পুর-স্থিতি: কলকাতা পুরভবনের সামনের ফুটপাত হকারদের দখলে। তাই পথচারীরা বাধ্য হয়েই নেমে এসেছেন রাস্তায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ।
পুরভোটে জয়ী হওয়ার পরেই কলকাতার ভাবী মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেছিলেন, নিজেদের কাজের মূল্যায়ন করতে এ বার থেকে প্রতি বছরই পুরবোর্ড রিপোর্ট কার্ড তৈরি করবে। অর্থাৎ, সারা বছর ধরে কাজের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোনো হবে, বছরের শেষে তার মধ্যে কোন কাজটা করা গেল আর কোনটা করা গেল না, তার খতিয়ান জনসমক্ষে পেশ করা হবে। নয়া পুরবোর্ডের শপথগ্রহণের আগে আপাতত এই রিপোর্ট কার্ড-ই পুরভবনে আলোচনার কেন্দ্রে। পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ করার ফলে কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখা সহজ হবে। পুর আধিকারিকদেরই অন্য একটি অংশের আবার প্রশ্ন, রিপোর্ট কার্ডে সাধারণ মানুষের মতামত প্রতিফলিত না হলে সেটির নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে তো?
কলকাতা পুরভোটের ফল প্রকাশের দিন তৃণমূল বড়সড় ব্যবধানে জেতার পরে ফিরহাদ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘দলের নির্দেশকে মাথায় রেখে এ বার থেকে ফি-বছর পুরবোর্ড নিজেদের কাজের মূল্যায়ন করবে। শপথ নেওয়ার পরেই ওই কাজে হাত দেওয়া হবে। বছর শেষে কোন কাজ করতে পারলাম, কোনটা পারলাম না, আগামী বছর কী কী কাজে হাত দেওয়া হবে— সবটাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করা হবে।’’
পুর আধিকারিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠই অবশ্য মনে করছেন, বছরের শেষে একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরে এগোলে আধিকারিক ও সাধারণ কর্মীদের কাজে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। অর্থাৎ, এই ধরনের বাৎসরিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা মানে প্রতিটি দফতরকে দায়বদ্ধতার একটি সুতোয় বেঁধে দেওয়া। যাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করে।
এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পুরসভার দীর্ঘ দিনের ইতিহাসে কোনও বোর্ডই কাজের মূল্যায়ন খতিয়ে দেখতে বাৎসরিক রিপোর্ট কার্ড তৈরির কথা বলেনি। এই প্রক্রিয়া চালু হলে পুর পরিষেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি পুরকর্মীদের ঢিলেঢালা মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়।’’
ফিরহাদ-ঘোষিত এই ধরনের রিপোর্ট কার্ড তৈরির কোনও যৌক্তিকতাই অবশ্য খুঁজে পাচ্ছেন না পুরসভার বিরোধী দলের ভাবী কাউন্সিলরেরা। সিপিএমের মধুছন্দা দেবের প্রশ্ন, ‘‘কাজের মূল্যায়ন নিজেরাই করলে সেখানে নিরপেক্ষতা কী ভাবে বজায় থাকবে?’’ বিজেপি-র বিজয় ওঝার সাফ কথা, ‘‘কাজের মূল্যায়নের নামে তৃণমূল পুরবোর্ড নিজেদের ঢাক নিজেরাই পেটাবে। শহর জুড়ে হোর্ডিংয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই ফিরিস্তিই দেওয়া হবে।’’ কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক বলছেন, ‘‘বিরোধী দলের হাতে থাকা ওয়ার্ডগুলিকে কখনওই কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিসের রিপোর্ট কার্ড? তৃণমূলের লক্ষ্যই হল, বিরোধীশূন্য করে নিজেদের গুণগান করা। আগে বেহাল রাস্তা, ফুটপাত দখল, বেআইনি পার্কিংয়ের সমস্যা মেটাক পুরসভা। তার পরে রিপোর্ট কার্ডের কথা ভাবা যাবে।’’
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সাফ কথা, ‘‘রিপোর্ট কার্ড মানেই সেখানে নম্বর দেওয়ার কথা উঠে আসে। কিন্তু কাজের নম্বর কে দেবে? এ সব প্রলাপ ছাড়া কিছু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy