কলকাতা পুরসভা। —ফাইল ছবি।
সাত মাস ধরে কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা অবসরকালীন প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বকেয়া টাকা পাননি ঠিকাদারেরা। অথচ, মঙ্গলবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর যে বৈঠক হয়ে গেল, তার জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হচ্ছে কলকাতা পুরসভাকে। মূলত খাবারের প্যাকেট ও প্যান্ডেল বাবদ ওই বরাদ্দ ধরা হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুজোর এই বৈঠকের জন্য ২০১২ সাল থেকেই বিপুল আর্থিক বোঝা বহন করে আসছে পুরসভা। পুরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে এই টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
পুরসভার আর্থিক দুর্দশার কথা মাথায় রেখে গত বছর মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে ২০২২ সালের টাকা মিটিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র দফতরকে বেশ কয়েক বার চিঠি দেন তদানীন্তন পুর সচিব। কিন্তু নবান্ন থেকে কোনও উত্তর আসেনি। ফলে, এ বারও নেতাজি ইনডোরের অনুষ্ঠানের খরচ মেটাতে হচ্ছে পুরসভাকে। পুর আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘কলকাতা পুরসভা স্বশাসিত সংস্থা। দেনার ভারে অবস্থা সঙ্গিন। এ ভাবে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানের বিপুল খরচ বহন করতে হলে পুরসভার আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়বে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২২ সালে নেতাজি ইনডোরে পুজো কমিটির সঙ্গে এই বৈঠক বাবদ খরচ হয়েছিল ৪৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৫০ টাকা। সেই টাকা পুর তহবিল থেকে মেটানো হয়েছিল। পরে তা মিটিয়ে দিতে পুরসভা স্বরাষ্ট্র দফতরে একের পর এক চিঠি দিলেও টাকা মেলেনি।
এরই মধ্যে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অনুষ্ঠানের খরচ বহন করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা পুলিশ চিঠি দেয় পুরসভাকে। গত বছরও খরচ হয় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্বরাষ্ট্র দফতরে একাধিক বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পুজো বৈঠকের খরচ বহন করার আবেদন জানিয়ে পুলিশের তরফে চিঠি আসায় মেয়র আধিকারিক মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরই নির্দেশে ২০২২ সালের অনুষ্ঠানের খরচ মেটানোর দাবি জানিয়ে নবান্নে ফাইল পাঠানো হয় ২০২৩-এ। ডেকার্স লেনের একটি কেটারিং সংস্থা ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নেতাজি ইনডোরের অনুষ্ঠানে খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করেছিল। ২০২২ সালের বিল হয়েছিল প্রায় ন’লক্ষ টাকা। সংস্থার কর্ণধার দেবব্রত হালদারের কথায়, ‘‘২০২২ সালে খাবারের প্যাকেট বাবদ প্রায় ন’লক্ষ টাকা বিল হয়েছিল। সেই টাকা বকেয়া রেখেই ২০২৩ সালের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করতে বলা হয়েছিল। আমি আপত্তি করায় গত বছর থেকে আমাকে আর দায়িত্ব দেওয়া হয় না। যদিও পরে বকেয়া টাকা পেয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা অবসরকালীন থোক টাকা (কমিউটেশন, গ্র্যাচুইটি) পাচ্ছেন না। আবার ঠিকাদারেরা এখন ২০২২ সালের মার্চের বকেয়া পাচ্ছেন। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের দাবি, ‘‘পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সাত মাস ধরে প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত। ঠিকাদারেরা বকেয়া টাকা পেতে নিত্যদিন দরবার করছেন। এই অবস্থায় পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি অনুষ্ঠানের খরচ বহন করা মানে পুরসভাকে আরও বিপাকে ফেলে দেওয়া।’’
বকেয়া টাকা পরিশোধ করার আবেদন জানিয়ে গত বছর স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিব অমিতাভ সেনগুপ্তকে বারকয়েক চিঠি দিয়েছিল পুরসভা। সেই সময়ে স্বরাষ্ট্রসচিব ছিলেন বর্তমানে মুখ্যসচিবের দায়িত্বে থাকা ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা। এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমার কিছু মনে পড়ছে না।’’ বর্তমান স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে সেটি বেজে গিয়েছে। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপেরও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy