অপচয়: পুরসভার কলের মুখে নেই স্টপকক। নষ্ট হচ্ছে জল। সোমবার, ক্রিক রো-এ। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার কলের দায়িত্ব নিতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। যে সব এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে জলের কল ভাঙা হচ্ছে, সেখান থেকে কল সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। জল অপচয় রোধে এমন ‘দাওয়াই’ প্রয়োগ করার পথেই হাঁটতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা সরিয়ে পুরসভা যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পারে, তা হলে জল অপচয় রোধে প্রথম কোনও ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ কার্যকরী হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহরের এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে জলের কলের মুখ নেই। পুরসভা মুখ লাগিয়ে দিয়ে এলেও কিছু দিন পরে ফের তা ভেঙে ফেলে কেউ বা কারা। জলের মুখ লাগানো ও তা ভেঙে ফেলা—এই বৃত্ত চলতেই থাকে। পুরকর্তাদের অনুমান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কলের মুখ ভাঙার পিছনে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশেরই হাত থাকে। পুরসভা বা প্রশাসন বারবার পরিষেবা দেবে, কিন্তু নাগরিকেরা কোনও দায়িত্বই নেবেন না— এই পরিস্থিতিরই পরিবর্তন চাইছেন পুরকর্তারা। তাই ধারাবাহিক ভাবে কোনও এলাকায় কলের মুখ ভাঙলে সেখান থেকে কল সরিয়ে ফেলার প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, ‘‘জল পাচ্ছি, তাই নষ্ট করলাম এটা তো চলতে পারে না। তাই জলের অপব্যবহার রুখতে আমরা এই ধরনের পদ্ধতির কথাই ভাবছি।’’
পুরসভার তথ্য বলছে, সারা শহরে প্রায় ১৭ হাজার স্ট্যান্ডপোস্ট বা রাস্তার কল রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ কলেই স্টপকক নেই। স্টপকক লাগানো হলেও তা হয়তো ভেঙে নিয়ে গিয়েছে কেউ। ফলে সেই সমস্ত কল থেকে অনবরত জল পড়ে যায়। প্রসঙ্গত, এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রোজ পুরসভা কত পরিমাণ জল সরবরাহ করছে এবং কতটা অপচয় হচ্ছে তার হিসেব করা, সেই সঙ্গে যে সব এলাকায় জলের সরবরাহ যথেষ্ট ভাল ও যেখানে জলের সমস্যা রয়েছে, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনাই ওই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
ছ’নম্বর ওয়ার্ডে বি টি রোডের উপরে একটি রাস্তার কল থেকে প্রতিদিন প্রায় ২২ হাজার লিটার জল বেরিয়ে যাওয়ার তথ্য ধরা পড়েছিল সেই সমীক্ষাতেই। একই ভাবে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চানন মুখার্জি রোডের একটি কল থেকে দিনে ১২ হাজার লিটার জল নষ্টের ঘটনা সামনে এসেছিল। ফলে রাস্তার কল থেকে জলের এই বিপুল অপচয় দেখে স্বাভাবিক ভাবেই চমকে উঠেছিলেন পুরকর্তাদের একাংশ। ওই কলগুলিতে বর্তমানে স্টপকক লাগানো হলেও ওই ঘটনা শহরের অন্যত্র লাগাতার ঘটে চলেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বারবার কলে স্টপকক লাগানো হচ্ছে, অথচ দু’দিন বাদে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে সেখানে কেউ স্টপকক ভেঙে দিয়েছে। জল পড়ে যাচ্ছে অনবরত। কতবার স্টপকক লাগানো যায়! কলের মুখ লাগালে সেটা দেখার দায়িত্ব তো স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। জল থেকে যেমন পুরসভা কাউকে বঞ্চিত করতে পারে না, তেমনই জল যাতে নির্বিঘ্নে পাওয়া যায়, সেই দায়িত্ব তো নাগরিকদের নিতে হবে!’’
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের কাজ শেষের মুখে। ওই ওয়ার্ডে একশোটির মতো রাস্তার কল রয়েছে। সেখানেও আগে স্টপককের সমস্যা ছিল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহার বক্তব্য, ‘‘কল যেখানে বারবার ভাঙা হচ্ছে সেখান থেকে কল সরিয়ে নেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের খেয়াল রাখতে হবে, কোথায় কলের মুখ খোলা থাকছে বা কোথায় নেই! কারণ, জল নষ্ট করা যাবে না এ ভাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy