Advertisement
E-Paper

সবুজ ধ্বংসের জের, ‘চাপে’ পড়ে গাছ গুনবে পুরসভা!

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, তিনটি বরোয় ওই গণনা করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১, ৬ এবং ৮ নম্বর বরোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই বরোয় কত সংখ্যক এবং কী কী ধরনের গাছ রয়েছে, সে সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৯ ০১:১৯
Share
Save

পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ের দেখভালের জন্য আলাদা দফতর (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেরিটেজ ডিপার্টমেন্ট) তৈরি হয়েছে। রয়েছে পুরসভার পার্ক ও উদ্যান সংক্রান্ত পৃথক দফতরও। কিন্তু এই মুহূর্তে শহরে গাছের সংখ্যা কত বা গত কয়েক বছরে কত গাছ কাটা হয়েছে, এ সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই কলকাতা পুর প্রশাসনের কাছে! ফলে শুধু রাতের অন্ধকারেই নয়, দিনেদুপুরেও এ শহরে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। ‘চাপে’ পড়ে এ বার তাই গাছ গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন।

প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, তিনটি বরোয় ওই গণনা করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১, ৬ এবং ৮ নম্বর বরোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই বরোয় কত সংখ্যক এবং কী কী ধরনের গাছ রয়েছে, সে সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘গাছ গণনা হলে বোঝা যাবে একটি এলাকায় কত গাছ রয়েছে এবং সেই সংখ্যা কমছে কি না! এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে এ সবের নির্দিষ্ট তথ্যই নেই।’’

বস্তুত, শহরে সবুজের শতকরা হার কত, সে সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অন্ধকারে পুরসভা। গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে যখন সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে, তখন কলকাতা পুর প্রশাসনের এমন ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকাকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীদের বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, সাত বছর আগে, ২০১২ সাল নাগাদ এক বার গাছ গণনায় উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। তার ফল এখনও প্রকাশ্যে আসেনি! পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলছেন, ‘‘কোথায় গাছ কাটা হচ্ছে, কী ভাবে কাটা হচ্ছে সে ব্যাপারে পুরসভা অজ্ঞ। গাছ কাটতে গেলে পুরসভার অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না অনেকে। অথচ রাস্তায় গাছ লাগাতে গেলে পুরসভার অনুমতি নিতে হয়। এ এক আশ্চর্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে!’’ আর এক পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাস্তার আলো ঢেকে দিচ্ছে ডালপালা। আর সে কারণে একটা গোটা গাছই কেটে ফেলা হচ্ছে। পুরসভা নিজেই সে কাজ করছে! অথচ এ নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা সেটা স্বীকার করছে না!’’ কলকাতায় গাছের সংখ্যা কত, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি বন দফতরও। বনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

ফিরহাদ হাকিম মেয়র হওয়ার পরেই ‘আর্বান ফরেস্ট্রি’-র পাশাপাশি গাছ গণনার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত জমির অভাবে ‘আর্বান ফরেস্ট্রি’-র বিষয়টি কতটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব, সে ব্যাপারে পুর প্রশাসনের অভ্যন্তরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে সঠিক পথে এগোলে গাছ গণনা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তাদের একাংশ। পুরসভা সূত্রের খবর, আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দরপত্রের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ সংস্থা নির্বাচন করে গণনার কাজ শুরু হবে।

ইতিমধ্যেই বরোগুলিতে নিম ও দেবদারু গাছ বসানোর জন্য কেন্দ্রীয় পুরভবন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গণনা হলে কোন এলাকায় কী গাছ রয়েছে, সে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। অল্প ঝড়-বৃষ্টিতেও যে ভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে যায়, তার কারণ হিসেবে গাছের গোড়া আলগা থাকা এবং শিকড় ছড়ানোর জায়গা নেই এমন অপ্রশস্ত জায়গায় বড় গাছ পোঁতার সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেন পরিবেশকর্মীরা। গাছ গণনা হলে সেই বিষয়টিও সামনে আসবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। সে ক্ষেত্রে সার্বিক গাছরোপণ নীতি নিয়েও একটি সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

KMC Trees Forest Department

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy