ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। —ফাইল চিত্র।
শহর কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তকে আগামী দিনে জুড়বে একাধিক মেট্রোপথ। কিন্তু একের পর এক মেট্রোপথের সম্প্রসারণ হলেও নেই-রাজ্যের দশা পিছু ছাড়ছে না কলকাতা মেট্রোর। বরং, দিনে দিনে তা বেশি মাত্রায় প্রকট হচ্ছে। নতুন রুটে মেট্রো সম্প্রসারিত হতে শুরু করলে সেখানে কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। এ দিকে, পুরনো কর্মীরা অবসর নেওয়ার পরে আর নিয়োগ হচ্ছে না।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, নতুন মেট্রোপথের একাধিক স্টেশন চলছে দু’-তিন জন কর্মীর ভরসায়। এরই সঙ্গে জোকা-মাঝেরহাট এবং নিউ গড়িয়া-রুবি মেট্রোপথ মিলিয়ে গোটা পাঁচেক স্টেশনে বুকিং কাউন্টার সম্পূর্ণ তুলে দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে সার্বিক ভাবে কর্মী মহলের আশঙ্কা, এক দিকে পরিষেবা সম্প্রসারণের তাগিদ এবং এর বিপরীতে কর্মীর অভাব, মেট্রোয় বেসরকারিকরণের ছায়াকেই দীর্ঘতর করছে।
আগামী বছরের মার্চ নাগাদ জুড়ে যেতে পারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত পথ। মাঝের ওই ২.২ কিলোমিটার পথ জুড়ে গেলেই হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পুরো পথে ট্রেন ছুটবে। ওই কাজ সম্পূর্ণ হলে যাত্রী পরিষেবার দায়িত্ব চলে যেতে পারে বেসরকারি হাতে। দিল্লি মেট্রোরেল কর্পোরেশনের কাছ থেকে এ নিয়ে চিঠি পাওয়ার পরে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তুতি প্রায় সেরে ফেলেছেন বলে সূত্রের খবর। আগামী ৪ এবং ৫ ডিসেম্বর কলকাতা মেট্রোর স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচন।
সেখানে মেট্রোর বেসরকারিকরণ সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে, যাত্রী সংখ্যার নিরিখে ভবিষ্যতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কলকাতার ব্যস্ততম মেট্রো হয়ে উঠতে চলেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মীদের প্রশ্ন, যে মেট্রো থেকে আয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই প্রকল্পের পরিচালনার ভার কেন অন্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে?
প্রসঙ্গত, দিল্লি মেট্রোরেল কর্পোরেশন দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পে অর্থের বিনিময়ে নানা পরিষেবা বিক্রি করে। প্রশ্ন উঠেছে, পরে শুরু করেও দিল্লি মেট্রো যেখানে বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্পে নানা পরিষেবা বিক্রি করে টাকা আয় করছে, সেখানে কলকাতা মেট্রো নিজস্ব পরিষেবা দিতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে কেন?
গত অক্টোবরে মেট্রোর স্বীকৃত কর্মী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিষেবা বেসরকারি হাতে দেওয়ার বার্তা দিয়ে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। যার অঙ্গ হিসাবে মেট্রোয় চালকের পরিবর্তে ট্রেন অপারেটর কাম স্টেশন কন্ট্রোলার নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের এই তৎপরতার পরেই বেসরকারিকরণ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে কর্মীমহলে।
‘মেট্রো রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুজিত ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘রেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের সর্বভারতীয় সংগঠন বেসরকারিকরণের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। মেট্রোকর্তাদের একাংশ এর পরেও ওই বিষয়ে অনড়। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরোধিতায় যাব।’’
কলকাতা মেট্রোর ‘প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কলকাতা মেট্রো ভারতীয় রেলের ১৭তম জ়োনের মর্যাদা পেয়েছিল রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। সেই স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন কর্তৃপক্ষ। মেট্রোয় চালক নিয়োগ বন্ধ রেখে ট্রেন অপারেটর নেওয়া, পরিষেবার বেসরকারিকরণের সর্বাত্মক বিরোধিতা হবে।’’
বেসরকারিকরণ রোখার দাবিতে অনড় অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে ‘মেট্রো রেলওয়ে ওয়ার্কার্স কংগ্রেস’ও। উল্লেখ্য, সারা ভারতে রেলের অধীনে থাকা একমাত্র মেট্রো হল কলকাতা। তার বেসরকারিকরণ হলে রেলের সঙ্গে যোগাযোগ ঘুচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্মীদের একটা বড় অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy