ফাইল চিত্র।
শহরের হকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সম্প্রতি কলকাতা পুরভবনে হওয়া বৈঠকেও মিলল না দিশা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভা, পুলিশ এবং হকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। দিশা তো দূর, বরং বৈঠকে উপস্থিত হকারদের একটি সংগঠনের তরফে এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ভূমিকা নিয়েই উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে।
২০১৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হকারদের বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময়ে প্রায় ৬১ হাজার হকারের আবেদনপত্র জমা পড়েছিল পুরভবনে। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ৬১ হাজার হকারের তালিকা নিজেদের ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও ‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র সভাপতি শক্তিমান ঘোষের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, এখনও শহরে হকার চিহ্নিতকরণের সমীক্ষাই হয়নি। বছর ১৫ আগেই শহরে হকারের সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছিল। এখন সংখ্যাটা কত হবে, তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের দাবি, ডিজিটাল সমীক্ষা করতে হবে। সেই সমীক্ষায় পুরসভা, পুলিশ ছাড়াও হকারের প্রতিনিধিকে রাখতে হবে।’’
শহরে হকার-নীতি প্রণয়নে ২০১৮ সালে কলকাতা পুরসভা, পুলিশ এবং হকারদের প্রতিনিধি নিয়ে ‘টাউন ভেন্ডিং কমিটি’ তৈরি হয়েছিল। এলাকাভিত্তিক সমীক্ষা, হকারদের শংসাপত্র প্রদান, চিহ্নিতকরণ, পরিচয়পত্র প্রদান-সহ একাধিক কাজ করার কথা এই কমিটিরই। ‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র তরফে দেবাশিস দাসের কথায়, ‘‘টাউন ভেন্ডিং কমিটির পরিচালনায় পুরসভা দিশা দেখাতে পারেনি। যার জন্য এই কমিটি গঠনের পরেই হাই কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করে। ফলে নীতি প্রণয়নের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ হকারদের সমীক্ষার কাজটাই এখনও হয়নি!’’
‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক মুরাদ হোসেনের অভিযোগ, ‘‘এখনও হকার-নীতি প্রণয়ন না করায় সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্ট পুরসভাকে ভর্ৎসনা করে শীঘ্রই হলফনামা দিতে বলে। তার প্রস্তুতিতেই পুরসভা শুক্রবার তড়িঘড়ি এই বৈঠক ডেকেছিল। কিন্তু সেখানে হকারদের স্বার্থের কোনও আলোচনাই গুরুত্ব পায়নি। এমনকি শহরে বেআইনি হকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও দিশা মেলেনি।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমারের অবশ্য দাবি, ‘‘হকার নীতির প্রণয়নের জন্য সব পক্ষের মতামত ওই বৈঠকে
নেওয়া হয়েছে। পুরসভা শীঘ্রই ওয়েবসাইটে হকারদের নাম নথিভুক্ত করবে। কারও আপত্তি থাকলে অভিযোগ শোনা হবে। টাউন ভেন্ডিং কমিটির তরফে হকারদের সুরক্ষার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণেও জোর দেওয়া হবে।’’
২০১৪ সালে ‘পথ বিক্রেতা (জীবিকা সুরক্ষা ও পথ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ)’ আইনে প্রণীত হয়। কিন্তু এ রাজ্য তথা কলকাতায় আজও সেই আইন কেন প্রণয়ন করা হল না? শহরের হকার-নীতি বাস্তবায়িত না হওয়ার পিছনে পুলিশের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে পুরভোটের আগে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রার্থী, বর্তমানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদের উত্তর ছিল, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দল হকার বসায় না। হকার বসায় এক শ্রেণির পুলিশ, নিজেদের রোজগারের জন্য!’’
যে মন্তব্যকে সমর্থন করছেন ‘হকার সংগ্রাম কমিটি’র প্রতিনিধিরা। গত শুক্রবারের টাউন ভেন্ডিং কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ওই কমিটির এক প্রতিনিধি দেবাশিস দাসের অভিযোগ, ‘‘কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন রাস্তা এবং ফুটপাতে বেআইনি হকার বসেছে। এ নিয়ে আমরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। থানা ঘেরাও করেছি। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। হকারদের উৎসাহ দেওয়ার পিছনে পুলিশের ভূমিকায় তাই প্রশ্ন থাকছেই।’’ লালবাজারের এক কর্তার যদিও দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy