বাঁধা রয়েছে পোকো। বাড়ির কারও সঙ্গেই তেমন ভাব জমেনি এখনও। কেউ সামনে গেলেই চেঁচিয়ে উঠে, কামড়াতে আসছে সে।
দীপায়ন বলেন, ‘‘পোকো খুবই দুর্বল এখন। কয়েক দিন না কাটলে স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। এক বার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।’’
ওই কুকুরটি মারাত্মক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন পশু চিকিৎসক তথা রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের উপ অধিকর্তা মিন্টু চৌধুরী। তিনি জানান, স্বাভাবিক ভাবেই নিজের মালিককে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে পোষ্যটি। বার বার চিৎকার করেও কাউকে পায়নি। প্রতি মুহূর্তে চোখের সামনে মালিকের নিথর দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে কুকুরটির মনের মধ্যেও ভয় তৈরি হয়েছে। খেতে না পেয়ে, বেরোতে না পেরে সারা ক্ষণ অন্ধকার বাড়িতে কটু গন্ধের মধ্যে থাকতে থাকতে সে-ও নিজের শেষ পরিণতি কল্পনা করেছে মালিকের মতোই। তাতেই আরও আতঙ্কিত হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। মিন্টুবাবু বলেন, ‘‘৬-৭ দিন মানুষের মাঝে থাকলে, আদর পেলে কুকুরটি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।’’
সেই চেষ্টাই করছেন তপতীদেবীরা। সোমবার রাতে বাড়িতে আসা নতুন অতিথিকে খেতে দিয়েছেন দুধ-ভাত। কিন্তু অল্প মুখে তুলে তা সরিয়ে দিয়েছে পোকো। রাতে শুয়েছে চাদরের বিছানায়। মঙ্গলবার সকালেও মেজাজ খিটখিটে। দুপুরে অল্প মাছ-ভাত মুখে তুলে মুখ গুঁজে শুয়েই দিন কেটেছে পোকোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy