Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

খবর গেল ডেঙ্গির, তবেই এল কামান

রবিবারের সকালটা এ ভাবেই শুরু হল কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের রাজাবাগান অঞ্চলে। হঠাৎ এত তৎপরতা? একটি বাড়ির দিকে দেখিয়ে এক পুরকর্মী জানালেন, ওখানে এক জনের ডেঙ্গি হয়েছে।

চলছে ধোঁয়া দেওয়ার কাজ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

চলছে ধোঁয়া দেওয়ার কাজ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

সকাল তখন সাড়ে ন’টা। হঠাৎ একটানা বেশ কিছুক্ষণ ভোঁ-অ-অ-অ আওয়াজ। কী ব্যাপার? দেখা গেল, বন্দুক ধরার কায়দায় একটা মেশিন ধরে রাস্তা দিয়ে ছুটছেন কয়েক জন লোক। সেই মেশিন থেকে আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ছে ধোঁয়া। তাতে রীতিমতো চোখ-মুখ জ্বালা করছে।

জানা গেল, ওঁরা পুরকর্মী। এসেছেন মশা মারতে। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই এ বাড়ি-ও বাড়ি থেকে শুরু হল প্রবল আকুতি, ‘‘দাদা, দয়া করে এখানে এক বার আসুন। ভীষণ মশা!’’

রবিবারের সকালটা এ ভাবেই শুরু হল কলকাতা পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের রাজাবাগান অঞ্চলে। হঠাৎ এত তৎপরতা? একটি বাড়ির দিকে দেখিয়ে এক পুরকর্মী জানালেন, ওখানে এক জনের ডেঙ্গি হয়েছে। আতঙ্কিত প্রতিবেশীর পাল্টা প্রশ্ন, পুরসভা জানল কী ভাবে? ওই কর্মীর জবাব, ‘‘যেখান থেকে রোগীর রক্তপরীক্ষা হয়েছিল, তারাই খবর দিয়েছে পুরসভায়।’’ ঘরের পাশে ডেঙ্গি হয়েছে জানার পরেই সেই আকুতি নিমেষে বদলে গেল ক্ষোভ আর আতঙ্কে। শুরু হল ফিসফাস,— খবরটা বোধহয় শনিবারই পেয়েছিল পুরসভা। সে জন্যে হঠাৎই কাল পাড়ায় ব্লিচিং ছড়িয়ে গিয়েছিল।

ক্ষুব্ধ এক বাসিন্দার প্রশ্ন, কেন ডেঙ্গি নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে পুরসভা? আগে সচেতন হলে তো এমন পরিস্থিতি হত না। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুষ্পালি সিংহের অবশ্য সাফাই, ‘‘আমার ওয়ার্ডে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই এবং মশা নিধনের কাজ হয়।’’

বাসিন্দাদের একাংশ যদিও কাউন্সিলরের কাজে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের অভিযোগ, মশা মারার তেল নিয়মিত দেওয়া হয় না এলাকায়। কোনও কোনও বাড়িতে পুরকর্মীরা আসেন ছ’-সাত মাস অন্তর। এলাকার ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার হয় না। অভিযোগ রয়েছে দীপেন ঘোষ সরণিতে একটি প্রস্তাবিত আবাসনের জায়গা নিয়েও। সেটি তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। ঘেরা ওই জায়গাটি ভরে গিয়েছে জঙ্গলে। এর ফলে বাড়ছে মশা। পুষ্পালিদেবীর বক্তব্য, ‘‘কিছু কিছু জায়গায় খুবই সমস্যা আছে। সিঁথির অ্যালবার্ট ডেভিড সংলগ্ন একটি বড় এলাকা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এ রকম বেশ কিছু জায়গায় পুরকর্মীদের ঢুকতেই দেওয়া হয় না। এমন হলে আমরা কী করতে পারি?’’

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহার কথায়, ‘‘মুখের কথায় কাজ না হলে গায়ের জোরে ঢুকতে হবে। একটা পরিবারের জন্যে কেন এতগুলো বাসিন্দা ভুগবেন? আমি এ ক্ষেত্রে জোর করে কর্মীদের ঢোকাই। তবে কাউন্সিলরদেরও বাসিন্দাদের সঙ্গে সেই স্তরে যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে ন’টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বারবার এ কথা বলেছি। তবে এটা ঠিক, কিছু কিছু কাউন্সিলর সম্পর্কে আমাদের কাছেও অভিযোগ আসছে।’’

শহরে ডেঙ্গি নিয়ে কিছু দিন আগে পর্যন্তও মুখে কুলুপ এঁটে ছিল কলকাতা পুরসভা। অথচ তাদেরই তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক নম্বর বরোয় পুরসভার ল্যাবরেটরিতে প্রায় ১৫ হাজার রোগীর রক্তপরীক্ষা হয়েছে। যাঁর মধ্যে ম্যালেরিয়া পজিটিভ বেরিয়েছে ৩৬৪ জনের। প্রায় ১৪০০ জনের ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করে আইজিএম পজিটিভ বেরিয়েছে ১২৫টি ক্ষেত্রে। পুরসভার এক স্বাস্থ্যকর্তাই বলছেন, ‘‘অস্বীকার করে লাভ নেই, কলকাতায় ডেঙ্গি আছে। পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বুঝে এত দিনে কর্তৃপক্ষ তা মেনেছেন, এটুকুই যা ইতিবাচক।’’

তবে তরুণবাবুর বক্তব্য, ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধির পিছনে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবও একটা বড় কারণ। তাঁর বক্তব্য, অনেকে বাড়ির আবর্জনা পুরসভার গাড়িতে না ফেলে যেখানে সেখানে ফেলে দিয়ে যান। বাড়িতে বাগান করার নামে জল জমিয়ে রাখেন। জ্বর হলেও অনেকে আবার রক্তপরীক্ষা করতে যাচ্ছেন না। বরো চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এগুলো কি মানুষের অসচেতনতা নয়? শুধু দোষারোপ না করে সে দিকটাও এ বার সকলে ভাবুন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy