সঙ্কটের চাপে জীবন যতই নিংড়ে নিক, যেমন আছি তেমন থাকব। বঙ্গজীবনে এমন নাছোড় স্পর্ধার শিক্ষা রসগোল্লারই দান। মারি, মন্বন্তর যাই ঘটুক, বাঙালির যাপনে ‘রসগোল্লা দিবস’টি তাই অনিবার্য। করোনাকালেও তার ব্যত্যয় ঘটছে না। বরং অতিমারি প্রকোপিত জীবনে রসগোল্লাকেই জীবনের প্রতীক ভাবা যেতে পারে। যাবতীয় নিষ্পেষণের প্রতিরোধে সে নিজস্বতা রক্ষা করে চলেছে। মিষ্টি দাঁতের সুড়সুড়ি হয়তো কম-বেশি সব জাতিই অনুভব করে, কিন্তু স্পঞ্জের শুকনো কমনীয়তাকে রসস্থ ও রসোত্তীর্ণ করে তোলার মুনশিয়ানায় বাঙালিরই স্বাক্ষর। বাঙালির রসগোল্লার খাতায়-কলমে মর্যাদা লাভ বা জিআই-তকমাপ্রাপ্তির দিনটি পালিত হল ১৪ নভেম্বর।
ভাইরাস-ভয়ে এ বছর অর্থনীতি কাবু। ধাক্কা লেগেছে উৎসবের মিষ্টিমুখেও। তবু বঙ্গজীবনের আইকন ‘দেড়শো পেরোন খোকা’ রসগোল্লার দিনটির অন্য মাত্রা ছিল এ বারও। এ বছর কালীপুজোর দিন মিলে গিয়েছে রসগোল্লা দিবসে। কলকাতার কালীক্ষেত্র কালীঘাট এবং রসগোল্লাধাম বাগবাজার— দু’টিই ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চ। ইতিহাস সাক্ষী, কালীর প্রলয়ঙ্করী করাল মূর্তি কী ভাবে জীবনযুদ্ধে বাঙালির বুকে আগুন জ্বালিয়েছে। আবার রসগোল্লার রসও মিষ্টি হলেও হালকা নয়, তার প্রমাণ হাতেকলমেই পাওয়া। স্বাধীনতার যুদ্ধে জেলে গিয়েও বাঙালি (পড়ুন, নেতাজি) রসগোল্লা বানিয়েছে। সৈয়দ মুজতবা আলি লিখে গেছেন, ইউরোপের অচিন শহরে কাস্টমস বা চুঙ্গিঘরের জটিলতায় মুশকিল আসান হয়েছে রসগোল্লা।
রসগোল্লা যে রীতিমতো গম্ভীর রাজনীতির বিষয়, তার পরিচয়ও মিলেছে হাল আমলে। পড়শি রাজ্য ওড়িশার ‘রসগোলা’র সঙ্গে টক্করে বাংলার রসগোলকের জিআই তকমা লাভ যুদ্ধই বটে। বাঙালির রসগোল্লায় পাড়ায় পাড়ায় ফারাক, তবু তার মর্যাদারক্ষায় তাবৎ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীকুল এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাবর্গ একজোট হয়েছিলেন। রসগোল্লা দিবস সেই সাফল্য উদ্যাপনেরই স্মারক। বাংলার মধুরিমা-স্রষ্টাদের অনেকের মতে, এ হল বাঙালি সংস্কৃতির আত্মপরিচয় সন্ধানের ক্ষণ। কবে ১৮৬৮ সালে বাগবাজারে নবীন দাশ ছানার গোলক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে সিদ্ধিলাভ করলেন, সে ইতিহাস কোথাও লেখা নেই। চন্দননগরে তেলেনিপাড়ার জমিদারগিন্নির আদেশে জামাই-ঠকানো সন্দেশ গড়তে গিয়ে জলভরা সন্দেশের জন্মকাহিনি, বা পান্তুয়া-ছানাবড়া-মিহিদানার ইতিহাসও লোকগাথার কুয়াশায় মোড়া। বাঙালির রসগোল্লা-যুগ এক জায়গায় থমকে থাকেনি, এ কালেও বেকড বা স্টিমড নানা রূপে সচল, সজীব তার পরম্পরা। রসগোল্লা দিবসটুকুই বাঙালির রসনার ইতিহাসে সন-তারিখের খড়কুটো।
কর্মিষ্ঠ জীবন
স্কটিশ চার্চ কলেজের স্নাতক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের পড়াশোনা। তবু যে কর্মজীবনে বিজ্ঞাপনের জগতে চলে এলেন শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায় (১৯৪৪-২০২০), তার কারণ চোখের সামনে তাঁর বাবা, রাম মুখোপাধ্যায়ের কর্মমুখর জীবন। বাবার হাতে গড়া ‘প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সিন্ডিকেট’ সংস্থার কাজই ছিল শম্ভুনাথের (ছবিতে) সাধনা, পরবর্তী কালে তিনি হয়ে ওঠেন এই সংস্থার কর্ণধার, বিজ্ঞাপন জগতেরও অগ্রণী পুরুষ। সৌম্যদর্শন, রুচিমান, অভিজাত মানুষটির ব্যক্তিত্ব ছিল নজরকাড়া। ২০০৮ সালে ‘ক্যালকাটা ক্লাব’-এর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, ক্লাবের হয়ে বহু নাটকে বন্ধুরা মনে রেখেছেন তাঁর অভিনয়, বিশেষত ‘শাহজাহান’ চরিত্রে। কর্মিষ্ঠ মানুষটি ছিয়াত্তর বছর বয়সে চলে গেলেন গত ১১ নভেম্বর, সল্ট লেকের বাড়িতে। রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই পুত্র, পৌত্র-সহ অগণিত গুণমুগ্ধ অনুরাগীদের।
মিষ্টি যাত্রা
স্বদেশি আমলে বিপ্লবীদের, এমনকি বিনয়-বাদল-দীনেশেরও নাকি আনাগোনা ছিল এই মিষ্টির দোকানে। উত্তমকুমারের প্রিয় ছিল এখানকার রসগোল্লা। দোকানটি, ‘সতীশ চন্দ্র দাস এন্ড সন্স’। এ বছর শতবর্ষ পূর্ণ করেছে এই মিষ্টি-বিপণি। তবে এটি নতুন দোকান, জানালেন বর্তমান প্রজন্মের সম্রাট দাস। ১৮৪০ সাল নাগাদ শ্রীশ চন্দ্র দাস মোদক উলুবেড়িয়া থেকে এসে কলকাতার খিদিরপুর ডক লাগোয়া শোনাই কালীমন্দির চত্বরে খোলেন ‘ময়রার দোকান’। ১৯২০ সালে ভাইপো সতীশের নামে সেটিই নব কলেবরে শুরু করেন এই বংশের আর এক কৃতী পুরুষ নগেন্দ্রনাথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে দোকান উঠে আসে মেটিয়াবুরুজে, পুরাতন ডাকাত কালীর থানের পাশে। সেই থেকে অব্যাহত মিষ্টি-যাত্রা। গ্রীষ্মে হয় আম উৎসব, পৌষে নলেনগুড় উৎসব, ‘সিগনেচার মিষ্টি’ ক্ষীরপুলি তো বটেই, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা মিষ্টি। শতবর্ষে ‘সতীশ ময়রা’ ফেসবুক পেজেও জনসংযোগে সক্রিয় এই বিপণি। কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে মিষ্টির কারিগর তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্রও, জানা গেল।
নবান্নের বই
নতুন বইয়ের পাতা ওল্টালেই নতুন ধানের মনকেমনিয়া সুগন্ধ। প্রতিটি অর্ডারের সঙ্গে উপহার নতুন চাল, বুকমার্ক, প্রথম দুশো জনের জন্য ব্যাগ। অভিনব এই আয়োজন ‘বইপোকা ডট ইন’-এর। কোভিড-আবহেও পাঠককে বাংলা বই বিক্রি ও পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা চালু করেছে বহু প্রকাশনা সংস্থা, সেখানেই নবতম সংযোজন ‘খড়ি’ প্রকাশনীর এই ওয়েবসাইট। দশ হাজারেরও বেশি বাংলা বই থাকছে, জানা গেল। বই কেনায় মিলবে ছাড়, গন্তব্য ও বরাতের পরিমাণ অনুযায়ী পৌঁছনোর খরচ কমবেশি বা শূন্য। অগ্রহায়ণ মাস এল বলে, ‘বইপোকা ডট ইন’ শুরু করছে নবান্ন উৎসব। নতুন ধানে দেশকে অন্ন জোগান চাষিরা, তা দিয়েই হয় দেবসেবা থেকে অতিথি সৎকারও। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বাংলার এই উৎসবকে বইয়ের সঙ্গে বেঁধে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে এই অন্য রকম নিবেদন। চলবে অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে, ১৭ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর।
ফিরে আসা
এই কালির প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বদেশি আন্দোলনের সময়ে মহাত্মা গাঁধীর পরামর্শে ১৯৩৪-এ ‘সুলেখা’ কালির যাত্রা শুরু। স্বাধীনতা সংগ্রামী, প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক ননীগোপাল মৈত্র তাঁর দাদা শঙ্করাচার্যের সঙ্গে রাজশাহী থেকে এই কালির উৎপাদন শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল, স্বদেশি কালি দিয়ে বিদেশি কালিকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া। পরে কারখানা স্থানান্তরিত হয় যাদবপুরে। ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘ কাল বন্ধ ছিল কারখানা, খোলে ২০০৬-এর শেষে। তার পর উৎপাদন চালু হলেও ক্রমে সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই কালি যেন চলে গিয়েছিল আড়ালে, প্রায়-বিস্মৃতিতে। আদি মোড়কে তাকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে দাবি জানাচ্ছিলেন বহু অনুরাগী। সুখবর দিলেন সংস্থার বর্তমান কর্ণধার কৌশিক মৈত্র, পুরনো গুণমান বজায় রেখে আদি মোড়কেই বাজারে ফিরছে সুলেখা কালি, ‘স্বদেশি’ নামে। এ ছাড়াও ‘স্বরাজ’ ও ‘স্বাধীন’, এই দুই নামেও সাবেক মোড়কে মিলবে কালি। ‘স্বদেশি’-তে তিনটি, ‘স্বরাজ’-এ দশটি ও ‘স্বাধীন’-এ দু’টি রং থাকছে। নতুন বিপণন ব্যবস্থাও অভিনব— শান্তিনিকেতনি সুদৃশ্য বটুয়ায় থাকছে কালির দোয়াত, সঙ্গে এই কালির ইতিহাস এবং পুরনো বিজ্ঞাপন-খোদিত স্মারক। ক্রেতাদের জন্য ‘হোম ডেলিভারি’-র ব্যবস্থা আছে, কলকাতায় ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’র বন্দোবস্তও।
বিকল্প সন্ধানী
“সত্য গুহ-র একালের গদ্যপদ্য আন্দোলনের দলিল বাংলা আলোচনা সাহিত্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ,” বলেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ১৯৭০-এ প্রকাশিত সত্য গুহর (১৯৩০-২০২০) এই বই গতানুগতিক সাহিত্য মূল্যায়ন-প্রবণতা থেকে সরে এসে তৈরি করেছিল বিকল্প পথ। ঘরোয়া পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কিছু দিন, তাঁর সম্পাদিত সাহিত্য বাগদ্রোণী পত্রিকা নতুন লেখকের অন্বেষণ ও পরিপোষণে ছিল সক্রিয়। ১৯৬৫-তে প্রথম বই চেনা অচেনার ভীড়ে আমার মুখ। কাব্য, প্রবন্ধগ্রন্থ রচনার পাশাপাশি, কলকাতার অদূরে অশোকনগরে বসে আঞ্চলিক ইতিহাস বা উদ্বাস্তু সময়ের ইতিবৃত্ত চর্চা করে গেছেন নিষ্ঠায়। নব্বইয়ে পৌঁছে থেমে গেলেন গত ৯ নভেম্বর। ২৯ নভেম্বর অহর্নিশ পত্রিকা তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠান করবে অশোকনগরে।
মীনমিত্র
সকালবেলায় গোছা গোছা রুটি ও গুড় খাওয়াতেন গরুদের। পিঁপড়ের বাসার আশেপাশে রেখে দিতেন চিনি। দানা খেতে আসত যে পায়রাগুলি, তাদের প্রত্যেকটিকে চিনতেন আলাদা করে। বৌবাজারের বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান সত্যেন্দ্রনাথ বড়াল নিজের মতো করে বেছে নিয়েছিলেন অবলা প্রাণীর সেবাকাজ। তেইশ বছর বয়স থেকে নিরামিষাশী, ১৯৮০ থেকে প্রতি রবিবার বাজার থেকে কেনা তিন-চার কিলো জ্যান্ত কই, শিঙি-মাগুর ছেড়ে দিতেন চাঁদপাল ঘাটে গঙ্গার জলে। পেয়েছেন রাজ্য সরকারের ‘মীনমিত্র’ উপাধি। ঈর্ষণীয় সংগ্রহ ছিল প্রাচীন মুদ্রার, নানা সামাজিক কাজকর্মে সতত যুক্ত থাকতেন অকৃতদার সদাহাস্যময় মানুষটি। ১৯৪২-এর উত্তাল বঙ্গে জন্ম, প্রয়াত হলেন সম্প্রতি। তাঁর স্মরণে স্বজন-বন্ধুরা গত ১ নভেম্বর চাঁদপাল ঘাটের গঙ্গায় মাছ ছাড়লেন কিছু।
সত্যের খোঁজ
প্রতি শারদোৎসবেই যাঁর অকালপ্রয়াণের স্মৃতি বিষণ্ণ করে তোলে বাঙালিকে, সেই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শের আফগান (পিরানদেল্লো-র রচনাবলম্বনে) ফের মঞ্চস্থ হচ্ছে ২১ নভেম্বর দুপুর ২টো ও বিকেল সাড়ে ৫টায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। ‘সংসৃতি’-র এই প্রযোজনার নির্দেশক ও সিনোগ্রাফার দেবেশ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, “এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমরা যে চূড়ান্ত সত্যের খোঁজ করি তা যে কত অর্থহীন, পিরানদেল্লো এ নাটকে স্পষ্ট করে তুলেছেন।” মূল চরিত্রের অভিনয়ে রজতাভ দত্ত। অন্য দিকে ৪৮তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘চেতনা’-র একাধিক প্রযোজনা। অ্যাকাডেমিতেই ২২ নভেম্বর দুপুর ৩টেয় দু’টি নতুন নাটক, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মাগনরাজার পালা (কাঞ্চন মল্লিক ও সুজন মুখোপাধ্যায় অভিনীত)। “নতুন নাটক দু’টির ভিতর দিয়ে মানুষের ধর্মচর্চা ও ঈশ্বরসাধনা নিয়ে জিজ্ঞাসু থাকতে চেয়েছি, সপ্রশ্ন থেকেছি ক্ষমতার সঙ্গে আপস প্রসঙ্গেও,” জানালেন সুজন। তাঁরই নির্দেশনায় আন্তন চেখভের গল্প অবলম্বনে অরুণ মুখোপাধ্যায় অনূদিত সফদর হাসমির নাটক গিরগিটি (ছবি তারই পোস্টার থেকে)। অন্যটি গিরিশ কারনাডের রচনাবলম্বনে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটক কুসুম কুসুম, নির্দেশনায় অবন্তী চক্রবর্তী।
শতবর্ষের আশ্রম
১৯২০ সালের ১৭ নভেম্বর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দ্বিতীয় সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দ কালীঘাটের কাছে প্রতিষ্ঠা করেন গদাধর আশ্রম। শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহী শিষ্য বলরাম বসুর আত্মীয় যোগেশচন্দ্র ঘোষের পুত্র গদাধরের স্মৃতিতে এর সূচনা। সারদা দেবী এই আশ্রমের কথা শুনে বলেছিলেন, “কালীক্ষেত্রে আদিগঙ্গার তীরে ঠাকুরের আশ্রম হবে, বেশ হবে।” এখানে এসেছেন স্বামী বিবেকানন্দের গুরুভাইরা— স্বামী ব্রহ্মানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী বিজ্ঞানানন্দ। শ্রীম আসতেন নিয়মিত, কথামৃতের পাণ্ডুলিপি দেখতেন এখানে বসে। নিত্যপূজা, পাঠ-আলোচনা ও সেবাকাজ চলে এই আশ্রমে। আগামী কাল শতবর্ষে পড়ছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এই শাখাকেন্দ্রটি।
আমি গ্রেটা
করোনা-হানার আগে ‘সুখচর পঞ্চম’ নাট্যদলের ছোটরা মেতেছিল কাগজের নাটক, অর্থাৎ খবরকাগজে পড়া দুনিয়া-কাঁপানো খবর নিয়ে নতুন আঙ্গিকে লেখা নাটক নিয়ে। অটিজ়ম-জয়ী পরিবেশ যোদ্ধা গ্রেটা থুনবার্গ বা দৃষ্টিশক্তিহীন জাপানি নাবিক ইয়ামাতো-র সাগরজয়ের কাহিনি ছোটরা নিজেদের মতো করে জানিয়েছিল সকলকে। হেমন্তের বিকেলে ‘ছোটদের পঞ্চম’ মঞ্চে ফিরল সম্প্রতি, ‘টক শো’-র আঙ্গিকে আমি গ্রেটা— গ্রেটা থুনবার্গ (পরিচালনা: মলয় মিত্র) নিয়ে। ২২ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টা ও সন্ধে ৭টায় অন্তরঙ্গ জলসাঘরে আবারও ফিরছে নাটকটি।
দুই মলাটে
শারদ সংখ্যা প্রকাশের নিরিখে একটু দেরি করেই বেরোল কলকাতা পুরশ্রী-র শারদীয়া ১৪২৭ সংখ্যা। সুশোভন অধিকারীর আঁকা প্রচ্ছদচিত্র অপরাজিতা (ছবিতে) ছাড়াও রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা মোরগ, নন্দলাল বসুর ফুল, উডকাটে রামকিঙ্কর বেইজ-এর ডু অর ডাই, সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দুর্গা। বিদ্যাসাগর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের স্মরণে নিবেদিত হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ। উপন্যাস লিখেছেন নলিনী বেরা ও তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রয়েছে তিরিশেরও বেশি গল্প, তিনটি অনুবাদ গল্প, নাটক, ভ্রমণকথা, প্রবীণ ও নবীন কবিদের একগুচ্ছ কবিতা। আলাদা ‘প্রবন্ধ’ বিভাগে করোনা থেকে সিনেমা, দুর্গামাহাত্ম্য থেকে বিভূতিভূষণের সাহিত্য, সবার ঠাঁই।
যখন যেমন
ল্যাপটপে বেড়ালের মুখ। তাই দেখে খুদেটি হাত চালাচ্ছে খাতায়। শেষ হতে না হতেই স্ক্রিনে টুপি-মাথায় পুলিশের মুখ। হাত চালাও জলদি! শব্দ লিখে, ছবি এঁকে পাঠাতে হবে টিচারকে। এপ্রিলে প্রথম শোনা গেল ক্লাস হবে অনলাইন, থমথম টেনশন। কী শিখবে, কতটুকু শিখবে? অ্যাদ্দিনে দিব্যি লম্বা বাক্য বানাতে শিখে গেল তারা। আর মা-বাবা শিখল, ক্লাসের সময় ঘরে চিল্লিয়ে ঝগড়া করতে নেই। জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা।
শহর কলকাতার কালী-মানচিত্র
কার্তিকের হিম-পড়া সন্ধ্যায় আকাশপ্রদীপের আলো দেখে যখন পূর্বপুরুষেরা স্বর্গের পথে হাঁটলেন, শহরের দোকানে তখন লাল জবার কাগুজে মালা, টিনের খাঁড়া, মাটির নরমুণ্ড। বনমালী সরকার স্ট্রিটে ফি-বছর দোমেটে হয়ে শুকোন ডাকিনী-যোগিনীরা, প্রতিমার পাশে এঁরাই তো দু’দিন আগে দাঁড়িয়ে ছিলেন গনগনে চোখে! তাঁদের দিকে তাকালে খুলে যায় স্মৃতির ঝাঁপি।
নিগমকল্পের পীঠমালা তন্ত্র মতে দক্ষিণেশ্বর থেকে বহুলা (এখন বেহালা) পর্যন্ত দুই যোজন ধনুকাকার স্থানের মাঝখানে কালীকে রেখে তিন কোণে তিন মন্দিরে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বিরাজ করতেন। কালে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু সরে দাঁড়িয়েছেন, দুই যোজন পরিমাণ ভূমির ‘কালীক্ষেত্র’ নাম রয়ে গেছে, আর রয়ে গেছেন কালী আর মহেশ্বর, আজকের কালীঘাটে। কালীক্ষেত্র নাম মনে করায় কলকাতার সঙ্গে কালীর সংযোগ। বিভিন্ন জাতির মানুষ মিলেমিশে এ শহর গড়ে তুলেছেন, আপন করে নিয়েছেন কালীকেও। ট্যাংরার চিনা বংশোদ্ভূত নাগরিকরা মন্দির গড়ে মা’কে চাউমিন ভোগ দিচ্ছেন সেই কবে থেকে! বৌবাজারের কালীমন্দিরে স্থানীয় ইউরেশিয়ান মানুষের পুজো দেওয়ার রীতি থেকে মন্দিরের নামই হয়ে গেল ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি।
মিলেমিশে থাকার সংস্কৃতির ছাপ শাক্ত-বৈষ্ণব দ্বন্দ্বেও। উনিশ শতকের কালীঘাটের পটে মেলে শ্রীরাধার কালীকৃষ্ণকে পুজো করার পুরাণকাহিনি। আবার বাগবাজারে গোকুলচন্দ্র মিত্রের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে মদনমোহনকে কালী সাজিয়ে পুজো হল দীপান্বিতা অমাবস্যায়। পারিবারিক রীতি মেনে পুজো যে সব প্রাচীন পরিবারে, এ বার অতিমারি-আবহে সেখানেও আড়ম্বর বর্জন করা হয়েছে।
বাগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি থেকে দক্ষিণে মনোহরপুকুরে মনোহর ডাকাতের কালী, সব জায়গাতেই পুজো হল স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্টর পুজো কলকাতার সর্বজনীন কালীপুজোর জনপ্রিয় দৃষ্টান্ত। বেহালাতেও খ্যাত শঙ্কর পাইকের কালীপুজো। তবে করোনা-আবহে এ বার বারোয়ারি কালীপুজোর রোশনাইও ফিকে। ছবিতে ক্রেতার অপেক্ষায় কুমোরটুলিতে নরমুণ্ডের সারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy