Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

দেব রাখি না দায়, বেদি ভাঙতে ফাঁপরে পুরসভা

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক জায়গায় আবার এমনও হচ্ছে যে, বেদি ভাঙার পরমুহূর্তেই সেখানে দেবতার মূর্তি বসিয়ে কেউ পুজো শুরু করে দিচ্ছেন।

দ্বিধা: গাছের গোড়া ঘিরে থাকা বাঁধানো বেদি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই স্থাপন করা হয়েছে শিবলিঙ্গ। লাউডন স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

দ্বিধা: গাছের গোড়া ঘিরে থাকা বাঁধানো বেদি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেই স্থাপন করা হয়েছে শিবলিঙ্গ। লাউডন স্ট্রিটে। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

এগোলেও ‘বিপদ’। পিছোলেও ‘বিপদ’!

শহর জুড়ে গাছের বাঁধানো বেদি ভেঙে ফেলতে ইতিমধ্যেই পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সেই বেদি ভাঙতে গিয়েই মুশকিলে পড়ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। গাছের নীচে কোথাও কেউ দেবতার মূর্তি বসিয়ে দিচ্ছেন, কোথাও আবার বেদি ভাঙার পরপরই সেখানে গজিয়ে উঠছে আস্ত মন্দির। ফলে গাছের বেদি নিয়ে কী করণীয়, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না পুরকর্মীদের একাংশ। এ দিকে, আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে শহরের সমস্ত গাছের বেদি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই কারণে এখন উভয়-সঙ্কটে পড়েছেন পুরকর্তারা।

তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক বেদির উপরেই রীতিমতো পুজোআচ্চা চলছে। কোথাও আবার দেবতার মূর্তি বসিয়ে গড়া হয়েছে অস্থায়ী মন্দির। অথচ, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত গাছের বেদিই ভাঙতে হবে। তা সত্ত্বেও বেদি ভাঙতে সাহস পাচ্ছেন না পুরকর্মীরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘বেদি ভাঙতে গেলে তো মন্দিরই ভেঙে ফেলতে হবে। কিন্তু সেটা কী করে করব! বিপদ তো আমাদেরই।’’ আর এক পুরকর্মীর কথায়, ‘‘অনেক জায়গাতেই রোজ পুজো হয়। সেখানে শাবল-গাঁইতি দিয়ে ভাঙতে গেলে তো ঝামেলা লেগে যাবে। বুঝতে পারছি না কী করব!’’

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক জায়গায় আবার এমনও হচ্ছে যে, বেদি ভাঙার পরমুহূর্তেই সেখানে দেবতার মূর্তি বসিয়ে কেউ পুজো শুরু করে দিচ্ছেন। যেমন লাউডন স্ট্রিটের এক জায়গায় গাছের বেদি ভাঙা হয়েছে। কিন্তু ভাঙার পরেই সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে একটি শিবলিঙ্গ! কেউ এসে সিমেন্টের গাঁথনিও করে দিয়েছেন! এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ভাঙার পরে মূর্তি বসলে তবু ঠিক আছে। যদিও সেটাও বেআইনি দখলদারি। সে ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে তবু বলা যাবে যে, আমরা ওই জায়গাটা ভেঙেছি। কিন্তু ভাঙার আগেই মূর্তি বসিয়ে দিলে তো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’’

এমনিতে গাছের বেদি ভাঙা নিয়ে পুরসভাকে ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট। আদালতের বক্তব্য, গাছের গোড়া কোথায় কোথায় বেআইনি ভাবে বাঁধানো হয়েছে, তা দেখা তো পুর আধিকারিকদের কাজ। কিন্তু পুর আধিকারিকেরা ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ সে দায়িত্ব পালন করেননি! ফলে ওই ভর্ৎসনা নিয়ে যথেষ্ট ‘চাপে’ রয়েছে পুরসভা। তার মধ্যে যোগ হয়েছে এই মন্দির-জুজু!

যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেদি ভাঙার ওই নির্দেশ দিয়েছে, সেই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, সমস্যার সমাধান পুরসভাকেই করতে হবে। কারণ, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৮৬৮টি গাছের বেদি ভাঙতে পেরেছে পুরসভা। সারা শহরেই আরও অজস্র গাছের বেদি রয়ে গিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলি ভেঙে পুরসভাকে একটি রিপোর্টও জমা করতে বলেছে হাইকোর্ট। সংস্থার তরফে পরিবেশকর্মী বনানী কক্বর বলেন, ‘‘মন্দির বা দেবতার মূর্তির জন্য যে গাছের বেদি ভাঙা যাচ্ছে না, এ সব তো আর হাইকোর্ট শুনবে না। ফলে এই সমস্যার সমাধান করে কী ভাবে গাছের বেদি ভাঙতে হবে, তার রূপরেখা পুরসভাকেই ঠিক করতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Concrete Structure Calcutta High Court Tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy