ছবি: সংগৃহীত।
দক্ষিণ কলকাতার কলোনি এলাকা। একটি বাড়ির গা ঘেঁষেই উঠে গিয়েছে অন্য বাড়ি। কোনও ক্ষেত্রে দু’টি বাড়ির মাঝে একটিই পাঁচিল! এ রকম অন্তত ৬০-৭০টি বাড়ির প্রত্যেকটিরই ঠিকানা এক। কলোনির যে নম্বর তা দিয়েই পুরসভার খাতায় বাড়িগুলির পরিচয়!
নিজস্ব ঠিকানা যেমন নেই, তেমনই নেই জলের বৈধ সংযোগ। তবু ওই বাড়িগুলির দাপটেই জলের হাহাকার এলাকায়। স্থানীয়দের বড় অংশের অভিযোগ, পুরসভার তরফে ওই সব বাড়ির বাসিন্দাদের জন্য নিজস্ব কল না দেওয়া হলেও কলোনির রাস্তার মোড়ে তিনটি ‘টাইম কল’ বসানো হয়েছিল। এখন সেই কলের মুখেই পাম্প লাগিয়ে পাইপ দিয়ে তাঁরা জল টেনে তুলে নিচ্ছেন বাড়ির ট্যাঙ্কে। প্রত্যেকটি বাড়িতে এ ভাবেই কাজ করছে অন্তত চার-পাঁচটি করে পাম্প। ফলে পুরসভার জল সমান ভাবে পৌঁছচ্ছে না গোটা এলাকায়। যাঁর একই ভাবে জল চুরির পথে হাঁটছেন, তাঁরা জল পাচ্ছেন। বাকিরা ভোগান্তির অভিযোগ নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন পুর-প্রশাসনের দোরে। জল নিয়ে সাম্প্রতিক উৎকণ্ঠায় এই অভিযোগ আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন পুর আধিকারিকেরা।
উত্তর কলকাতার একটা বড় অংশে আবার জল চুরি নিত্যদিনের ঘটনা বলে স্থানীয়দের দাবি। যেমন, উত্তরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের জন্য টালা থেকে বাগমারি জলাধারে জল যায়। সেখান থেকে পুরসভার সার্ভিস লাইনের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায়। জলের বৈধ সংযোগ আছে এমন বাড়িগুলিতে সেই পাইপের মাধ্যমে জল যাওয়ার কথা নিজস্ব জলাধারে। সেখান থেকে পাম্প চালিয়ে তোলা হয় ছাদের ট্যাঙ্কে। অথচ বহু ক্ষেত্রে কল থেকে জলাধারে না ভরে, সরাসরি পাম্প দিয়ে তিনতলা-চারতলা বাড়ির ছাদে তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা স্বপন সমাদ্দারের দাবি, ‘‘আগে যে বাড়িতে সাত-আট জন থাকতেন, এখন সেটাই ফ্ল্যাট হয়ে ৪০-৫০ জনের বাস। প্রতি তলে অন্তত তিনটি করে ফ্ল্যাট বার করেছেন প্রোমোটার। কিন্তু জলের সংযোগ আগের মতোই রয়ে গিয়েছে একটি কলে। সকলের জলের প্রয়োজন মেটাবে কে? প্রোমোটার তো ফ্ল্যাট বিক্রি করে হাওয়া!’’
২০১৫ সালে এই জল চুরির অভিযোগই পৌঁছেছিল কোর্টে। দক্ষিণ কলকাতার ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে পাম্প লাগিয়ে জল চুরির অভিযোগ আসে। তা খতিয়ে দেখে ওই ব্যবসায়ী বাসিন্দার জলের সংযোগ কেটে দেয় পুরসভা। ব্যবসায়ী আদালতের দ্বারস্থ হলে সিঙ্গল বেঞ্চ সংযোগ জুড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পুরসভা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গেলে ব্যবসায়ীর জরিমানা হয়। সেই সঙ্গে এ ভাবে জল চুরিকে ‘গুরুতর অপরাধ’ বলে ব্যাখ্যা করে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এ ব্যাপারে পুর-প্রশাসন কোনও নোটিস না দিয়েই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির (বাড়ি, ফ্ল্যাট বা বিল্ডিংয়ের মালিক) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও নির্দেশ দেয়, বেআইনি ভাবে জল টেনে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত নজরে রাখবে পুর-প্রশাসন। প্রয়োজনে আচমকা হানা দিয়ে বেআইনি সংযোগ কেটে দেবে পুরসভা।
কিন্তু বাস্তবে এই নির্দেশ পালন হয় না কেন? ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বললেন, ‘‘কী করে জল চুরি ধরব? রোজ নজরদারি করার লোক কোথায় পুরসভার!’’ দক্ষিণ কলকাতার ১০ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত অভিযোগ মেনে নিয়ে বললেন, ‘‘লুকিয়ে-চুরিয়ে আমার বরোয় এই কাজ চলছে। মেয়রকে জানিয়েছি। পাম্প চালু না থাকলে ধরাও যায় না, আর যত ক্ষণ না কারও জল বন্ধ হচ্ছে, কেউ অভিযোগও করতে আসেন না!’’ কিন্তু পুরসভাকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছিল তো আদালত? মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘নজরদারি চলে। তবে আরও দেখছি।’’
সেই নজরদারিতে কাজ হয় কি? জল-যন্ত্রণার চিত্র অবশ্য অন্য অভিজ্ঞতার কথাই বলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy