শুধু দিল্লিই নয়, বায়ুদূষণের মানচিত্রে কলকাতার অবস্থানও খুব একটা উজ্জ্বল নয়।
ক্রমবর্ধমান নির্মাণ-বর্জ্যের দূষণ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার অবহিত কি না, তা নিয়ে বছর ছয়েক আগে লোকসভায় প্রশ্ন উঠেছিল। উত্তরে তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর জানিয়েছিলেন, দিল্লি-সহ দেশের মোট ছ’টি মেট্রো শহরের বায়ুদূষণের উৎসের নেপথ্যে ২২-২৩ শতাংশই যে নির্মাণ-বর্জ্যের দূষণ দায়ী— সে ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।
সেই দূষণ রুখতে সরকারি পদক্ষেপের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন জাভড়েকর। কিন্তু তার পরেও যে পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি, তা সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লির বায়ুদূষণের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকারের তরফে সমস্ত নির্মাণকাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশেই পরিষ্কার।
তবে শুধু দিল্লিই নয়, বায়ুদূষণের মানচিত্রে কলকাতার অবস্থানও খুব একটা উজ্জ্বল নয়। তাই দিল্লির পথে হেঁটে শীতের শহরে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপরে ভিত্তি করে নির্মাণকাজের উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি না, তা নিয়ে কলকাতা পুরসভায় আলোচনা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। যেমনটা দিল্লির ক্ষেত্রে ১৪-১৭ নভেম্বর পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ফসলের গোড়া পোড়ানোর পাশাপাশি বায়ুর গতি মন্থর থাকার কারণে বাতাসের অবনমন হবে এমনিতেই। সেই পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, তাই দিল্লি সরকারের তরফে সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনিতে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের মোট ১০টি শহরের মধ্যে দৈনিক নির্মাণ ও ভাঙা বর্জ্য উৎপাদনের নিরিখে কলকাতা রয়েছে তৃতীয় স্থানে— দিল্লি (প্রথম), চেন্নাই ও মুম্বইয়ের (যৌথ ভাবে দ্বিতীয়) পরেই।
সে কথা মাথায় রেখেই পুর আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠকে বসেছিলেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যেরা। প্রসঙ্গত, দু’বছর আগে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে বায়ুদূষণের মাত্রা কমাতে একটি উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি করেছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটিতে ছিলেন আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধি-সহ পুর আধিকারিকেরা।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক ওই বৈঠকেই শীতের শহরে নির্মাণস্থলের কাজে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক পদস্থ পুরকর্তা জানাচ্ছেন, এমনিতে নির্মাণস্থলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই পুরসভার কিছু নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তার পরেও দেখা যাচ্ছে যে, অনেক জায়গাতেই সেই নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, না কি শীতের নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হবে— সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটি নিজেদের সুপারিশ চূড়ান্ত আকারে কিছু দিনের মধ্যেই জমা দেবে। সেখানেই বোঝা যাবে, দিল্লির মতো কলকাতাতেও শীতে নির্মাণকাজের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে।’’ নির্মাণস্থলের দূষণের পাশাপাশি যানবাহনের ধোঁয়া, ফুটপাতের দোকানে জ্বালানির দূষণ-সহ একাধিক উৎসের দূষণ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়গুলিও ওই বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে।
পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, নির্মাণকাজ চলার সময়ে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার (পিএম১০) পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় আড়াই কোটি টন নির্মাণ-বর্জ্য তৈরি হয়। সেই বর্জ্য থেকে দূষণ কমানোর জন্য ২০১৬ সালে কেন্দ্রের তরফে ‘কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোলিশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুল্স, ২০১৬’ জারি করা হয়। তার পরে ‘ডাস্ট মিটিগেশন’ নির্দেশিকাও জারি করেছিল কেন্দ্র। সেখানেও নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের কাজ এবং ভাঙাভাঙির কাজের সময়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছিল।
দেশের একাধিক শহরে দূষণের উৎস খুঁজতে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির এক প্রাক্তন সদস্য জানাচ্ছেন, শহরভিত্তিক দূষণ প্রতিরোধের পরিকল্পনায় তারতম্য থাকলেও দূষণের উৎস মোটামুটি সমস্ত জায়গাতেই এক। গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণস্থলের দূষণ, রাস্তার ধুলো— এগুলিই মূলত দূষণের প্রধান উৎস। তাঁর কথায়, ‘‘এখন যানবাহন চলাচল হঠাৎ করেই বন্ধ করা বা সেখানে বড়সড় কোনও পরিবর্তন আনা কলকাতার মতোই অনেক শহরে সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে নির্মাণস্থলের দূষণ এবং জল ছিটিয়ে রাস্তার ধুলোর দূষণ কমানো অবশ্যই সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy