দুই পৃথিবী: গৌর দে লেনের বাড়িতে চলছে লক্ষ্মীপুজো।
পুজোর আনন্দ আগেই মাটি হয়েছিল। উদ্যাপন করা হল না কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোও। রবিবার যখন অন্যান্য বাড়ি থেকে শাঁখ, উলু, কাঁসর, ঘণ্টার শব্দ ভেসে এসেছে, তখন বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন, সেকরাপাড়া লেনের পরিবেশ শান্ত, চুপচাপ। বাসিন্দাদের সিংহভাগই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে হোটেলেই আফশোস করে দিন কাটালেন। যদিও এই পরিবেশে আবার দুর্গা পিতুরি ও সেকরাপাড়ার পাশে গৌর দে লেনের বাসিন্দারা নিজেদের খানিকটা ভাগ্যবান মনে করলেন। কারণ তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন হোটেল থেকে বাড়ি ফেরার। তাই তাঁরা কেউ কেউ লক্ষ্মীপুজো করলেন। তবে সে পুজো নেহাতই নিয়মরক্ষা।
প্রায় এক মাস বাড়ি ছেড়ে থাকার পরে মহালয়ার আগে গৌর দে লেনের কোনও কোনও বাসিন্দা বাড়িতে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। সেই সুযোগে রবিবার তাঁরা বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করলেন। কিন্তু উৎসবের আবহাওয়া ছিল বড়ই ফিকে। অন্য বছর সাজানো-গোছানো বাড়িতে ঘটা করে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো করেন অনেকেই। নিমন্ত্রণ থাকে প্রতিবেশীদেরও।
এ দিন দুপুরে গৌর দে লেনের দুশো বছরের পুরনো বাড়ির দোতলায় উঠে দেখা গেল ছোট্ট ঘরে লক্ষ্মী প্রতিমার সামনে পুরোহিত মন্ত্র পড়ছেন। তাঁর পিছনেই হাতজোড় করে বসে বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুভাষ শীল ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘পুজোর দিনগুলিতে হোটেল ছেড়ে নিজের বাড়িতে থাকার জন্য মেট্রোর কাছে আবেদন করেছিলাম। তাই আপাতত পুজোর জন্যই বাড়িতে ফিরতে পেরেছি। যে কোনও দিন ফের বাড়ি ছাড়তে হতে পারে।’’ বৌবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির সময়ে বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুভাষবাবুদের ৬, গৌর দে লেনের বাড়িটিও।
পুজোর দিন হোটেলের ঘরে বসেই কাটালেন দুর্গা পিতুরি লেনের কয়েক জন বাসিন্দা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির একাধিক জায়গায় ফাটলের মেরামতি করা হয়েছে। ঘরের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুঁটলি করে বাঁধা মালপত্র। বৃদ্ধা মা, শিশুপুত্র, স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস সুভাষবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘মহালয়ার আগের দিন বাড়ি ফিরেছি। মালপত্র পুঁটলি থেকে বার করার ভরসা পাচ্ছি না। জানি না আগামী দিনে মেট্রোর কাজ শুরু হলে বাড়ির অবস্থা কী হবে।’’ সুভাষবাবুর বৃদ্ধা মা দুর্গা শীলের কথায়, ‘‘মা লক্ষ্মী ঠিক বিপদমুক্ত করে দেবেন।’’
ঠিকানা নিয়ে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আজকের দিন লক্ষ্মীপুজো করতে পেরে যখন স্বস্তি পেয়েছেন সুভাষবাবুরা, তখন হতাশ ভাবেই দিন কেটেছে জয়া সেন অনিতা দত্ত, লক্ষ্মী দত্তদের। বিপর্যয়ের কারণে মাস দেড়েক ধরে পরিবার নিয়ে মধ্য কলকাতার প্রিন্সেপ স্ট্রিটে হোটেলে রয়েছেন দুর্গা পিতুরি লেনের ওই বাসিন্দারা।
রবিবার দুপুরে হোটেলে গিয়ে দেখা গেল ঘরে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন জয়াদেবীর শাশুড়ি। জয়াদেবীর কথায়, ‘‘পুজোটা খুব খারাপ কাটল। লক্ষ্মীপুজোর দিনটাও হোটেলেই কাটাতে হল। পুজোর সময়ে বাড়িতে ফেরার জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু বাড়ির অবস্থা এতটাই খারাপ যে নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আমাদের অনুমতি দেননি।’’
একই হোটেলে জয়াদেবীর পাশের ঘরেই রয়েছেন অনিতা দত্ত, লক্ষ্মী দত্তেরা। অনিতাদেবীর কথায়, ‘‘অন্য বছর বাড়িতে পুজোর আয়োজন হয়। বাড়িভর্তি লোকজন থাকে। এ বার সব কিছুই যেন কেমন হয়ে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy