অনুমতি ছাড়া রাতে রাস্তায় রাখা গাড়িতে এই পোস্টার লাগাবে পুরসভা। নিজস্ব চিত্র।
রাতের শহরে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। সূত্রের খবর, অনেকেই অনুমোদন ছাড়া রাতে বাড়ির সামনে বা রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি রাখেন। এই প্রবণতা বেড়ে চলায় মোটা টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে পুরসভা। এই বেআইনি কাজ রুখতে পুরসভা ওই সমস্ত গাড়ি চিহ্নিত করে নোটিস দিয়ে সতর্ক করবে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তার পরেও মালিক পুরসভা থেকে অনুমোদন না নিয়ে গাড়ি রাখলে চাকায় লোহার বেড়ি পরানো থেকে শুরু করে জরিমানা আদায় করা হবে। পুরসভার সতর্কীকরণের পরে গাড়ির মালিকেরা অনলাইনে ‘নাইট পার্কিং’-এর আবেদন করতে পারবেন। এই আবেদনের জন্য পুর ওয়েবসাইটে যাবতীয় সাহায্য মিলবে। যদিও সম্প্রতি বর্ধিত হারে পার্কিং ফি আদায় শুরু হয়েও তা প্রত্যাহার করায় শেষমেশ ‘নাইট পার্কিং’ ফি-ও আদায় করা যাবে কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন।
পুরসভা সূত্রের খবর, অতিমারির সময়ে গাড়ি পার্কিং বিভাগ থেকে আয় যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। ২০২০ থেকে ২০২২— এই তিন বছরে ওই আয় কমার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সূত্রের খবর, তাই রাতে অবৈধ পার্কিং চিহ্নিত করার পাশাপাশি বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে পুরসভা। এ বিষয়ে পুরসভা কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাবে। বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য গাড়িপিছু পুরসভা ১০০০ টাকা করে আদায় করতে পারে।পুরসভার পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, বাড়ির সামনের রাস্তায় গাড়ি রাখার অনুমোদন পেতে গেলে মাসে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। এর জন্য পুরসভা গাড়ির মালিককে একটি ‘স্টিকার’ সরবরাহ করে। পুরসভায় না গিয়ে এ বার অনলাইনেই এই স্টিকারের আবেদন করা যাবে।
পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, রাতের শহরে পার্কিংয়ের জন্য কেউই অনুমোদনের পরোয়া করেন না। ফলে এই বাবদ মাসে লক্ষাধিক টাকার কর হারাচ্ছে পুরসভা। পুরসভার মাসিক অধিবেশনে অতীতে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন ১২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রূপক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘আমার ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তায় গ্যারাজহীন গাড়ির মালিকেরা রাতে গাড়ি রেখে দিচ্ছেন। এই সমস্ত পার্কিংয়ের অনুমতি কি পুরসভার থেকে নেওয়া হয়?’’ জবাবে মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার জানিয়েছিলেন, পুরসভার অনুমতি ছাড়া রাস্তায় গাড়ি রাখা বেআইনি।
পুরসভা এই উদ্যোগের কথা জানালেও কার্যক্ষেত্রে তার কতটা প্রয়োগ দেখা যাবে, উঠেছে সেই প্রশ্ন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পার্কিং ফি আদায়ে দুর্নীতি রুখতে ই-পস যন্ত্রের ব্যবহারে কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল ১ এপ্রিল থেকে। বর্ধিত হারে ফি আদায়ের ওই পদ্ধতি সপ্তাহখানেকের মধ্যেই অবশ্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকার মানুষের উপরে বর্ধিত হারের বোঝা চাপাতে চায় না, এই যুক্তি দেখিয়ে ফিরে এসেছে নগদে ফি আদায়ের পুরনো পদ্ধতি। আর তার সঙ্গেই ফিরেছে পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগও।
তবে পুরসভার কার পার্কিং বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের অনেক রাস্তায় রাতে অনুমতি ছাড়া বাসও রাখা হয় বলে অভিযোগ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দফতরে লোকবল কম থাকায় রাতের শহরে বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত পদক্ষেপ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু এ বার থেকে পুরসভার তরফে ওয়ার্ডভিত্তিক দল তৈরি করে অভিযানে নামা হবে। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy