যুবকের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। —প্রতীকী চিত্র।
শহরে এক যুবকের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান উত্তর কলকাতার জোড়াবাগানের বাসিন্দা বিট্টু সিংহ (৩৬)। হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্য়ুর শংসাপত্রে কারণ হিসাবে ‘ডেঙ্গি ফিভার’-এর উল্লেখ রয়েছে। যদিও এই মৃত্যুকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে মানতে নারাজ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এই প্রসঙ্গে শনিবার তিনি বলেন, ‘‘ওই যুবকের আইজিএম টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। তা হলে কী ভাবে বলা যায় যে, তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন? রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গি নেগেটিভ থাকলেও কী ভাবে আর জি করের চিকিৎসকেরা ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ করলেন? এ বিষয়ে তদন্ত করতে স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি।’’
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত জোড়াবাগান এলাকার বাসিন্দা বিট্টু গত ছ’দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী সিংহ এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘আমার শ্বশুর অসুস্থ। ছটপুজো উপলক্ষে বাড়ির নানা কাজে গত কয়েক দিন ধরে খুব ব্যস্ত ছিলেন আমার স্বামী। শরীর খারাপ নিয়েও আমাদের কিছু জানাননি। শুক্রবার সকাল থেকে ওঁর শরীরটা বেশি খারাপ হতে থাকে। সে দিন সকালে জোড়াবাগান এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে আসেন।’’ জয়ন্তীর কথায়, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যায় রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট স্বামীরই আনার কথা ছিল। কিন্তু উনি আমাকে জানান, শরীর খুব খারাপ লাগছে। তাই আমিই যেন রিপোর্ট আনতে যাই। সেখানকার ডাক্তার ওঁকে কোনও সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। সেই মতো বাড়ি ফিরে রাতেই বাড়ির কাছাকাছি আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাত ১২টা নাগাদ বিট্টুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। রাত দেড়টা নাগাদ মারা যান তিনি। বিট্টুর তিন শিশুকন্যা রয়েছে। তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘‘স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। ওঁর একার রোজগারেই সংসার চলত। এখন আমাদের কী হবে?’’
আর জি কর হাসপাতালের তরফে যুবকের মৃত্যুকে ডেঙ্গি বলে উল্লেখ করা হলেও এ দিন ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের পরে মেয়র পরিষ্কার বলেন, ‘‘ওই যুবকের আইজিএম পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে বলা হচ্ছে, তিনি ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন?’’ এ দিন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, গত বছর জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গিতে ১২৩৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। চলতি বছরে ওই একই সময়ে ডেঙ্গিতে ৮৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আবার গত বছর জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৩০৯ জন। চলতি বছরের ওই সময়ে ৫১৮৭ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। মেয়র বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ শতাংশ কম। অন্য দিকে, ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কম। তবু আমরা কোনও ভাবেই আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। বছরভর পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের কাছে একটাই আবেদন, বাড়ি ও তার আশপাশে কোনও ভাবেই জল জমতে দেবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy