সা ক্ষাৎকারে তাঁর সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলছেন, “ভীষ্ম আমার ছেলের ছবিতে কাজ করেছে, ভীষ্ম আমাদের খুব কাছের লোক।” ১৯৮৯ সালে তোলা গণশত্রু ছবিতে তরুণ বিবেকবান নাট্যকর্মী ‘রণেন’ চরিত্রে ভীষ্ম গুহঠাকুরতাকে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ, সেই প্রসঙ্গেই এ কথা। আর ‘ছেলের ছবিতে কাজ’ মানে ১৯৮৩-সালে ফটিকচাঁদ থেকে শুরু করে পরে আরও অনেকগুলোয়। ১৯৭৬-এ তপন সিংহের হারমোনিয়াম, তার পর আশির দশক জুড়ে বাঞ্ছারামের বাগান, বৈদূর্য্য রহস্য, আদালত ও একটি মেয়ে, আতঙ্ক-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা। ১৯৯২-এ মুক্তি পাওয়া সত্যজিতের শাখাপ্রশাখা-য় আবার তিনি, তপনবাবুর অন্তর্ধান ছবিতে, সন্দীপ রায়ের গুপী বাঘা ফিরে এলো-তেও। তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন তপনবাবু, সাক্ষী স্বয়ং সন্দীপ। শাখাপ্রশাখা-র শুটিংয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ ভীষ্মের অভিনয় দেখে অনিল চৌধুরীকে বলেছিলেন, “আমার সুস্থ অবস্থায় পেলে ওকে দিয়ে অনেক কিছু করাতে পারতাম, এত ন্যাচারাল অ্যাক্টর খুব কম পাওয়া যায়...” সে কথা অভিনেতার কানেও পৌঁছেছিল, কিন্তু তিনি শুনেও নির্বিকার।
আসলে ‘ভীষ্মদা’ এমনই, মত সন্দীপ রায়ের: ‘বড্ড বেশি পিওর, বড্ড বেশি ভালমানুষ... ওঁকে কারও সম্পর্কে খারাপ বলতে শুনিনি।’ এ দিকে কথা বলতে পারেন অসম্ভব ভাল, গল্প বললে মোহিত হয়ে শুনতে হয়, অদ্ভুত রসবোধ। সত্যজিৎ স্নেহ করতেন তাঁকে, ভীষ্মেরও অমিত শ্রদ্ধা ওঁর প্রতি, ও দেশে টিভিতে ‘আলফ্রেড হিচকক প্রেজ়েন্টস’ সিরিজ় সম্ভব হলে এখানে কেন ‘সত্যজিৎ রায় প্রেজ়েন্টস’ হবে না, বলেছিলেন সন্দীপকে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, উপযুক্ত যোগাযোগও করিয়ে দিয়েছিলেন। দু’টো সিরিজ় হয়েওছিল, ১৯৮৫-র হালকি বারিষ টেলি-ছবিতে সুপ্রিয়া পাঠকের বিপরীতে অভিনয়ও করেছিলেন, ওই বছরেই অভিনেত্রী-তে স্মিতা পাটিলের সঙ্গেও।
বিখ্যাত গুহঠাকুরতা পরিবারের ছেলে, অসাধারণ গায়ক, পিয়ানো-বাজিয়ে, অভিনেতা— এই পরিচয়গুলির পরেও সম্প্রতি জানা গেল, ছবি আঁকছেন ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, এবং সেও প্রায় বছর দশেক ধরে। পথের পাঁচালী আশ্রিত একটি ছবি এঁকেছিলেন, ‘খুব প্রফেশনাল কাজ আর ছবির মধ্য দিয়ে রেসপেক্টটা ফুটে বেরোচ্ছে,’ সেই ছবি প্রসঙ্গে বলছেন সন্দীপ রায়। ছবি আঁকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর, পুরোটাই স্বশিক্ষিত, এবং সন্দীপের মতে ভীষ্মের ছবি আঁকার এই বোধের উৎস ওঁর ‘ইনার আই’। শান্তিনিকেতনের বাড়ির মনোরম বাগানে বসে তিনি বলেন, মানুষের সবচেয়ে বড় অবলম্বন হল প্রকৃতি। শিল্পীর কল্পনা ও বোধ থেকেই এঁকেছেন বেশ কিছু নিসর্গচিত্র। তারই আঠারোটি ছবি নিয়ে ‘এসেন্স অব সিরিনিটি: দ্য সাইলেন্ট মেলোডি অব নেচার’ আন্তর্জালিক প্রদর্শনী করছে কলকাতার ডিজিটাল শিল্প-পরিসর ‘আর্টওয়েভ ইন্ডিয়া’। দেখা যাবে তাদের ওয়েবসাইটে, ডিসেম্বর জুড়ে। ভীষ্ম গুহঠাকুরতাকে নিয়ে সন্দীপ রায়ের একটি সাক্ষাৎকার এই প্রদর্শনীর মুখবন্ধ। ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ভীষ্ম গুহঠাকুরতা, ডান দিকে তাঁর আঁকা ছবি।
অম্বেডকর-চর্চা
জাতপাতের রাজনীতির এই ভারতে তিনি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকরকে (১৮৯১-১৯৫৬) (ছবিতে) সংবিধানের রূপকার হিসেবে জানে সকলে, কিন্তু তাঁরই লেখা বই ও অন্যান্য বহু রচনা দীর্ঘ কাল ছিল অন্তরালে। অম্বেডকরকে পড়া জরুরি, এই ভাবনা থেকেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মহীতোষ মণ্ডল ও তাঁর কিছু ছাত্রছাত্রী মিলে শুরু করেন ওয়েবসাইট ‘অল অ্যাবাউট অম্বেডকর’। ক্লাসে এক সঙ্গে অ্যানাইলেশন অব কাস্ট পড়ার সময় ঠিক হয়, অম্বেডকরের ত্রিশটি রচনা নিয়ে চর্চা হবে, ছাত্রেরা লিখবে নিজস্ব ভাবনা ও বিশ্লেষণ। এই চর্চাকেই সুসংবদ্ধ করতেই ওয়েবসাইটের সূচনা, ক্রমে তা রূপ পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ জার্নালে। ওঁরা পাশে পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক, শিক্ষার্থী, কর্মীদেরও। জার্নালের ডিজিটাল প্রকাশনা সামলাতে প্রেসিডেন্সির আট পড়ুয়া মিলে তৈরি করেছেন কালেক্টিভ ‘একলব্য ডিজিটাল’। নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ৫০টি প্রবন্ধ প্রকাশিত, ৩০টি প্রবন্ধ অম্বেডকরের ৩০টি রচনাভিত্তিক। গতকাল ৬ ডিসেম্বর প্রয়াণদিন ছিল অম্বেডকরের, তাঁকে নিয়ে কলকাতার এই চর্চা অতি জরুরি।
কবির জন্য
ঘোরালো মনের কোনও ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে, তিনি ‘প্রতারক প্রচ্ছদ’ নিয়ে ঘুরে বেড়ান, বলতেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তা শুনে অধ্যাপক দেবীপদ ভট্টাচার্য বলতেন, এ হল ‘অলৌকিক’ প্রয়োগ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলির কথা বলছিলেন পবিত্র সরকার, অনুজ-অগ্রজের সম্পর্ক ছিল তাঁর সঙ্গে। আর শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরে গেলেন ১৯৬৭-র হায়দরাবাদে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে, সেখানেই অলোকরঞ্জনের সঙ্গে তাঁর সখ্যের শুরু, “একুশ শতকে ওঁর সঙ্গে যুদ্ধের ছায়ায় বইটি করেছিলাম, তাতে এক দিকে যেমন কবিতার সঙ্গে ছবি গদ্য ইতিহাস মৃত্যু সবই মিশেছিল, তেমনই অলোকদার কবিতাগুলি ‘যুদ্ধবিরোধী’ নয়, ‘যুদ্ধবিলোপী’ ছিল।” ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইসিসিআর-এ অলোকরঞ্জনের স্মরণানুষ্ঠান হল ‘কল্পনির্ঝর ফাউন্ডেশন’ ও ‘ঋতবাক’ প্রকাশনার উদ্যোগে। সেখানে বললেন শুভাপ্রসন্ন, গৌতম ঘোষ-সহ আরও বিশিষ্টজন। সঙ্গে কবিতা পাঠ ও গান। দেখানো হল তাঁকে নিয়ে সুরঞ্জন রায়ের তথ্যচিত্র ব্রিজিং টু কালচার্স।
নব পরিচয়
“তাঁকে আমরা বন্ধু বলে ভেবেছি,” বলছিলেন জয়ন্ত সেনগুপ্ত, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সেক্রেটারি ও কিউরেটর, “এই বিপন্ন সময়েও সৌমিত্রদা ছিলেন, মনে হত একটা ভরসা রয়েছে কোথাও।” ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ও পত্রভারতী প্রকাশনের সঙ্গে টাটা স্টিল কলকাতা লিটারারি মিট ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল, প্রকাশ পেল সদ্যপ্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নতুন বই আত্মপরিচয় (পত্রভারতী)। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথায় ছিলেন শ্রীজাত, সুমন মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী, “ছোটবেলা থেকেই বাবা বই পড়া অভ্যেস করিয়েছিলেন, সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা আমাদের আশৈশব।” রবীন্দ্রনাথ ও দান্তের অনুষঙ্গ কী ভাবে এসে পড়ত তাঁর সঙ্গে আড্ডায়, বলছিলেন শ্রীজাত। রাজা লিয়ার মঞ্চায়ন পর্বে সুমনের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগে বিবিধ প্রসঙ্গে কথা হত সৌমিত্রবাবুর, “সাজঘরে বসে নাটকের স্ক্রিপ্ট শুনতেন না, বলতেন, সবার সঙ্গে বসে শুনব... এই দলগত বোধটা আসত আসলে তাঁর প্রখর রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে।”— সুমনের অভিমত।
গানের আলোয়
১৯৮৪-তে ‘একাডেমি থিয়েটার’-এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের ৩৬ বছর মঞ্চগানের প্রসারে মগ্ন থেকেছে প্রতিষ্ঠানটি। গড়ে তুলেছে সঙ্গীত, থিয়েটার, যাত্রা, সিনেমা-চর্চার আশ্চর্য তোষাখানা। সেখানে প্রায় ত্রিশ হাজার বই, সমসংখ্যক গ্রামোফোন রেকর্ড, ছবি, পোস্টার, বিলবোর্ড, দুষ্প্রাপ্য ক্যামেরা গ্রামোফোন আর বিচিত্র বাদ্যযন্ত্রের সমাহার। পঞ্চকবির গান, কাব্যগীতি, লোকসঙ্গীত, যাত্রাগান, সিনেমার সুরমূর্ছনার মঞ্চায়োজনে বারে বারে মুগ্ধ করেছে দেশ-বিদেশ। অতিমারির চোখরাঙানিতেও থামেনি এই শিল্পোৎসব। ১২ ডিসেম্বর, শনিবার রাত ন’টায় তাদের আন্তর্জালিক নিবেদন ‘আলোয় ফেরার গান’। সহযোগিতায় ‘ঋদ্ধি মিউজ়িক অ্যাকাডেমি’। ভারত ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার শিল্পী-সমন্বয়ে প্রবাহিত হবে গান, নাটক, কবিতা। শোনা যাবে স্প্যানিশ অনুবাদে রবীন্দ্ররচনা।
কেশবচন্দ্র স্মরণে
উনিশ শতকের খ্যাতকীর্তি ব্যক্তিত্ব কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-১৮৮৪) (ছবিতে) তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় ব্রাহ্ম আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। আপাদমস্তক বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতির প্রতিনিধিত্বের প্রতীক। জার্মান পণ্ডিত ফ্রিডরিখ ম্যাক্সমুলার তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন। তাঁর কর্মপ্রয়াস বঙ্গ-রেনেসাঁসের এক স্বতন্ত্র অধ্যায়, তবে বিতর্কও সঙ্গী ছিল তাঁর। কলকাতায় তাঁর স্মৃতির সাক্ষী ‘কমলকুটীর’, নববিধান ব্রাহ্মসমাজ, কলকাতার উত্তর-উপকণ্ঠেও রয়েছে তাঁর স্মৃতিবাহী অনেক কিছু। গত ১৯ নভেম্বর ছিল তাঁর ১৮২তম জন্মবার্ষিকী, তাঁর স্মরণে বনহুগলির ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজ ৩০ নভেম্বর আয়োজন করেছিল এক আন্তর্জালিক আলোচনার। কেশবচন্দ্রের বহুমুখী জীবন ও কর্মের নানা দিক ফুটে উঠল সেখানে। তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক বক্তৃতায় বিশিষ্ট গবেষক ও প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক অভ্র ঘোষ উনিশ শতকে ব্রাহ্ম আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কেশবচন্দ্রের ভূমিকা মনে করিয়ে দিলেন। কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক শম্পা ভট্টাচার্য শোনালেন কেশবচন্দ্রের সাহিত্যবোধ ও স্বদেশ-ভাবনার কথা। অধ্যক্ষা পাপিয়া চক্রবর্তী কেশবচন্দ্রের নামাঙ্কিত মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের তাৎপর্য বুঝিয়ে বলেন। শেষ পর্বে ছিল কলেজের এনএসএস ইউনিটের ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
গল্পের মতো
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, বৃহৎ বঙ্গ, হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি ল্যাংগোয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার-এর মতো গ্রন্থের রচয়িতা, মৈমনসিংহ গীতিকা-র সম্পাদক। ভগিনী নিবেদিতা, স্যর আশুতোষ থেকে জসীম উদ্দীন ছিলেন তাঁর বন্ধু। রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের (১৮৬৬-১৯৩৯) কীর্তি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যজগতে অনশ্বর। মনীষী বলতেই দূর আকাশের তারা বলে মনে হয়, এমনকি দীনেশচন্দ্রের প্রপৌত্রী সুদেষ্ণা চক্রবর্তীর কাছেও তিনি ছিলেন না-জানা এক মস্ত লেখক, লোকসাহিত্য-বিশারদ, সাহিত্যের ইতিহাসকার। ঘটনাচক্রে কয়েকজন বন্ধু ও স্বজনের প্রেরণায় দীনেশচন্দ্রের লেখা এবং তাঁর উপরে লেখা বইপত্র পড়ে পূর্বসূরির জীবনকে ফিরে দেখার তাগিদ অনুভব করেন সুদেষ্ণাদেবী। তারই ফল নতুন একটি বই, স্মৃতি বিস্মৃতিতে দীনেশচন্দ্র সেন (ঘরে বাইরে পাবলিকেশন)। সাহিত্যকীর্তির গম্ভীর পর্যালোচনা নয়, গল্পের আঙ্গিকে লেখা এই বইয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের শেকড়-সন্ধানীর সাধনা, সুখ, অভিমান, রাগ-অপমানের কাহিনিও। দীনেশচন্দ্রের লেখা ঘরের কথা ও যুগসাহিত্য, আশুতোষ স্মৃতিকথা-র মতো গ্রন্থে অনেকটা খুঁজে পাওয়া যায় তাঁকে, জসীম উদ্দীনের স্মরণের সরণী বাহি আত্মকথাতেও। আজকের সময়ের পাঠকের সঙ্গে দীনেশচন্দ্রের সহজ পরিচয় করিয়ে দিতে কাজে দেবে নতুন বইটি। সেন পরিবারের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রকাশিত হল তা।
অতিমারিকে বুঝতে
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ পেরিয়ে শীতের আনাগোনা ক্যালেন্ডারে। বছরভর কোভিড-১৯’এর সঙ্গে লড়তে গিয়ে অতিমারি নিয়ে অনেক কিছুই জানা হয়ে গেছে মানুষের। কিন্তু সে জানা কতখানি খাঁটি, কতটা বিজ্ঞানসম্মত আর কতটুকুই বা সহজবোধ্য, তা নিয়ে এখনও বিস্তর সংশয়। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত মৌলিক তথ্য ও তত্ত্ব বিজ্ঞান চর্চাকারীদের যতটা আয়ত্তে, সাধারণ পাঠকের ততটা নয়। সেই ফাঁকটুকু ভরাতে কলকাতার সিস্টার নিবেদিতা জেনারেল ডিগ্রি কলেজের শারীরবিদ্যার শিক্ষক অতনু সাহা সম্পাদনা করেছেন দ্য সায়েন্স অব কোভিড নাইন্টিন: পিপল অ্যান্ড সোসাইটি (অ্যাভেনেল প্রেস) নামের বই। ২৭ জন বাঙালি বিজ্ঞান-শিক্ষক ও গবেষকদের লেখা একগুচ্ছ প্রবন্ধে উঠে এসেছে অতিমারির ইতিহাস, বিভিন্ন করোনাভাইরাসের পরিচিতি, কোভিড-১৯’এর বর্তমান পরিস্থিতি, জনস্বাস্থ্য, আর্থ-সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য-পরিসরে কোভিডের প্রভাব, ভ্যাকসিনের বিজ্ঞান, ‘নিউ নর্মাল’ নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা।
একসূত্রে
সাত সাগর আর তেরো নদী পেরিয়ে হাত ধরেছে লন্ডন আর কলকাতা। দুই শহরের মধ্যে শিল্প, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সেতু তৈরি করেছে কলকাতার ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল’ আর লন্ডনের ‘বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’। ২০১৭ সালে টেমস আর গঙ্গার জল মিলিয়ে অভিনব এই সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। দু’টি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে ২০১৭ সালে টেমসের তীরে আয়োজিত ‘বেঙ্গল’স দুর্গা’ চিত্রপ্রদর্শনী দেখে কলকাতার পুজোয় ভিড় জমেছিল বিদেশিদের। ফাগুন উৎসব, দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমাধি সংরক্ষণের মাধ্যমে জোয়ার এসেছিল সম্মিলিত সংস্কৃতিতে। সম্প্রতি আন্তর্জাল-মঞ্চে অনুষ্ঠিত সইসাবুদ পর্বে যৌথ কর্মকাণ্ডের মেয়াদ বাড়ল আরও তিন বছর। ২০২৩-এ ‘ব্রিটিশ কাউন্সিল’-এর ৭৫তম বর্ষপূর্তি পর্যন্ত দুই শহরের ‘লিভিং ব্রিজ’ বা ‘আত্মার বাঁধন’ অটুট রাখবে খেলা, লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান, ‘ইন্ডিয়ালগস ফেস্টিভ্যাল’, আন্তর্জালিক আলোচনাচক্র। দুই শহরের ইতিহাসবিদ, লেখক, সাংবাদিক ও অন্যান্য মেধাজীবীরা যোগ দেবেন আলোচনায়। দুই সংস্থার তরফে ছিলেন দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, সৌরভ নিয়োগী, নিক লো প্রমুখ। ব্রিটিশ কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া-র বারবারা উইকহ্যাম এসেছিলেন শাড়ি-সাজে। অনুষ্ঠান সাঙ্গ হল ‘বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর ভিডিয়ো-প্রযোজনা ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’-র সঙ্গীতে।
শিল্পিত পোস্টকার্ড
তাঁর অনন্য আঙ্গিকে ছবি আঁকতেন, স্কেচ করতেন নন্দলাল বসু, তেমনই আপনমনে শিল্পিত করে তুলতেন চিঠি লেখার পোস্টকার্ডকেও। চিত্রিত পোস্টকার্ড তাঁর সমসাময়িক অনেক শিল্পীরই কৃতি, শিল্পাচার্য নিঃসন্দেহে ছিলেন তাঁদের অগ্রগণ্য। তাঁর গাঁধীবাদী মনন, মানুষের শিল্পী হয়ে ওঠার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে রোজকার জীবনের অতি সুলভ ও সাধারণ এই জিনিসটি হয়ে উঠেছিল ললিত শিল্পবস্তু। অন্তরঙ্গ বন্ধু রমেশ চরণ বসু মজুমদারকে ১৯১৮-১৯৫৬ সময়কালে পাঠানো বহু চিত্রিত পোস্টকার্ডের সংগ্রহ সম্প্রতি উপহার হিসেবে পেয়েছে যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার, সেগুলির সঙ্গে ডিএজি মিউজ়িয়ামস ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের নিজস্ব সংগ্রহে থাকা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যামিনী রায় ও অসিত হালদারের শৈল্পিক পোস্টকার্ড নিয়ে প্রদর্শনী ‘দি আর্ট অব দ্য পেইন্টেড পোস্টকার্ড’ চলছে যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টারের ওয়েবসাইটে (জেবিএমআরসি ডট ওআরজি)। শুরু হল গত ৩ ডিসেম্বর নন্দলাল বসুর জন্মদিনে, চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রদর্শনীটির কিউরেটর তপতী গুহঠাকুরতা। শতবর্ষে কলা ভবনের সঙ্গে হবে বিশেষ প্রকল্প ‘লেটার্স টু নন্দলাল’। ছবিতে নন্দলালের আঁকা পোস্টকার্ডে শান্তিনিকেতন। ছবি সৌজন্য: যদুনাথ ভবন মিউজ়িয়াম অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার
এলেবেলে
উনিশ শতকে বেথুন সাহেব থেকে শুরু করে বিশ শতকে সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চার কথা বলেছেন মনীষীরা। বাঙালি মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা করে না এ অপবাদ বাড়াবাড়ি, তবে চিরকালের বহুভাষিক বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার বর্তমান প্রবণতা ইংরেজির দিকেই ঝুঁকে। বিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব ও গবেষণা সম্বন্ধে অনেকের আগ্রহ থাকলেও, তা বাধা পায় বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পরিসরের অভাবে। সেই বাধাই দূর করতে চায় ‘এলেবেলে’, ওয়েবসাইট (এলেবেলে ডট ওআরজি) ও ফেসবুকের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এক দল বাঙালি গবেষক, বিজ্ঞানী ও অধ্যাপকের উদ্যোগে যাত্রা শুরু, আছেন ছাত্রছাত্রীরাও। ভিডিয়োর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির সহজ বিশ্লেষণের লক্ষ্যে হচ্ছে আন্তর্জালিক আলোচনা। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, আবিষ্কার, সাম্প্রতিক গবেষণাকে সহজ অথচ অবিকৃত ভাবে বাংলা ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়াই উদ্দেশ্য। বাংলায় বিজ্ঞান-সাহিত্যধারাটি ফের পুষ্ট করতে নতুন লেখকদের মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে চায় এই পরিসর। আছে বিজ্ঞান পত্রিকা ও বই প্রকাশের ভাবনাও।
স্মৃতিতে দেশভাগ
দেশভাগ একটি প্রজন্মের অভিজ্ঞতা, কিন্তু তার অভিঘাত ছড়িয়ে যায় বহু দূর পর্যন্ত। মানুষ থেকে মানুষে, পরিবার থেকে পরিবারে স্মৃতি হয়ে বয়ে চলে বেদনাতুর, রক্তমাখা দিনগুলি। ২০১৫ সালে কলকাতা ও ঢাকার গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট ‘ইনহেরিটেড মেমরিজ়’ নামে এক যৌথ প্রকল্পের সূচনা করেছিল। সংগৃহীত হয়েছিল দেশভাগের সাক্ষী থাকা বহু মানুষের ও তার পরের প্রজন্মেরও বয়ান। দুই পারের মানুষেরই কথায় উঠে এসেছিল চলমান বিষাদগাথা। সেই সংগ্রহ ইনহেরিটেড মেমরিজ় নামের বই হয়েই প্রকাশিত হল গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধেয়। আন্তর্জালিক অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান, তিন দেশের নাগরিকেরা। কবিতা পাঞ্জাবির সঞ্চালনায় তৃতীয় প্রজন্মের চোখে ‘পূর্বের দেশভাগ’ নিয়ে বললেন আনম জ়াকারিয়া, হামিদা হোসেন, মেঘনা গুহঠাকুরতা ও নাজেস আফরোজ়।
সীমানা ছাড়ায়ে
ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু দার্জিলিঙের লোরেটো কলেজে। পরে চন্দননগর, মৌলানা আজাদ, লেডি ব্রেবোর্ন ও বেথুন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন উত্তরা চক্রবর্তী (১৯৪৪-২০২০)। অবহেলায় পড়ে থাকা নথি সংগ্রহ করে বেথুন কলেজে গড়ে তুলেছেন লেখ্যাগার। ২০০৪-এ অবসর, ২০১৩ পর্যন্ত পড়িয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই বাংলায় সমাদৃতা এই অধ্যাপিকা ঔপনিবেশিক বাংলার প্রেক্ষাপটে মানবী-ইতিহাসচর্চার এক পথিকৃৎ। মহাফেজখানা ঘেঁটে নারী বিপ্লবীদের জীবনে আলো ফেলেছেন, ‘ঔপনিবেশিক বাংলায় মুসলিম নারী’ নিয়েও তাঁর গবেষণা। দাদামশাই যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তকে নিয়ে লিখেছেন বই, পথচারী ঐতিহাসিক: যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত। ২৯ নভেম্বর চলে গেলেন গুণী মানুষটি। ‘উইমেন’স হিস্ট্রি কনক্লেভ’ আজ সন্ধে ৭টায় এক আন্তর্জাল-অনুষ্ঠানে তাঁকে স্মরণ করবে।
আবার কাটলেট
লকডাউনে সরকারি নির্দেশ মেনে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উত্তর কলকাতার পরিচিত খাদ্য-ঠেক ‘অ্যালেন কিচেন’। দোকানের বোর্ডে লেখা ‘কলকাতায় ১২৫ বছরেরও বেশি’। অ্যালেন সাহেবের থেকে জীবনকৃষ্ণ সাহার হাতে মালিকানা যাওয়ার পরে কেটে গিয়েছে চার পুরুষের কাল। আনলক পর্বের শুরুতেই খুলে যায় কিচেন, তবে দোকানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি, চেয়ার পাতা হয় বাইরেই। এখন অবশ্য রোজ সকালে দোকান স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। গ্রিলে ঘেরা ছোট্ট ঠিকানায় বসে ফের ঘিয়ে ভাজা স্পেশাল প্রন কাটলেট (ছবিতে), ফিশ কাটলেট, চিকেন স্টেক, মাটন চপের স্বাদ গ্রহণ করছেন ভোজনরসিকেরা। যেখানে এক সময় উত্তমকুমার খেতে আসতেন, সেখানে বসে খাওয়ার মহিমাও আলাদা! কলকাতার রসনা-ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া এই সব খাবারও ‘শাখাবিহীন’ এক ও অদ্বিতীয় অ্যালেনেরই।
উৎসবের নাটক
করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের বহু অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে কলকাতার নাট্যদল ‘অনীক’। প্রেক্ষাগৃহ খোলার ঘোষণায় অক্টোবরের প্রথম দিনেই মঞ্চায়ন করেছে নাটকও। প্রতি বছরের মতো এ বারেও তারা আয়োজন করছে ‘গঙ্গা যমুনা নাট্য উৎসব’। উৎসবের এ বার তেইশ বছর, উদ্যাপন হবে ছ’টি পর্যায়ে। তারই প্রথম দু’টি পর্যায় ১৭-২০ ডিসেম্বর তপন থিয়েটারে এবং ২৮-৩০ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে, সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে। থাকছে পানিহাটি, বগুলা, জয়নগর, ফালাকাটা, বহরমপুর, কোচবিহার-সহ কলকাতারও বিভিন্ন দলের প্রযোজনা। সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ও স্বপ্নদীপ সেনগুপ্তের নির্দেশনায় ‘অনীক’-এর নতুন নাটক প্রজেক্ট ম্যানহাটান-এর প্রথম মঞ্চায়ন হবে ২৮ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিতে, দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে। পরের দুই সন্ধেয় আছে ব্রাহ্মণ এবং পিরানদেল্লো ও পাপেটিয়ার নাটকদু’টি। উৎসবের উদ্বোধন ১৭ তারিখ সন্ধে ছ’টায়, তপন থিয়েটারে।
অতীতের সম্পদ
১৯৪৮ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের উদ্বোধন হয়, প্রতিষ্ঠাতা আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। সে দিনই প্রকাশিত হয়েছিল পরিষদের মাসিক পত্রিকা জ্ঞান ও বিজ্ঞান-এর প্রথম সংখ্যা, তার সম্পাদকীয়তে সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিজ্ঞানের ক্ষয়ক্ষতি ও ভবিষ্যৎ দেশ ও বিশ্ব গড়ে তুলতে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের দায়িত্বের কথা লেখা। লেখক তালিকায় ছিলেন যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, বিনয়কুমার সরকার, গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রমুখ। পরবর্তী সংখ্যাগুলিতে প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ— ‘আদর্শ বৈজ্ঞানিক গান্ধী’, ‘বাঙালী কলেজ ছাত্রদিগের দৈহিক দৈর্ঘ্য ও মস্তকাকারের ভেদ’, ‘স্বাস্থ্য ও সূর্যরশ্মি’, ‘বর্তমান খাদ্য ও অর্থসমস্যায় ডিমের স্থান’, ‘রেডার’, ‘ভারতবর্ষের অধিবাসীর পরিচয়’, ‘কলকাতার এই প্লেগ’ ইত্যাদি। সদ্য স্বাধীন দেশে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অমূল্য দলিল এই বিজ্ঞান-পত্রিকার প্রথম দশ বছরের (১৯৫৬ সাল পর্যন্ত) সংখ্যাগুলি পড়ার সুযোগ মিলছে ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের আনুকূল্যে আইআইটি খড়্গপুরের তৈরি ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি অব ইন্ডিয়া’-র ওয়েবসাইটে।
বুদ্ধির্যস্য
মিটিংয়ে দেরি করে পৌঁছে বিধিবদ্ধ ঘোষণা: ‘রাস্তায় আটকে গিয়েছিলাম’— এ রকম তো কতই হয়। মোবাইল আসার পরে সে রোগ আরও অনেক বেড়েছে, কারণ মিটিং শুরুর ঠিক দশ মিনিট আগে একটা ফোন করে ‘অন মাই ওয়ে’ জানিয়ে দিলেই মুশকিল আসান। মুশকিল হয়েছিল কোভিডের আগমনে। ভার্চুয়াল মিটিংয়ে তো ট্র্যাফিক জ্যাম হয় না! তা হলে উপায়? বুদ্ধি থাকলেই উপায় হয়। অনেকেই নাকি ইদানীং মিটিংয়ে ঢুকছেন মিনিট দশ-পনেরো পরে, আর ঢুকেই খুব বিরক্তি সহকারে জানাচ্ছেন, ‘এই ওয়াইফাইটা নিয়ে যে কী ঝঞ্ঝাট হয়েছে! কিছুতেই ভরসা করা যায় না!’ সত্যিই, সময় রাখা কি চাট্টিখানি কথা?
দাও ফিরে
বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথকে ‘ধুত্তোর’ করতে চাইতেন কিন্তু পারতেন না। শেষের কবিতা তাঁকে ও তাঁর সহ-লেখকদের ফের এগিয়ে দিল রবীন্দ্রনাথের দিকে। কলহ ও মিলনের দ্বন্দ্বই তো ভালবাসা, বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত আধুনিক বাংলা কবিতা সঙ্কলনে তাই রবীন্দ্র-কবিতা অনিবার্য। কলকাতার সঙ্গেও নিগূঢ় প্রেমের সম্পর্ক তাঁর। ঢাকার ছেলেটিকে কলকাতা যৌবনবন্ত করে তুলেছিল। দক্ষিণ কলকাতার রূপ-রসে মজলেন বু.ব. সেই রূপ-রস আজীবন তাঁর লেখায়। তাঁর কবিতা ভবনের পদ্যযাপনের দিন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের নির্মাণ ও প্রসারের উদ্যমময় প্রহরগুলি কলকাতাকে বর্ণময় করেছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের টান অমোঘ, তাই শান্তিনিকেতন ভ্রমণ। মুগ্ধ বুদ্ধদেব লিখলেন ‘সব-পেয়েছির দেশে’-র কথা। সে শান্তিনিকেতন তখন সদর্থে কসমোপলিটন নাগরিক সমাজ। আজ বুদ্ধদেব বসুর জন্মদিন, রবীন্দ্রনাথ-বুদ্ধদেবের নাগরিকতা কি বাঙালি ফেরাতে পারে না!
৭৫ ছোঁয়া ঘনাদাকে মায়ায় বেঁধেছে ক্লাব
ঠিকানা— ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেন। এই মেসবাড়িটিকে বাঙালি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে সেই কবে থেকে। সৌজন্যে, আবাসিক ঘনশ্যাম দাস ওরফে ঘনাদা এবং তাঁর সঙ্গীরা। ঘনাদার সূত্রেই আমাদের বিশ্ব ভ্রমণ। বিশ্ব দর্শনও বলা চলে। কখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ‘সাখালীন’ দ্বীপ (মশা গল্পে) ঘিরে ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি, কখনও পরমাণু শক্তি নিয়ে দেশে দেশে প্রতিযোগিতার গল্প (কাঁচ, হাঁস) নিয়ে মজলিসি মেজাজে হাজির হয় ঘনাদা।
এই চরিত্রের ঠিকানা সন্ধানেই এক দিন কলকাতায় এলেন আমেরিকাবাসী ঘনাদা-ভক্ত দিলীপকুমার সোম। খুঁজে দেখলেন, ঠিকানাটা আদতে ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর রোড, বেহালায়। সেখানে মেসবাড়ি নেই, আগাছায় ভরা। এর পরেই দিলীপবাবুর মাথায় আসে, এই শহরে ফের নতুন করে ‘ঘনাদা ক্লাব’ চালু করলে কেমন হয়! ‘একমাত্র স্বীকৃত’ এই ঘনাদা ক্লাবের পথ চলা শুরু গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর। তবে এই ক্লাব আশির দশকে কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান পত্রিকার উদ্যোগে তৈরি ‘ঘনাদা ক্লাব’-এর উত্তরসূরিই ভাবে নিজেদের। আগের ক্লাবটি যখন তৈরি হয়, প্রেমেন্দ্র মিত্র তখনও জীবিত।
লেখকের ঘনাদা চরিত্র-সৃষ্টির নেপথ্যে অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, কিশোর মনে বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করা। আজকের ঘনাদা ক্লাব ও তার সদস্যদের তৈরি ওয়েবসাইট ‘ঘনাদা ডট কম’-এর কর্মকাণ্ডের মূলেও সেই বিজ্ঞান-ভাবনাই। ফেসবুকের মতো সামাজিক সংযোগ মাধ্যমের নিবিড় ব্যবহারে ঘনাদা-চর্চার কথা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ওঁরা। আছে ইউটিউব চ্যানেলও (ঘনাদা স্টোরিজ়), সেখানে ‘স্পিচ-টু-টেক্সট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠ করা হয়েছে ঘনাদার বহু গল্প, এর মধ্যে কয়েকটি ইংরেজিতে। পাঁচটি গল্পের প্রকাশিত কমিকস সংস্করণকে দেওয়া হয়েছে দৃশ্যশ্রাব্য আঙ্গিক। পাশাপাশি, বিেশ্বর পাঠকের কাছে ঘনাদাকে নিয়ে যেতে ৪০টি গল্পের ইংরেজি অনুবাদের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই, বই প্রকাশের কথাও চলছে। প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর গল্পগুলির মধ্যে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা, স্থান ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা বলেছেন। সেগুলির টীকা প্রস্তুত করেছে ঘনাদা ক্লাব। আবার ঘনাদা চরিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মূলের স্বাদ বজায় রেখে এই চরিত্রের নতুন গল্পেরও হদিস মিলবে ওয়েবসাইটে। ক্লাবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাজ ‘ঘনাদা ট্রাভেলগ’। ঘনাদা বিশ্বের যে স্থানগুলিতে অভিযানে গিয়েছিলেন, তাদের বিবরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে একটি মানচিত্র, ঘনাদা ম্যাপ! আছে শার্লক হোমস ভক্তদের মতো ভবিষ্যতে ঘনাদা কেন্দ্রিক গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা তৈরির ভাবনাও।
ঘনাদা ক্লাবের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছেলে মৃন্ময় মিত্র। তাঁর গলায় প্রশংসা, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ, ঘনাদা চরিত্রের বিস্তার ও প্রচার ঘটুক।’’ এখনও পর্যন্ত পাঁচটি সভা হয়েছে ঘনাদা ক্লাবের, সাম্প্রতিকতমটি ১৫ নভেম্বরে, আন্তর্জাল-মাধ্যমে। ৭৫ বছর বয়স হল ঘনাদার (প্রথম গল্প মশা, ১৩৫২ পূজাবার্ষিকী আলপনা), কলকাতা-সহ সারা বিশ্বের ঘনাদা-প্রেমীরা তাঁদের পথ চলায় সঙ্গী হোন, চাইছেন ঘনাদা ক্লাবের সবাই। ছবি ঘনাদাসমগ্র ১-এর (আনন্দ পাবলিশার্স) কাঁচ গল্প থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy