চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যসচিব। নবান্নে শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।
কারও কাছে টাকা চাওয়া হবে না, এ বছর চলচ্চিত্র উৎসবে এটাই নীতি রাজ্য সরকারের।
মাথার উপরে সারদার ভূত। এই আবহে চলচ্চিত্র উৎসবের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে, তার রূপরেখা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকেই পাওয়া গেল শুক্রবার।
ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উৎসবের জাঁকজমক অনেকটাই বাড়িয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই খরচের অনেকটাই জুগিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। শুক্রবার কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিলেন, “সরকার এ বার নিজেই খরচ করবে। নানা ডিনার পার্টি বা আপ্যায়নে যেটুকু খরচ হবে, তা কেউ কেউ ভাগ করে নেবে। স্পনসর আসেনি বলে মূল খরচটা আমরাই দেব।” মমতার দাবি, “আমরা স্পনসর পাইনি, চাইওনি।”
এক দিকে সারদায় সিবিআই তদন্ত, অন্য দিকে খাগড়াগড়ে এনআইএ তদন্ত সাঁড়াশি চাপে এখন বিপর্যস্ত রাজ্য। আন্তর্জাতিক উৎসবের আঙিনায় এমন কালিমালিপ্ত ভাবমূর্তি এমনিতেই যথেষ্ট আড়ষ্টতার কারণ। তার উপরে খোদ চলচ্চিত্র উৎসবেই সারদার টাকা খেটেছে বলে অভিযোগ ওঠার পরে অস্বস্তি দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে উৎসব-আয়োজনে অন্তত স্বচ্ছতা নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না থাকে, সেটা নিশ্চিত করাই এ বারে সরকারের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মুখ্যমন্ত্রী সেই কারণেই এ দিন ফলাও করে স্পনসর না চাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, উৎসব চলাকালীন অতিথি আপ্যায়নের কী ব্যবস্থা, কোন দায়িত্বে কে আছেন সে সবেরও বিবরণ আগেভাগে এ দিন দিয়ে রেখেছেন। মমতা জানিয়েছেন, এ বার জাঁকজমক কম। “ডিনার পার্টির একটা সরকার থেকে করছি। ভেঙ্কটেশ একটা ডিনার দেবে, টালিগঞ্জের কলাকুশলীরা এক দিন আপ্যায়ন করবেন। আর শেষ দিন রাজারহাটে হিডকো চা-চক্রের ব্যবস্থা করেছে।”
স্বচ্ছতার ব্যাপারে সরকার এখন কতটা স্পর্শকাতর, সেটা প্রমাণ করতে নিজের সাংসদ একটি ডিনারের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিলেও তা ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং এই কথাটাও তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন। সারদা মামলায় বার কয়েক জেরার মুখে পড়েন ওই তৃণমূল সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, উৎসবে ওই সাংসদের মালিকানাধীন সংবাদপত্র থেকে এত দিন ডিনার দেওয়া হতো। এ বারও তা চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি।
তা হলে সরকারের কত খরচ হচ্ছে এ বার? তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য বাজেট সংক্রান্ত প্রস্তাবে অর্থ দফতরে যে নোট পাঠিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছে অন্যান্য বার উৎসবের ৭০% খরচ স্পনসরদের থেকে তোলা হয়। বাকি টাকা সরকার খরচ করে। কিন্তু এ বার স্পনসর নেই, তাই খরচ বাবদ ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করুক অর্থ দফতর। জানা গিয়েছে, আপাতত অর্থ দফতর ৭ কোটি টাকা দফতরের নিজস্ব বাজেট থেকে দিয়েছে। বাকি টাকা নানা খাত থেকে বরাদ্দ হয়েছে। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, “প্রয়োজন হলে বাজেট বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। তবে ঠিক কত টাকা খরচ হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”
তবে চলচ্চিত্র উৎসবে যে সব অতিথি আসেন, তাঁদের ভরণপোষণে সরকারের তেমন খরচ হয় না বলেই এ দিন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, অমিতাভ বচ্চন সপরিবার উৎসবে থাকবেন। কিন্তু থাকা-যাতায়াত বাবদ খরচ সরকারের কাছে নেবেন না। নবান্ন সূত্রে অবশ্য খবর, প্রথম দিকে এ বার উৎসবে আসতে রাজি ছিলেন না বিগ-বি। কিন্তু আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে অমিতাভকে উৎসবে আসতে সামনাসামনি অনুরোধ করেন মমতা। পরে পরিচালক সুজিত সরকারের ছবির শু্যটিংয়ে বচ্চন কলকাতায় থাকবেন জেনে তাঁর সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়। জানা গিয়েছে, সোমবার উৎসব উদ্বোধনের দিন দু’টোর মধ্যে শু্যটিং সারতে বলা হয়েছে সুজিতবাবুকে।
মমতা জানান, রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান থাকবেন। সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোন, ইরফান খান, তনুজাকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। থাকছেন ফারহা খানও। তবে তৃণমূল সাংসদ মিঠুন চক্রবর্তীর বাইরে অনুষ্ঠান থাকায় আসছেন না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, উৎসব কমিটির আমন্ত্রণ পাওয়ার পর কোনও জবাবও দেননি মিঠুন। আসার ব্যাপারে কিছুটা অনিশ্চিত ছিলেন শাহরুখও। তবে সদ্য মুক্তি পাওয়া একটি ছবির প্রচারে কলকাতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে চলচ্চিত্র উৎসবে থাকার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy