নেপালে পাচারের পথে উদ্ধার হওয়া কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি এবং টেরাকোটার মূর্তি-নিজস্ব চিত্র।
একাদশ এবং দ্বাদশ শতকের দুর্মূল্য ৬টি পাথর এবং পোড়ামাটির মূর্তি উদ্ধার করতে পারলেও, গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেল পাচারকারীরা। কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর (কাস্টমস)-এর গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, উদ্ধার হওয়া ওই মূতিগুলির আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা। তাঁদের দাবি, আন্তর্জাতিক ভাবে শক্তিশালী প্রত্নদ্রব্য পাচার চক্র যুক্ত এই ঘটনায়। কিন্তু মূর্তি উদ্ধারের দু’দিন পরেও পাচার চক্র সম্পর্কে অন্ধকারে গোয়েন্দারা।
কলকাতা কাস্টমস-এর প্রিভেন্টিভ শাখার গোয়েন্দারা গোপন সূত্রে খবর পান, দুর্মূল্য কিছু প্রত্নদ্রব্য নেপালে পাচার করার চেষ্টা হচ্ছে। সেই খবরের উপর ভিত্তি করে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ইসলামপুরে ফাঁদ পাতেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের দাবি, ২৯ জানুয়ারি রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাঁরা শিলিগুড়িগামী একটি চার চাকার গাড়ি দাঁড় করান।
সেই গাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়, গোয়েন্দাদের অসতর্কতায় এবং ঘন কুয়াশার সুযোগে চালক ও দুই আরোহী চম্পট দেয়। ফেলে যাওয়া গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে শাড়িতে মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় ৬টি পাথরের মূর্তি। শাড়ির মধ্যে তুলো দিয়ে মোড়া ছিল মূর্তিগুলি।
আরও পড়ুন: চালকের দেহ খালেই, ক্ষোভ পুলিশি ভূমিকায়
গোয়েন্দাদের দাবি, বাজেয়াপ্ত মূর্তিগুলিকে তাঁরা শিলিগুড়িতে প্রত্নতাত্বিকদের কাছে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া মূর্তিগুলির মধ্যে দু’টি কষ্টি পাথরে খোদাই করা বিষ্ণু মূর্তি। একটি ৪২ ইঞ্চি লম্বা। দ্বিতীয়টি ২৫ ইঞ্চি লম্বা। এই মূর্তিতে বিষ্ণু গরুড়ের উপর বসা। হাতে গদা এবং চক্র। শুল্ক দফতরের গোয়েন্দাদের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তৃতীয় মূর্তিটিও কষ্টি পাথরের। সেটি আসলে একটি গরুড় স্তম্ভ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মঙ্গলঘট-সহ ওই ধরনের গরুড় স্তম্ভের নিদর্শন মেলে গুপ্ত যুগের শেষ ভাগে। বাজেয়াপ্ত বাকি তিনটি মূর্তির মধ্যে দু’টি পোড়া মাটি বা টেরাকোটার। একটি বুদ্ধমূর্তি এবং অন্যটি বলরামের ছোটবেলা। ষষ্ঠ মূর্তিটিও কষ্টি পাথরে খোদাই করা পার্বতী মূর্তি, সঙ্গে কার্তিক এবং গণেশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মূর্তিগুলির গঠন শৈলীর সঙ্গে সেন আমলের শিল্পের মিল রয়েছে।
টেরাকোটার বুদ্ধমূর্তিও উদ্ধার হয়েছে পাচারকারীদের কাছ থেকে-নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক ভাবে তদম্তকারীদের দাবি, কোনও ব্যাক্তির বা পরিবারের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল ওই মূর্তিগুলি। কারণ এ ধরনের কোনও মূর্তি ভারতের কোনও সংগ্রহশালা থেকে চুরি যাওয়ার খবর নেই। তবে গোয়েন্দাদের অন্য একটি অংশ মনে করছেন মূর্তিগুলো চোরাই। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘এ রাজ্য এবং বিহারে অনেক ছোট অথচ প্রাচীন মন্দির রয়েছে বিভিন্ন গ্রামে। সেখান থেকে মূর্তি চুরি গেলে তার খবর না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।’’ তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত মূর্তিগুলো যাচ্ছিল নেপালে। কারণ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর থামেল এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই এ রকম অ্যান্টিক পাচারের একাধিক চক্র সক্রিয়। নেপাল হয়ে ইওরোপ-আমেরিকা এমন কী এ দেশেরও কোনও ধনী ব্যক্তির কাছে পাচার হয়ে যেত ওই মূর্তিগুলো, দাবি গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: হেনস্থার প্রতিবাদ করায় হামলা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy