ফাইল চিত্র।
‘জনসংখ্যাবহুল কলকাতা একাধিক বিপর্যয়প্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। যে কারণে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সম্পত্তি ও প্রাণহানির রীতিমতো ঝুঁকি রয়েছে। মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় অর্থাৎ অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, শিল্প ও রাসায়নিক দুর্ঘটনাকে নয় বাদই দেওয়া গেল।’— এমনটাই জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা সংক্রান্ত নথি।
ওই একই নথিতে এটাও বলা হচ্ছে,— ‘বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য কলকাতা পুরসভার নিজস্ব কোনও ইউনিট নেই।’
রবিবার বোমাবর্ষণ, রাজনৈতিক সংঘর্ষ-সহ টালমাটাল পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচ বছরের ‘প্রশাসক’ খুঁজে নিতে সারা শহর ভোট দিল। তবে সেখানে এই প্রশ্নটাও থাকল, ক্রমশ ‘বিপর্যয়প্রবণ’ হয়ে ওঠা কলকাতা কি পরিবেশ-সচেতন পুরবোর্ড পাবে? পুরসভার প্রামাণ্য নথির ভাষায়, ‘সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ’-এর জন্য? না কি গতানুগতিক ধারাতেই পরিবেশকে ব্রাত্য রেখে সমস্ত কাজকর্ম চলবে? যার ফল ভুগতে হবে নাগরিককে?
পরিবেশবিদ মহল কিংবা সচেতন শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, পরিবেশের বিপদ এখনও না বুঝতে পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে অনেক বড় বিপদ শহরের জন্য অপেক্ষা করছে। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘নির্বাচনের উত্তেজনায় পরিবেশের কথা আর কে মনে রাখে? কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখবেন, বিশ্বের অন্য অনেক দেশের নির্বাচনে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।’’
অবশ্য না হয়ে উপায়ও নেই। এমনটাই বলছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ জানাচ্ছে, এমন কোনও সামাজিক স্তর নেই, যাকে পরিবেশ স্পর্শ করে না। ফলে সেখানে রাজনৈতিক আঙিনায় বা প্রশাসনিক ভাবনায় পরিবেশের দিকটি গুরুত্ব না পাওয়াটা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘নির্বাচনী প্রচারে শব্দবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাতেই প্রমাণিত রাজনৈতিক দলগুলির পরিকল্পনায় পরিবেশের গুরুত্ব কতখানি! সে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ইস্তাহারে যাই দাবি করুক না কেন।’’
এমনিতে বিপর্যয়-প্রবণতার মাপকাঠিতে ভারতের অবস্থান মোটেই ‘স্বস্তিদায়ক’ অবস্থায় নেই। কারণ, ‘বুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস’-এর (বিআইএস) ‘রিস্ক জ়োনিং ম্যাপ’ অনুযায়ী, এ দেশের ৬০ শতাংশ ভূমিকম্পপ্রবণ, ৮ শতাংশ বন্যা ও ৬৮ শতাংশ খরাপ্রবণ। আর এর ব্যতিক্রম নয় কলকাতাও।
কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘বিল্ডিং মেটেরিয়ালস অ্যান্ড টেকনোলজি প্রোমোশন কাউন্সিল’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা ‘ভেরি হাই ড্যামেজ রিস্ক জ়োন’-এর অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘কলকাতায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ কিলোমিটার থাকে। ফলে এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট ঘূর্ণিঝড় কতটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে শহরের।’’ সেই ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবশ্য সম্যক ধারণা রয়েছে শহরবাসীর।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট’-এর রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিভাগীয় প্রধান চন্দন ঘোষ বলছেন, ‘‘কলকাতা পুরনো শহর। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠলেও শহরের পরিকল্পনায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে যোগ করতেই হবে।’’ স্থপতি সুবীর বসু আবার বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের রিপোর্ট দেখিয়েছে, কী ভাবে শহরের ৪০ শতাংশ বাড়ি বা কাঠামোই ভূমিকম্প মাপকাঠির নিরিখে হাই রিস্ক জ়োনের অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি শহরের উঁচু বহুতলগুলির নকশা তৈরির সময়ে বাতাসের গতিবেগের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।’’
ফলে ভোটের দিন বোমাবাজি, বুথ দখল, সংঘর্ষের অভিযাগ বাদ দিয়েও এক পুরনো শঙ্কা অনেকের মধ্যে কাজ করেছে। তা হল, বিপর্যয়-প্রবণতার নিরিখে শহরের অবস্থান। যার পরিপ্রেক্ষিতে আশা, ভোটের পালা তো সাঙ্গ হল, আগামী পুরবোর্ড যেন পরিবেশ সংবেদনশীল হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy