Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
kolkata municipal corporation

দুই প্রাক্তন কাউন্সিলরকে উপদেষ্টা করায় বিতর্ক পুরসভায়

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন দে ও মৌসুমী দে-কে পুরসভার রাস্তা ও সোশ্যাল সেক্টর বিভাগের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৭
Share: Save:

এক জন বিগত পুরভোটে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। অন্য জন, পুরভোটে লড়েনইনি। কলকাতা পুরসভার এ হেন প্রাক্তন দুই কাউন্সিলরকে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুরসভায় বিরোধীদের মতে, ওই প্রার্থীদের এ ভাবে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করার অর্থই হল, শাসকদলের কর্মীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেওয়া। যদিও পুরসভার এক মেয়র পারিষদের দাবি, কোনও নিয়মভঙ্গ হয়নি। বিভাগীয় কাজের গতি বাড়াতে মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতীতেও এ ভাবে উপদেষ্টা নিয়োগ হয়েছে।

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন দে ও মৌসুমী দে-কে পুরসভার রাস্তা ও সোশ্যাল সেক্টর বিভাগের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই মর্মে পুরসভার সচিব সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে দু’বারের কাউন্সিলর ছিলেন রতন দে। গত পুরবোর্ডে তিনি রাস্তা দফতরের মেয়র পারিষদও ছিলেন। গত পুরভোটে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় রতন ওই ওয়ার্ডে লড়ার সুযোগ পাননি। আবার ৫০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দু’বারের কাউন্সিলর মৌসুমী দে গত পুরভোটে বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এ হেন দুই প্রাক্তন কাউন্সিলরকে পুরসভা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে।

যা নিয়ে বিরোধীদের তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। পুরসভার আধিকারিকদের অনেকেই বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘মানুষের রায়ে পরাজিত এক জনকে ফের পুরসভায় ফিরিয়ে আনার অর্থ, গণতন্ত্রের প্রতি অসম্মান করা। এখানেই দলতন্ত্র প্রকট হয়।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘পুরসভার আর্থিক অবস্থা ভাল না। গত এক বছর ধরে অবসর নেওয়া পুরকর্মীরা পেনশনের টাকা হাতে পাচ্ছেন না। অথচ, এমন আর্থিক পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা নিয়োগ করায় পুরসভাকে মোটা অঙ্কের খরচ বহন করতে হবে। পরাজিত ও ভোটে লড়াই না-করা দু’জনকে যে ভাবে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ আধিকারিকদের দাবি, এত দিন কোনও বিভাগের উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হতেন প্রাক্তন কোনও আধিকারিক বা দক্ষ কেউ।

পুরসভা সূত্রের খবর, সুদূর অতীতে পুরভোটে না লড়ে ‘অল্ডারম্যান’ হিসাবে নিযুক্ত হয়ে পুরসভায় জনপ্রতিনিধি বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসার সুযোগ পাওয়া যেত। পুর আইন সংশোধন করায় ১৯৯০ সালের পরে ‘অল্ডারম্যান’ পদটি বিলুপ্ত হয়। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, পুরসভায় জনপ্রতিনিধি বা অন্য কোনও পদে নিযুক্ত হতে গেলে মানুষের রায়ে জিতে আসতে হবে।

যার প্রেক্ষিতে দু’টি প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, এটা কি আইনভঙ্গ হল না? দ্বিতীয়ত, মৌসুমী ও রতনকে পুরসভা স্বমহিমায় ফিরিয়ে এনে কি বর্তমান পুরবোর্ড সেই লুপ্ত প্রথা নতুন করে চালু করতে চাইছে? পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রাস্তা ও সোশ্যাল সেক্টর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। দফতর দু’টির কাজের স্বচ্ছতা এবং গতি বাড়াতেই মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’

প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন দে-র কথায়, ‘‘আগে রাস্তা বিভাগের মেয়র পারিষদের দায়িত্ব সামলেছি। শহরের রাস্তার উন্নয়নে কাজ করব। বিরোধীরা যা-ই বলুন। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’’ প্রাক্তন কাউন্সিলর মৌসুমী দে বলছেন, ‘‘এত বড় সম্মান ভাগ্য করে পাওয়া যায়। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা অবশ্যই পালন করব।’’

মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহের কথায়, ‘‘এতে নিয়মভঙ্গের কিছুই নেই। বিভাগীয় কাজের গতি বাড়াতেই মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতীতেও এ ভাবে উপদেষ্টা নিয়োগ হয়েছে। প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন আমিই তদানীন্তন পুরবোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলাম। বিরোধীরা তো সব সময়ে আদালতের কথা বলেন। তাঁরা মনে করলে আদালতে যেতে পারেন।’’

এ নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে একাধিক বার ফোন করা হলে তা বেজে গিয়েছে। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার উত্তর আসেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata municipal corporation KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy