Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কলকাতার কড়চা: প্রান্তিক ইতিহাসের অনুসন্ধান

ভারতে কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা ছিল বেঙ্গল আর্টিলারির, আর সেই সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল দমদম।

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

পলাশির যুদ্ধের আগেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘বেঙ্গল আর্মি’ গড়ে উঠেছিল। প্রথমে পুরোপুরি ইউরোপীয় রেজিমেন্ট, পরে এল ‘লাল পল্টন’— টকটকে লাল জ্যাকেট পরা দেশি সিপাই। এই বেঙ্গল আর্মিরই গোলন্দাজ বিভাগ বেঙ্গল আর্টিলারি— তা অবশ্য তৈরি করা হয় বেঙ্গল আর্মির জন্মের বেশ কয়েক বছর আগেই। ১৭৭৫ সালে এরই প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয় দমদমে। ১৭৮৩ সালে কর্নেল প্যাট্রিক ডাফ দমদম ক্যান্টনমেন্ট তৈরি করেন। সেনাছাউনির চার পাশের গ্রামগুলিও আস্তে আস্তে অধিগ্রহণ করে ব্রিটিশ কোম্পানি। দিগলা, সুলতানপুর এবং কৈখালি মৌজা মিলিয়ে মোট চুরাশিটি গ্রাম নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট গড়ে ওঠে। আঠারো শতকের শেষে বা উনিশের গোড়ায় সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি দমদম মর্যাদা পায় বেঙ্গল আর্টিলারির সদর দফতরের। সেনা ব্যারাক, অফিসারদের বাংলো, খেলার মাঠ, অ্যামেচার থিয়েটার, ব্যান্ড তৈরি হয়। ১৮১৮-১৯-এ সেন্ট স্টিফেন চার্চ, ১৮২৩-এ সেন্ট প্যাট্রিক চার্চ স্থাপিত হয়। ১৮৫০-এর মধ্যেই দেশের প্রায় সেরা ক্যান্টনমেন্ট হয়ে ওঠে দমদম। প্রথম গভর্নর ক্লাইভের সময় যার শুরু, কোম্পানির শেষ গভর্নর জেনারেল ডালহৌসির সময় তার শেষ। ১৮৫৩-য় ডালহৌসি সিদ্ধান্ত নেন, দমদম থেকে বেঙ্গল আর্টিলারির সদর দফতর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মিরাটে। আর দমদম ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড দমদম পুরসভার তকমা পায় ১৯২৯-এ। উত্তর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা অবশ্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল ১৮৭০ সালেই।

ভারতে কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা ছিল বেঙ্গল আর্টিলারির, আর সেই সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল দমদম। এর ইতিহাস তাই শুধু কলকাতার প্রান্তবর্তী কোনও সাধারণ জনপদের বৃত্তান্ত নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের ইতিহাস। বার্ড, জেসপ কি গ্রামোফোন কোম্পানির মতো শিল্পোদ্যোগের বিকাশ হয়েছিল এখানে। অথচ সে ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তা কোনও পাঠ্যক্রমে কখনও অনুভূত হয়নি। এরই সুযোগে প্রতি দিন মুছে যাচ্ছে এই ইতিহাসের একের পর এক উপকরণ। কলকাতা আক্রমণের সময় সিরাজউদ্দৌলার ঘাঁটি থেকে ক্লাইভের বাগানবাড়ি ক্লাইভ হাউস আজও সংরক্ষিত হল না। ভেঙে ফেলা হল উট্রাম ইনস্টিটিউট, ফেয়ারি হলের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। আবার ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ‘বৃহত্তর দমদম’— তার ইতিহাসও কি কম গুরুত্বের? সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মই তো বিরাটি নিমতার মাতুলালয়ে, গওহরজানের শিক্ষালয় ছিল দুলিচাঁদ শেঠের বাগানবাড়িতে যেখানে এসেছেন সে কালের তাবড় সঙ্গীতগুণী, কিশোরীচাঁদ মিত্রের বসতবাড়ি ছিল দমদমেই। কান্দির রাজাদের পাইকপাড়া বিটি রোডের প্রাসাদ, ছাতুবাবুদের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি যেখানে ‘হিন্দুমেলা’র সূচনা হয়, আজ নিশ্চিহ্ন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের বেলগাছিয়া ভিলা (পরে বেলগাছিয়া নাট্যশালা) আজ চূড়ান্ত দুরবস্থায় (সঙ্গে তারই উত্তর দিকের পুরনো ছবি)। এ বার পিপলস গ্রিন সোসাইটির সরেজমিন অনুসন্ধান ও গবেষণায় এবং দেশকাল-এর প্রকাশনায় ১৭৪৭-১৯৪৭ সময়কালে দমদমের ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক তথ্যভাণ্ডার মোট হাজার পৃষ্ঠার দু’টি খণ্ডে তৈরি হয়েছে: ব্রিটিশ দমদম (ইংরেজ শাসনের অনালোচিত অধ্যায়ে দমদমের ভূমিকা) এবং স্বদেশী দমদম (প্রাক্ স্বাধীনতা পর্বে সামাজিক বিবর্তনে দমদমের অবদান)। গ্রন্থনায় মৌমিতা সাহা, সম্পাদনায় শ্যামলকুমার ঘোষ। আছে অজস্র দুর্লভ ছবি, মানচিত্র। বেলগাছিয়া নাট্যশালার যাত্রা শুরুর ১৬০ বছর পূর্তি স্মরণে ৩১ জুলাই নাগেরবাজার অজিতেশ মঞ্চে বিকেল ৫টায় বই উদ্বোধন, তথ্যচিত্র প্রদর্শন।

শতবর্ষে প্রতাপচন্দ্র

১৯২০-র দশকের শেষ দিক। বৌবাজারে নির্মলচন্দ্র চন্দ্রের বাড়িতে অতিথি এসেছেন। বাড়ির এক সপ্রতিভ শিশু তাঁর অনুরোধে গাইল রবীন্দ্রসঙ্গীত। বিস্মিত অতিথি বললেন, ‘‘এ একদিন সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে।’’ অতিথি জওহরলাল নেহরু, আর শিশুটি নির্মলচন্দ্রের পুত্র প্রতাপচন্দ্র। ১ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হবে। ইতিহাস ও আইন, দু’টিতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপনা করেছেন। রাজ্য ও কেন্দ্রে কংগ্রেসের মন্ত্রী ছিলেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে ‘বয়স্ক শিক্ষা’ ও ‘মিড ডে মিল’ তাঁরই ভাবনা। গল্প উপন্যাস নাটক লিখেছেন, তাঁর ‘জব চার্নকের বিবি’ সিনেমা হয়েছে, ছবিও আঁকতেন। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন। ৫ অগস্ট সন্ধে ৬টায় আশুতোষ মেমোরিয়াল ও ক্যালকাটা কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে আশুতোষ মেমোরিয়াল প্রেক্ষাগৃহে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবেন কাশীকান্ত মৈত্র, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্যে চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়।

প্রকৃতিবিজ্ঞানী

ফরিদপুর জেলার লোনসিং গ্রামের বিরল প্রতিভা প্রকৃতিবিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য (১ অগস্ট ১৮৯৫ – ৮ এপ্রিল ১৯৮১)। নিরলস গবেষণায় তিনি উন্মোচন করেন কীটপতঙ্গের জীবনরহস্য ও উদ্ভিদকুলের অজানা দিক। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে আকর্ষক করার কাজেও তিনি অগ্রণী। বোস ইনস্টিটিউটে সুদীর্ঘ গবেষণাজীবনে তাঁর ২২টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। লিখেছেন বাংলার কীটপতঙ্গ, বাংলার গাছপালা, বাংলার মাকড়সা-সহ নানা বই ও বহু প্রবন্ধ। পেয়েছেন নানা সম্মান। ‘গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বিজ্ঞানপ্রসার সমিতি’ ও ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের’ যৌথ উদ্যোগে তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী ১ অগস্ট পালিত হবে পরিষদ ভবনে সকাল সাড়ে দশটা থেকে। ছবি: পরিমল গোস্বামী

সমাজ ও গণতন্ত্র

বিজ্ঞান কলেজের মেধাবী ছাত্র থেকে জেলখাটা নকশাল নেতা, পরে বিধায়ক, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লড়াইয়ে অনলস সৈনিক— সন্তোষ রাণার বিবিধ পরিচয়ের মধ্যে লেখক সত্তাটিও গুরুত্বপূর্ণ। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যেও কলম থেমে থাকেনি। এই পর্বেই আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে তাঁর লেখা বই। প্রয়াণের পর চারটি প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ, সমাজ ও গণতন্ত্র (অন্তঃসার)। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ৩১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় বই-চিত্র সভাঘরে। আলোচনায় সৌরীন ভট্টাচার্য, দিলীপ ঘোষ, মানবী মজুমদার, কুমার রাণা প্রমুখ। মুক্তাঙ্গনেও তাঁকে নিয়ে স্মরণানুষ্ঠান ২ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায়। বলবেন অসীম চট্টোপাধ্যায় রণবীর সমাদ্দার প্রমুখ।

বিদেশের চলচ্চিত্র

চব্বিশ বছরে পা ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলচ্চিত্র উৎসবের। ভারতের ন’টি শহরে প্রতি বছর ঘুরেফিরে আসে এই উৎসব, চেন্নাই দিল্লি গোয়া পুণে হয়ে এ বছর কলকাতায় চলবে আজ থেকে ৩ অগস্ট। এখানে সহ-আয়োজক সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট, সেখানেই ১১-৬টা অবধি রোজ চারটি করে ছবির প্রদর্শন। ইউরোপের প্রধান দেশগুলির সঙ্গে থাকছে সাইপ্রাস, মালটা, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, লিথুয়ানিয়ার মতো অল্প-পরিচিত দেশের ছবিও। সাম্প্রতিক ছবিগুলি থেকে চেনা যাবে ইউরোপের সাংস্কৃতিক জলহাওয়া। সিনে সেন্ট্রাল-এর উদ্যোগে কলম্বিয়া চলচ্চিত্রোৎসব, নন্দনে ৩০-৩১ জুলাই। সেখানেও সাম্প্রতিক সময়ের হালহকিকত।

পঞ্চাশের মন্বন্তর

‘‘করাল মন্বন্তরের মধ্যে মানুষের দুঃখ-দুর্গতি ও নীচাশয়তা দেখিয়াছি, তেমনই আবার মানুষের উদার মহানুভবতায় বিমুগ্ধ হইয়া গিয়াছি।... আর্ত মানুষকে বাঁচাইবার আগ্রহে প্রাদেশিকতার বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতা কোথায় ভাসিয়া গিয়াছে!’’ লিখেছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তাঁর পঞ্চাশের মন্বন্তর-এর (পৌষ ১৩৫০) ভূমিকায়। এরই প্রতিলিপি সংস্করণ প্রকাশ করছে সূত্রধর। ইতিমধ্যে শ্যামাপ্রসাদ প্রদত্ত শিক্ষা-বিষয়ক একটি দুর্লভ বক্তৃতার সিডি-ও প্রকাশ করেছে তারা। বইটির বিষয়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানাবেন চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ৮ অগস্ট সন্ধে ৬টায় আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউটে, সূত্রধর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ়ের থ্রি স্কেচেস ও দেবাঞ্জন সেনগুপ্তের নিবেদিতা অ্যান্ড রবীন্দ্রনাথ: দ্য রিলেশনশিপ আনভেলড-ও প্রকাশ পাবে সে সন্ধ্যায়, গ্রন্থ দু’টি নিয়ে বলবেন অভ্র ঘোষ ও বিশ্বজিৎ রায়।

দর্পিত পদচিহ্ন

‘‘রবীনদা ছিলেন স্বাধীন প্রকৃতির মানুষ।... কোনোদিনই কোনো প্রলোভনে নিজের পথ থেকে সরে যাননি।’’ লিখেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশিতব্য অনন্য রবীন মণ্ডল (সম্পা: গৌতম বাগচি, পারুল) স্মরণ-সঙ্কলনে। শিল্প-সমালোচক প্রশান্ত দাঁ-র কথায়, ‘‘ভারতীয় শিল্পের আধুনিকতার অগ্রগতিতে রবীনদার অবদান তাৎপর্যপূর্ণ।’’ গৌতম বাগচি মনে করিয়ে দিয়েছেন শিল্পীর স্পর্ধিত শপথ: ‘‘যা আঁকব সেখানে উচ্চকোটির তাঁবেদারি থাকবে না।’’ নব্বই বছরে সম্প্রতি প্রয়াত এই শিল্পীর স্মরণে ৩১ জুলাই বিকেল ৫টায় পারুল ভবন সভাগৃহে (৮/৩ চিন্তামণি দাস লেন) ‘রেখে গেলেন দর্পিত পদচিহ্ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সঙ্কলনগ্রন্থটি প্রকাশিত হবে। প্রদর্শিত হবে তথ্যচিত্রকার সন্দীপ রায় নির্মিত ‘তোমার আদিম মুখগুলি’। এ ছাড়া বিড়লা অ্যাকাডেমি ও ক্যালকাটা পেন্টার্সের যৌথ উদ্যোগে বিড়লা অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহে ৩০ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় শিল্পীর স্মরণসভা।

জন্মদিনে প্রদর্শনী

‘‘ আগে ছবির মধ্যে এক রকম গাম্ভীর্য ছিল। আর এখন, তার জায়গায় এসেছে চাতুর্য।... ভেতরের যে গভীরতা, সেটা হারিয়ে যাচ্ছে, দেখাই যাচ্ছে না।’’ সনৎ কর বলেছিলেন এক সাক্ষাৎকারে, সৌরভ দে ও দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়কে। তাঁদেরই উদ্যোগে আজ অশীতিপর এই শিল্পীর জন্মদিনে ‘দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাস’-এ শুরু হচ্ছে তাঁর একক চিত্রপ্রদর্শনী: ‘ওহ্‌ সলিটিউড’। নতুন কাজের সঙ্গে তাঁর আগেকার অদেখা কাজের সম্মিলন। প্যাস্টেল, কালিকলম, চারকোল, এনগ্রেভিং, এচিং-এর সঙ্গে থাকছে নতুন জলরঙের কাজও। চলবে ১৪ অগস্ট অবধি। শেষ দিনে প্রকাশিত হবে শিল্পীর ছোটদের জন্য বই গল্প নয়, গপ্পো।

ওয়াটারপোলো

১৯০০ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সে অন্তর্ভুক্ত হয় ওয়াটারপোলো। কী আশ্চর্য, তার সতেরো বছর পরের কলকাতায় দেখা যাচ্ছে এই খেলার রীতিমতো চল। সৌজন্যে শ্যামচাঁদ দত্ত নামের এক তরুণ। আহিরিটোলা ক্লাবের জিতেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায় ও কলকাতা সুইমিং ক্লাবের এক সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শ্যামচাঁদ চালু করেন ওয়াটারপোলো। তুখড় সাঁতারু ছিলেন, ১১০ গজ সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন। ১৯১৮-য় যোগ দেন কলেজ স্কোয়্যার সুইমিং ক্লাবে, তাঁর দক্ষতায় সে বছরই সিনিয়র ডিভিশন লিগে চ্যাম্পিয়ন হয় এই ক্লাব, রানার্স হয় শিল্ডে। অনেকগুলো বছর খেলা ও প্রশিক্ষণে জড়িয়ে ছিলেন এখানেই। ১৯৫৬ সালে তাঁর নামে কলেজ স্কোয়্যার সুইমিং ক্লাব শুরু করে শ্যামচাঁদ দত্ত মেমোরিয়াল ওয়াটারপোলো টুর্নামেন্ট, তারই ৫০তম উদ্‌যাপন হল সম্প্রতি।

পুনরুজ্জীবন

২৭ বছর আগে কলকাতার বাইরের নাট্যদল হযবরল রবীন্দ্রসদনে প্রথম মঞ্চায়ন করে চন্দন সেনের ‘অনিকেত সন্ধ্যা’। বার্ধক্যের যন্ত্রণা নিয়ে সে-নাটক এমন আলোড়ন তোলে যে দেশে-বিদেশে তা চারশোরও বেশি অভিনয় হয়। দর্শকানুরোধে সে-নাটকের পুনরুজ্জীবন ১ অগস্ট অ্যাকাডেমিতে সন্ধে ৬.৩০-এ। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশের ঢাকাতেও নাট্যদল বহুবচন নাটকটির দ্বাদশ অভিনয় সম্পন্ন করল। নাটকটির মূল ভাব প্রায় তিন দশক পরেও হারিয়ে যায়নি। তখনকার সুভাষ মৈত্র প্রবীর দত্ত পার্থ চৌধুরীর সঙ্গে এখনকার শ্রীজাতা ভট্টাচার্যও করছেন আসন্ন মঞ্চায়নে। অন্য দিকে, নাট্যরঙ্গ ৩ অগস্ট ৪৮তম বর্ষে পদার্পণ করছে, সে দিন তাদের নতুন প্রযোজনা রজত মল্লিক রচিত ও স্বপন সেনগুপ্ত নির্দেশিত ‘রিটার্ন টিকিট’ নাটকটি মঞ্চায়িত হবে দুপুর ৩টে ও সন্ধে সাড়ে ৬টায়, অ্যাকাডেমিতে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে গৌতম হালদার।

অজানা উত্তম

‘‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উত্তম ছাড়া আর কেউ পারেননি, পুরুষদের মধ্যে যাঁকে একমাত্র সত্যিকারের স্টার বলা যেতে পারে।’’ ১৯৮০-র ২৪ জুলাই উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণসভায় বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়, সেটি আবার প্রকাশ পেল পোয়েটস ফাউন্ডেশন-এর মহানায়ক উত্তমকুমারের হারিয়ে যাওয়া ৪২ দিন (সম্পা: অনাদিকুমার দত্ত ও রামকৃষ্ণ সিংহ) বইটিতে। ১৯৭৯-র অগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমেরিকা ও কানাডা সফরে গিয়েছিলেন উত্তম আর সুপ্রিয়াদেবী। সেই ভ্রমণসংক্রান্ত চিঠিপত্র, নানা জনের স্মৃতিগদ্য, এবং স্থিরচিত্রে সুমুদ্রিত এ-বই অজানা উত্তমকে চিনতে সাহায্য করবে।

গান্ধারী

প্রথম অভিনয়ের পর অশোকনগর নাট্যমুখ-এর নবতম প্রযোজনা ‘গান্ধারী’র অভিনয় আজ সন্ধে ৬টায় তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহ’তে। নির্দেশনায় সত্যব্রত রাউত, রচয়িতা শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ। পরিকল্পক অভি চক্রবর্তী জানালেন ‘‘জাহান্নামের সমাচার— এই নামে যে নতুন প্ল্যাটফর্ম আমি আর চার নির্দেশক বন্ধু দেবাশিস দত্ত অতনু সরকার রাজীব বর্ধন রাকেশ ঘোষ মিলে করেছি, তার উদ্যোগেই ‘গান্ধারী’ র দ্বিতীয় অভিনয়।’’ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধশেষে দাবানলের তীব্র দহনে গান্ধারী-র বিলাপ, অভিমান, তীব্র বিষাদ একোক্তিতে এই নাটকে বলে গিয়েছেন সংগীতা চক্রবর্তী। অশোকনগর নাট্যমুখ অভিনয়কেন্দ্রিক বা কথাপ্রধান নাট্যের মধ্য দিয়েই মঞ্চনাট্যের ভাষা তৈরি করতে চেয়েছে বরাবর, ফলত একার কথা হলেও নাটকে ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন চরিত্র— কখনও মৃতদেহ হয়ে, কখনও অবজেক্ট হয়ে, কখনও-বা জ্যান্ত চরিত্র হয়েই। নাট্যমুখ-এর শিক্ষার্থীরাই এ-নাটকে সংগীতা-র সহকর্মী।

স্বাস্থ্যচেতনা

হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা সম্বন্ধে গোড়ায় বিদ্যাসাগরের মনোভাব বিশেষ অনুকূল ছিল না। ১৮৬৬ সালে বিখ্যাত হোমিয়োপ্যাথ ডা. বেরিনি কলকাতায় চিকিৎসা শুরু করেন। এ দিকে বৌবাজারের রাজেন্দ্রনাথ দত্তও বিষয়টি শিক্ষা করে এই পথে আসেন। তাঁর ওষুধে বিদ্যাসাগরের মাথার যন্ত্রণা সেরে যায়, এবং বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও কাজ হয়। এতেই আগ্রহী হয়ে বিদ্যাসাগর রীতিমতো পড়াশোনা করে হোমিয়োপ্যাথি শেখেন। মহেন্দ্রলাল সরকারকে এ পথে আকৃষ্ট করেন তিনিই। আজ তাঁর ১২৯তম প্রয়াণ দিবসে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার বিদ্যাসাগর চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে কৃপাশরণ সভাগৃহে (১ বুদ্ধিস্ট টেম্পল স্ট্রিট) বিকেল ৫টায় বিদ্যাসাগরের স্বাস্থ্যচেতনা ও চিকিৎসাভাবনা নিয়ে আলোচনা। শঙ্করকুমার নাথের সভাপতিত্বে আলোচনায় থাকবেন জয়ন্ত রায়চৌধুরী, অশোককুমার সামন্ত, তরুণকুমার মণ্ডল প্রমুখ।

অওধের নবাব

‘বাবুল মোরা নইহার...’ ঠুম্‌রিটি বিখ্যাত হয়ে আছে আখতারিবাই ফৈজাবাদির কণ্ঠে। যাকে আমরা মনে রেখেছি বেগম আখতার নামে। কিন্তু এই যোগী রাগের স্রষ্টা যে স্বয়ং নবাব ওয়াজ়িদ আলি শাহ, সে কথা ক’জন মনে রেখেছি। কলকাতায় নির্বাসিত ওয়াজ়িদ আলির সঙ্গেই এই শহরে এসেছিল বিরিয়ানি, ঘুড়ি, গান এমন আরও কত কিছু। নিজেও ছিলেন কবি, তাঁর ‘তখল্লুস’ বা ছদ্মনাম ছিল আখতার। নাচ-গানেও ছিলেন দক্ষ। এ বছর ওঁর ১৯৭তম জন্মবার্ষিকী। কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কের একটি রেস্তরাঁয় আগামী কাল অওধের এই শেষ নবাবের জন্মদিনে তাঁর জীবনের অজানা কাহিনি শোনাবেন তাঁরই প্রপৌত্র শাহেনশাহ মির্জা, সঙ্গে থাকবেন অলকানন্দা রায়। সূত্রধার ঐন্দ্রিলা দত্ত। মেহফিলে নবাবকে নিয়ে ছবি আঁকবেন শিল্পী টিঙ্কু দাস।

শিল্পধারা

১৯৩৮ সালে জন্ম, সদ্য প্রয়াত হলেন শিল্পী অমিত সরকার। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে ভারতীয় শিল্পকলা নিয়ে স্নাতকোত্তর ছাত্রটি বেঙ্গালুরুর বিশ্বেশ্বরাইয়া সংগ্রহশালা এবং কলকাতার ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সায়েন্স মিউজ়িয়মসে প্রদর্শন বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন চার দশকেরও বেশি। বেলুড় মঠের শ্রীরামকৃষ্ণ সংগ্রহশালা এবং শ্রীঅরবিন্দ ইনস্টিটিউট-সহ সারা দেশে বিভিন্ন সংগ্রহশালায় কুড়িটিরও বেশি গ্যালারি তৈরি করেছেন। দিল্লির সংসদ ভবন সংগ্রহশালাও তাঁর পরিকল্পিত। সংসদ ভবন, কলকাতার সায়েন্স সিটি-সহ নানা জায়গায় রয়েছে তাঁর আঁকা দেওয়ালচিত্র। সাউথ সিটি মলের বিপরীতে যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টসের গ্যালারি চারুবাসনায় তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী দেখা যাবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত, সোমবার বাদে রোজ ২-৮টা। নীচে তারই একটি।

নিজস্ব গ্যালারি

এই জটিল সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের উদ্যোগে নিজস্ব প্রদর্শশালা তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল ‘দ্য ফ্রেম’। এ বছর ওদের ২৭তম বর্ষপূর্তি। এগারো জন শিল্পী মিলে সাজিয়ে তুলেছেন দলের প্রদর্শনী ‘সাম্যের স্বর’। ১০ অশোক রোড, আলিপুরে। গতকাল সূচনায় ছিলেন হিরণ মিত্র এবং সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। প্রদর্শনী চলবে ২ অগস্ট পর্যন্ত, ৩-৮ টা। প্রদর্শিত হল বিজয় চৌধুরীর তথ্যচিত্র ‘ক্ষত’, আগামী কাল শিল্প-আড্ডা, ১ অগস্ট কবিসন্ধ্যা।

কেন প্রাসঙ্গিক

চারু মজুমদারের চুয়ান্ন বছর আগের ভাষ্য আজকের আতসকাচের নীচে ফেলে পথ চলার শপথ নিয়ে চারু মজুমদার জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন কমিটি গড়ে ওঠে গত বছর জুলাই মাসে। কমিটির রাজ্যব্যাপী কর্মসূচির চতুর্দশতমটি হল ২৮ জুলাই ভারতসভা হলে। শিয়ালদহ থেকে মিছিল শেষে আলোচনা সভা। বিষয়: কেন চারু মজুমদার তাঁর জন্মের ১০০ বছর পেরিয়েও প্রাসঙ্গিক। ছিল আরও কয়েকটি সমান্তরাল উদ্যোগ। ৩০ জুলাই এই উপলক্ষে সিপিআই (এম এল) লিবারেশন নেতাজি ইন্ডোরে সকাল ১১টা থেকে গণ কনভেনশনের আয়োজন করেছে।

বাঘ দিবস

বাঘ নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বাঘ বিশেষজ্ঞরা। আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। ফি-বছর আজকের দিনে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের সে সব কথাই আবার নতুন করে সামনে নিয়ে আসা হয়। এ বারেও এই শহরে বাঘ নিয়ে নানা আয়োজন। আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সম্মেলন কক্ষে বিকেল সাড়ে ৪টের সময় রয়েছে দু’টি আলোচনা। বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এবং আলোকচিত্রী সুজন চট্টোপাধ্যায় এবং রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলবেন যথাক্রমে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব দ্য টাইগার’ এবং ‘দ্য টাইগার ইন দ্য টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি’ শিরোনামে। সঙ্গে প্রদর্শিত হবে বাঘ বিষয়ক আলোকচিত্র।

কিশোরকুমার ৯০

রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম বেরোবে। রেকর্ডিং হবে মুম্বইয়ের ওয়ার্লির রেডিয়ো জেমস স্টুডিয়োয়। যন্ত্রসঙ্গীতে বাবলু চক্রবর্তী। তবলায় ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ট্রেনার সমরেশ রায়। কিশোরকুমার ভীষণ রকম সিরিয়াস। বার বার করে বলে দিয়েছেন, স্টুডিয়োতে কেউ যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে না আসেন। ট্রেনারের কথা খুব মন দিয়ে শুনছেন। তাঁকে সম্বোধন করতেন ‘সমরেশদা মাস্টারমশাই’ বলে। রেকর্ডিংয়ের সময় বার বার সমরেশবাবুকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘মাস্টারমশাই সব ঠিকঠাক আছে তো?’’ প্রত্যুত্তর: ‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, সব ঠিকঠাক।’’ কিশোরজি বিনয়ী— ‘‘না, ভাল করে শুনে বলুন।’’ ‘‘আচ্ছা, ওই জায়গাটা একটু মিষ্টি করে ভাসিয়ে গাওয়া যায় না?’’ কিশোরজি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, হ্যাঁ আলবাত যায়।’’ গানের পাতায় কী যেন সব দাগ কাটলেন। দেখা গেল, একটা গান তৈরি হতে হতে পাতাটাও সুরসাধকের নকশায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। তবলাশিল্পী ইন্দ্রনাথবাবু কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে এক সময় সুযোগ পেয়ে গানের কাগজটা দেখলেন— নানা চিত্রবিচিত্রের মধ্যে একটা পাখির ছবি! ‘‘কিশোরদা, এই পাখির ছবিটা কেন?’’ কিশোরজি হেসে বললেন, ‘‘আরে, ওটা যেমনতেমন পাখি নয়, ওটা কোকিলের ছবি। মাস্টারমশাই বলেছেন, এই জায়গাটা মিষ্টি করে গাইতে, তাই কোকিলের ছবি এঁকেছি!’’ এ বার শিল্পীর ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ অগস্ট, বিকেল ৫টায় নজরুল মঞ্চে ‘তোমায় পড়েছে মনে’ শীর্ষক এক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘থিজ়ম’। গান ও গল্প শোনা যাবে অমিতকুমার, সুমিতকুমার ও কবিতা কৃষ্ণমূর্তির কণ্ঠে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ দিন পর কিশোরকুমারের পরিবারের সদস্য— লীনা চন্দভারকর, ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিরা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। থাকবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ, চিরঞ্জিত প্রমুখ। সম্মাননা জানানো হবে গায়ক গৌতম ঘোষকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bengal Artillery Dumdum Kolkata Korcha কলকাতার কড়চা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy