ভোটারের মুখে মাস্ক নেই। তবে নিয়ম মেনে চলছে তাঁর তাপমাত্রা পরীক্ষা। রবিবার গার্ডেনরিচের একটি বুথের বাইরে। ছবি রণজিৎ নন্দী
অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হয়নি। তার মধ্যেই কলকাতা দখলের লড়াই! এবং কলকাতা পুরসভার ক্ষমতা দখলের সেই আস্ফালনে পিছনের সারিতে পড়ে রইল সচেতনতা!
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ, ওমিক্রনের আশঙ্কার মধ্যেই রবিবারের পুরভোটে মহানগরীর উত্তর থেকে দক্ষিণে অতিমারির স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার ছবিই প্রকট হয়ে দেখা দিল। রাস্তায়, ভোটকেন্দ্রে কোভিড বিধি শিকেয় তুলে ঘুরলেন রাজনৈতিক নেতানেত্রী, সাধারণ মানুষও। সব দেখে চিকিৎসক মহলের আশঙ্কা, ‘‘শহরের পুরভোটের পরে আবার করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল। এখনও শতাধিক পুরসভার ভোট বাকি। কে জানে, কী হবে রাজ্যের বাকি অংশের!’’
করোনা বিধির মূল তিনটি কথা হল, মাস্ক পরা, নিয়মিত স্যানিটাইজ়ার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং সর্বত্র পরস্পরের মধ্যে অন্তত ছ’ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। নির্বাচন কমিশনও এই ত্রিবিধ বিধি মানার উপরে জোর দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা আর একটি করে পলিথিনের দস্তানা ধরিয়ে দেওয়া ছাড়া করোনা বিধি মেনে চলার ছবি সে-ভাবে চোখে পড়েনি। ভোটারদের লাইনে দূরত্ব-বিধি উধাও। কারও মাস্ক থুতনিতে ছুলছিল তো কারও বুকপকেটে। এবং বিধি না-মানার সেই তালিকায় শুধু ভোটার নন, রয়েছেন পুলিশকর্মী থেকে রাজনীতির লোকজনও।
বিধিভঙ্গের জন্য প্রশাসনকে কোথাও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ভবানীপুরের একটি বুথের সামনে দাঁড়ানো এক প্রবীণ ভোটার বললেন, ‘‘পুলিশকর্মীরা নিজেরাই তো মাস্ক পরেননি। ওঁরা আমাদের আর কী বলবেন?’’ গার্ডেনরিচের একটি ভোটকেন্দ্রে এক ভোটারের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছিলেন এক তরুণী কর্মী। তিনি মাস্ক পরে থাকলেও যুবক ভোটারের মুখে কোনও আবরণ নেই। আবার বন্দর এলাকার বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে কর্তব্যরত পুলিশ ও ভোটকর্মীরা আবার সটান বলে দিলেন, ‘‘অনেক বার বলা সত্ত্বেও কেউ কথা শুনছেন না। কী করব!’’
দক্ষিণ কলকাতার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দুয়া গার্লস হাইস্কুলের বাইরে জটলায় অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না। বাঘা যতীন মোড় অবরোধকারী সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদেরও অনেকের মুখে দেখা মেলেনি মাস্কের। বালাই ছিল না দূরত্ব-বিধিরও। এক সিপিএম-সমর্থক বললেন, ‘‘প্রতিবাদ-আন্দোলনের সময় এত কিছু কি মাথায় রাখা যায়!’’ চেতলা এলাকায় দূরত্ব-বিধির তোয়াক্কা না-করেই মন্ত্রী তথা প্রার্থী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে দেখা যায় অনেককেই।
বিধি লঙ্ঘনের একই ছবি উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও। শ্যামপুকুর বিধানসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওরিয়েন্টাল স্কুলে শুধু ভোটার নয়, মাস্ক ছাড়াই কাজ করতে দেখা গিয়েছে ভোটকর্মীদেরও। তাঁরা নিয়ম মানছেন না কেন? পকেট থেকে মাস্ক বার করে পরার ফাঁকে এক কর্মী বললেন, ‘‘সকাল থেকে কাজ করছি। সারা ক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারছি না।’’ বাগবাজার, বেলেঘাটার ধনদেবী খন্না রোড-সহ বিভিন্ন জায়গায় বুথের বাইরে মাস্ক দেওয়া হলেও ভিতরে ঢুকেই অনেকে তা পকেটস্থ করেছেন। শিয়ালদহের টাকি স্কুলে সকালে মাস্ক নিয়ে কড়াকড়ি চোখে পড়লেও বিকেলে তা শিথিল হয়ে যায়।
বিধিভঙ্গের বাক্সেই ভোটের স্রোত দেখে চিকিৎসক শিবির বলছে, ‘বিধি শিথিলের ঠেলায় করোনা শক্তিশালী হল। এ বার তার ফলের অপেক্ষা!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy