উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে ক্যামেরা-প্রযুক্তি নতুন মর্যাদা দিয়েছিল পুরাতত্ত্বকে। আর এই দুই ক্ষেত্রেই সুদক্ষ ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র (ছবি), প্রমাণ তাঁর কাজ অ্যান্টিকুইটিজ় অব ওড়িশা। ১৮৫৬-র ২ জানুয়ারি স্থাপিত ফোটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বেঙ্গল-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি, কফিহাউসের বই-চিত্র গ্যালারি ও সভাঘরে প্রতি বছর দিনটি পালিত হয় ‘বেঙ্গল ফোটোগ্রাফি ডে’ হিসাবে। রাজেন্দ্রলালের জন্মদ্বিশতবর্ষ উদ্যাপন উৎসবের সমাপ্তিতে, ২ জানুয়ারি বইচিত্র গ্যালারি ও সভাঘরে শুরু হচ্ছে প্রদর্শনী— অ্যান্টিকুইটিজ় অব ওড়িশা গ্রন্থের ১৮৬৭-৬৮’র আটটি ডিজিটাইজ়ড আলোকচিত্রের পাশে ২০১৪ সালে ঠিক ওই একই অবস্থান-কোণ থেকে দেবাশিস দত্তের তোলা মন্দির-আলোকচিত্র, এ ছাড়াও মন্দির-শহর ভুবনেশ্বরের আরও চব্বিশটি ছবি নিয়ে। বলবেন সুশোভন অধিকারী, দেবীপ্রসাদ রায় ও পর্ণব মুখোপাধ্যায়। প্রদর্শনী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, ৩টে-৮টা।
পকেটবই
মোবাইলে বই পড়া নয়, মোবাইলের সাইজ়ের বই পড়া। সহজে বহনযোগ্য এ বই, টুক করে পুরে নেওয়া যায় পকেটেও। বাসে-মেট্রোয় অল্প সময়ে পড়েও ফেলা যাবে। ভাষা পাবলিশিং হাউস-এর এই গ্রন্থমালার নামই তাই ‘চটজলদি পকেটবুক সিরিজ়’। বড় ফন্ট, বর্ণবিন্যাস চোখের জন্য স্বস্তিপ্রদ। গ্রন্থমালার এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি বই-ই মনে ধরার মতো— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ল্যাবরেটরি, জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর স্মৃতিকথা, আর পাঁচকড়ি দে’র রহস্যকাহিনি হত্যাকারী কে?। হাতে নিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয় যাতে, দামও থাকে পাঠকের আয়ত্তের মধ্যেই, সে ভাবনা থেকেই এই গ্রন্থমালা। ডিজিটাল পর্দায় পড়ার মাঝে বিস্তর নোটিফিকেশনের বাধা, এখানে শান্তি।
তাঁর স্মরণে
দীর্ঘ কর্মজীবনে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক, বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন সব্যসাচী ভট্টাচার্য, ভারতীয় ইতিহাস গবেষণা পরিষদের সভাপতিও। গবেষণাই ছিল তাঁর জীবনের মূল চালিকাশক্তি, সামাজিক অর্থনৈতিক ইতিহাস থেকে বৌদ্ধিক ইতিহাসেও স্বচ্ছন্দ বিচরণ সেই সূত্রেই। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে মারণ রোগে প্রয়াণ, তখনও তিনি ব্যস্ত ছিলেন আ কম্প্রিহেনসিভ হিস্ট্রি অব মডার্ন বেঙ্গল সম্পাদনায়। তাঁর ছাত্র ও গুণগ্রাহীরা তাঁর স্মরণে আয়োজন করেন বিশেষ বক্তৃতা। আগামী ৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টেয় চতুর্থ বছরের ‘সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্মারক বক্তৃতা’ পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের আয়োজনে, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সহযোগিতায়, সোসাইটির বিদ্যাসাগর হল-এ। অধ্যাপক রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলবেন ‘দেওয়ানি প্রদান এবং আধিপত্যের প্রভাব’ নিয়ে। জেএনইউ-এও গত ১৪ ডিসেম্বর হয়ে গেল তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতা, বক্তা ছিলেন অধ্যাপক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সৃষ্টির পথ
পঞ্চাশ-ষাটের দশকের প্রেসিডেন্সি কলেজ, কফিহাউসের কলকাতায় গড়ে উঠেছিল এক চিন্তক বিবেচক ও রসিক সমাজ— রাজনীতি-সচেতন, শিল্পের সমঝদার। মুখ্যত সেই সমষ্টি থেকেই অভিনেতা নির্বাচন করেছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর পথের পাঁচালী ছবির জন্য— কানু বন্দ্যোপাধ্যায় করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় রেবা দেবী, আরও কত জন। বসুশ্রী হল-এ সেই ছবি দেখার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হল থেকে দক্ষিণ কলকাতার ছোট্ট ক্লাবে শিল্পী সংবর্ধনার স্মৃতিচারণ করলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, গত ২৭ ডিসেম্বর গোর্কি সদনে। তপন সিংহ ফাউন্ডেশন, সিনে সেন্ট্রাল, নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি, এখন সত্যজিৎ পত্রিকা ও আইজ়েনস্টাইন সিনে ক্লাব মিলে সেখানে আয়োজন করেছিল সত্যজিৎ-সৃষ্টি ঘিরে প্রদর্শনীরও। আর ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ছিল সত্যজিতের সৃষ্টির শিল্প নিয়ে বিশিষ্টজনের কথালাপ ও আড্ডা।
নাট্যস্বপ্নকল্প
“স্কুল লাইফ থেকে রাত জেগে নাটক দেখতাম, পরে পারফর্মও করেছি, এ বার পরিচালনার দায়িত্বে, দারুণ লাগছে।” তূর্ণা দাশ জানাচ্ছিলেন বর্ষশেষের দিনে ‘নাট্যস্বপ্নকল্প’ সম্পর্কে, নিরীক্ষামূলক প্রযোজনা, বক্তৃতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জমজমাট। ‘অন্য থিয়েটার’ আয়োজিত নাট্যস্বপ্নকল্প এ বার ৩১ ডিসেম্বর দুপুর ৩টে থেকে তপন থিয়েটারে। ব্রেশট-এর চারটি নাটক, নির্দেশনায় তূর্ণা-সহ বিমল চক্রবর্তী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়; ফ্যাসিবাদের দুঃসময়কে এ দেশের অস্থির সময়ের সঙ্গে মেলাবে। রয়েছে বহুকণ্ঠী শিল্পী পলাশ অধিকারীর পরিবেশনা। সম্মানিত হবেন বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবাশিস। আয়োজক নাট্যদলের নাট্যপত্র অন্য-the other উন্মোচনে অশোক মুখোপাধ্যায়।
ঐতিহ্যের সাক্ষী
এ শহরে ‘হেরিটেজ ওয়াক’-এর একটি ধারা গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে, তবে এখনও পর্যন্ত তা সীমাবদ্ধ ইতিহাসপ্রেমী নানা গোষ্ঠী কিংবা বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগেই। কলকাতার গুরুদাস কলেজ কর্তৃপক্ষের আয়োজনে গত ১৭ ডিসেম্বর হয়ে গেল ‘বেলেঘাটা হেরিটেজ ওয়াক’, বেলেঘাটাকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের ব্যতিক্রমী এষণা। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের ভাবনা থেকে পঁয়ষট্টি বছর আগে গুরুদাস কলেজের প্রতিষ্ঠা, সেই ইতিহাস মনে রেখে বর্তমান কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ করেছেন বেলেঘাটার ঐতিহ্য রক্ষণের, ‘বেলিয়াঘাটা হেরিটেজ প্রজেক্ট’-এর প্রথম পদক্ষেপই হল এই ‘ওয়াক’। কলেজের ন’টি বিভাগের ২২০ জন ছাত্রছাত্রী, ৩৩ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী মিলে ঘুরে দেখলেন এই অঞ্চলের প্রায় দুশো বছরের পুরনো ইহুদি কবরখানা (নীচে ছবিতে), ফুলবাগান পেরিয়ে নারকেলডাঙা মেন রোডে গ্রিক কবরখানা, রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বাড়ির পাশ দিয়ে বাগ-এ-মোহাম্মদি সমাধিস্থল পেরিয়ে গান্ধী ভবন ও সংগ্রহশালা— স্বাধীনতার পর রাসবাগানের মাঠে গান্ধীজির প্রথম বক্তৃতা বেলেঘাটাতেই। ওয়াক শেষ হয় সুভাষ সরোবরে। শুরুটা হল, এখনও বাকি অনেক পথ হাঁটা।
ব্যতিক্রমী
১৯৩০-এর পর থেকে দীর্ঘ কাল ছবি আঁকা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময়টা তাঁর একেবারে অন্য রকম, উদ্ভট পালাগান লেখার, ‘পাগলামির কারুশিল্প’ গড়ার। অপূর্ব সে সম্ভারও, আর তার মধ্যেও ব্যতিক্রমী সৃষ্টি খুদ্দুর যাত্রা। পাতায় পাতায় মুদ্রিত ছবির টুকরো দিয়ে কোলাজের মতো সজ্জা এই পালাগানের অলঙ্কার (ছবিতে তারই একটি পাতা), তার ভাষায় আর ছবির ব্যবহারে ঠাট্টা বিদ্রুপ ব্যঙ্গের উস্কানি। এই কৌতুকময় সৃষ্টিকে বহু বছর ধরে উপভোগ ও নিরীক্ষণ করেছেন শিল্প-ঐতিহাসিক দেবদত্ত গুপ্ত। যত দেখেছেন, কৌতূহল বেড়েছে ততই, আবিষ্কারও। তাঁর সন্ধানী আলোয় কৃত্তিবাসী রামায়ণ ছাপিয়ে অবলীলায় এক সমকালীন টেক্সট হয়ে উঠেছে খুদ্দুর যাত্রা, সেই সময়ের সমাজ ও শিল্পের আয়না যেন। সেই অনুসন্ধানের কথাই লিখেছেন দেবদত্তবাবু, অবন ঠাকুরের খুদ্দুর যাত্রা (প্রকাশক: খসড়া খাতা) নামের বইতে। গত ১৮ ডিসেম্বর গ্যালারি চারুবাসনাতে শিল্পী যোগেন চৌধুরীর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হল বইটি। সঙ্গে ছিল আলোচনাও।
শূন্য ও পূর্ণ
নতুন বছরের ডেস্ক ক্যালেন্ডার, ২০২৩-এর মাস-তারিখের হিসাব সবই আছে, কেবল উপরে অনেকটা অংশ ফাঁকা। ইচ্ছে করেই। সাদা পাতা হয়ে উঠুক মনের ক্যানভাস, এই ভাবনা থেকেই অভিনব ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে ‘আর্টইম্প্রেশন ডট ইন’। ছোট বড় যে কেউ শূন্য স্থান পূর্ণ করতে পারবেন এঁকে, ইচ্ছেমতো সেঁটে নিতে পারবেন ছবি, কোলাজ, অরিগ্যামিও, লিখতে পারবেন মন যা চায়— কবিতা, স্মৃতিগদ্য, কেজো কথাও। বছরভর থাকবে চোখের সামনে, পরে পাতা উল্টে দেখে নেওয়া যাবে ভাললাগা-মন্দলাগার সালতামামি। মন্দ নয় সে ভাবনা ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy