Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata

বদলে যাওয়া শহরে বদল হচ্ছে বাড়ির ঠিকানাতেও

আবার যাঁরা এ শহরেই কর্মসূত্রে বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন, তাঁদের একাংশ মফস্সল বা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১২
Share: Save:

এ যেন এক উভমুখী স্রোত। যে স্রোতের ধাক্কায় ভিন্ শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা লোকজন এই শহরে বাড়ি ফিরে আসছেন। সেখানে তাঁরা বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকতে পারছেন না।

আবার যাঁরা এ শহরেই কর্মসূত্রে বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন, তাঁদের একাংশ মফস্সল বা গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। কারণ, তাঁদেরও বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষমতা নেই। করোনা-কালে তাঁদের সকলেরই চাকরি গিয়েছে। কেউ অপেক্ষাকৃত কম মাইনের চাকরিতে ঢুকেছেন, কেউ অন্য কিছু করছেন, কেউ আবার এখনও চাকরি খুঁজে চলেছেন। ফলে রুজি-রোজগার তো অনিশ্চিতই। যতটা অনিশ্চিত মাথা গোঁজার ঠাইঁয়ের সংস্থানও।

এই পরিস্থিতিতে ২০১১ সালের জনগণনা বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যানবিদেরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় স্থায়ী (পার্মানেন্ট) ‘হাউসহোল্ড’-এর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৭৭। সেখানে আংশিক স্থায়ী (সেমি পার্মানেন্ট) এবং সাময়িক (টেম্পোরারি) হাউসহোল্ডের সংখ্যা যথাক্রমে ৫২,০৬৭ ও ৮,৬১১। এক পরিসংখ্যানবিদের কথায়, ‘‘স্থায়ী ও আংশিক স্থায়ী বহু ঠিকানায়

অনেকে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করতেন। বিশেষত কর্মসূত্রে যাঁরা শহরে এসে থাকছিলেন, তাঁদের একাংশ আবার গ্রামে বা মফস্সলের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অজিতাভ রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, এমনও অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা এ শহরে ভাড়াটে হিসেবে থাকেন। কিন্তু কর্মসূত্রে তাঁরা এত দিন ভিন্ রাজ্য বা শহরে থাকতেন। তাঁরা যখন ফিরে আসছেন শহরে, তখন পুরনো জায়গা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত ছোট জায়গায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অজিতাভবাবুর কথায়, ‘‘হয়তো আগে কেউ তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি সপরিবার দু’টি ঘরে বা একটি ঘরে চলে যাচ্ছেন ভাড়া নিয়ে। কারণ যে চাকরিটা তিনি করতেন, সেই চাকরি তাঁর চলে গিয়েছে। এখন যে চাকরি করেন, তাতে তিনটি ঘরের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই ছোট জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের জন্য।’’

অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার জানাচ্ছেন, বেঙ্গালুরু, গুরুগ্রাম, নয়ডা-সহ বিভিন্ন শহরে কর্মসূত্রে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা মানুষের একটা বড় অংশই শহরে ফিরে এসেছেন। অভিরূপবাবুর কথায়, ‘‘তাঁদের চাকরিটা হয়তো রয়েছে। কিন্তু মাইনে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ফলে তাঁরা বলছেন, বাড়ি ভাড়া করে কী ভাবে থাকব? আর যাঁরা কোনও কারণে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরাও কষ্ট করেই থাকছেন।’’

ঠিকানা বদলের আরও একটি কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তা হল, অনেক পেশাতেই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু হয়েছে। ফলে নাগরিকদের একটা শ্রেণি বাড়ি ভাড়ার পিছনে টাকা খরচ না করে নিজস্ব বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। মাসে যে ক’দিন অফিসে যেতে হচ্ছে, সেই ক’দিন অফিস করে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

তবে শহরের বাড়িমালিকদের একাংশের অভিযোগ, আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক ভাড়াটেই করোনা সংক্রমণের অজুহাত দেখিয়ে ভাড়া দিতে চাইছেন না। আবার ‘পশ্চিমবঙ্গ বাড়ি ভাড়া আইন, ১৯৯৭’-এ (ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্ট, ১৯৯৭) প্রতি তিন বছর অন্তর বাড়ি ভাড়া পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা করা যাচ্ছে না। ‘ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুকুমার রক্ষিতের বক্তব্য, ‘‘মানবিকতার খাতিরে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছি না। কিন্তু অনেকে সেটার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে একই শহরে বসতবাড়ির বৈষম্য আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। অবশ্য শুধু বসতবাড়িই নয়, বদল ঘটেছে মনের ভিতরেও। শহরের মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলছেন, ‘‘বাইরের জগতের পাশাপাশি বাড়ির ভিতরেও মানুষের মানসিক স্থিতি টলে গিয়েছে। ভয়, সংশয়, অতি সাবধানতা—সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি রাতে শুতে যাচ্ছেন মানুষ। এ যেন সম্পূর্ণ আলাদা এক জগৎ।’’

আর সেই জগতেই ক্রমশ বদলে যাচ্ছে বাড়ির ঠিকানা, এমনকি, জানলার বাইরের আকাশটাও!

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Bengalis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy