রাজাবাজার এলাকায় ভোটের প্রচারে সাহিনা জাভেদ। নিজস্ব চিত্র।
‘দিওয়ারে উঁচি হ্যায়, গলিয়াঁ হ্যায় তঙ্গ / লম্বি ডগর হ্যায়, পর হিম্মত হ্যায় সঙ্গ’!
তাঁর মোবাইলের রিংটোন হুবহু মিলে যাচ্ছে চলার পথের সঙ্গে। পাড়ার তস্য গলিতে হাঁটতে হাঁটতে বাধার প্রাচীর টপকানোর স্বপ্ন দেখছে রাজাবাজারের মেয়ে। তবে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সাহিনা জাভেদকেও এ যাত্রায় উৎসাহে পিছনে ফেলে দিয়েছেন রুহি শেখ, মৌসুমী বারিক বা শামা পরভিনরা।
‘সাহিনাদি ভোটে দাঁড়ানো মানে তো আমরাই প্রার্থী’, ভোট-প্রচারে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন সাহিনার গড়ে তোলা নারী-মঞ্চে গাড়ি চালাতে শেখা মৌসুমী বা মেয়েদের ফুটবল আসরের উদ্যোক্তা শামা, রুহিরা। ‘রাজনীতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়, চট করে রেগেমেগে যাস না’ সাহিনাকে ফোনে, চ্যাটে আবার সামলাচ্ছেন আর এক প্রিয় বন্ধু, নিউ ইয়র্কের কালো মেয়ে টিফ্যানি। মেয়েদের ক্ষমতায়নের কাজ করার সুবাদে আমেরিকার বিদেশ দফতরের লিডারশিপ প্রকল্পে যোগ দিতে গিয়ে ওঁর সঙ্গে ভাব সাহিনার।
এ মেয়ের নিন্দুকদেরও ভারী মজা! রক্ষণশীল মহল্লায় গৃহহিংসার প্রতিবাদ করেছিস, সবার সমানাধিকারের লড়াইয়ে হিজাবধারিণী কিশোরীদের ফুটবল খেলায় উৎসাহ দিস, এ বার রাজনীতির অঙ্ক কেমন সামলাবি দেখে নেব! বরাবরের ছক-ভাঙা সাহসিনী দৃঢ় স্বরে বলছেন, “ভোটব্যাঙ্কের নিকুচি করেছে! এ মহল্লার মেয়েদের কথা ভেবেই আমার রাজনীতি করা। নেতারা মেয়েদের ছোট করে কথা বলে, ধর্ষণের মতো অপরাধকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে, এ সব দেখেই আমার পলিটিক্সের রোখ চেপে গেল!” সাহিনা মানেন, এ দেশে নীতি নির্ধারণের জায়গায় আসতে রাজনীতির বিকল্প নেই। “তবে অনেক মেয়ের মতো স্বামী বা বাবার লেজুড় নয়, রাজনীতিতে স্বাধীন মুক্ত স্বর হয়ে ওঠা বেশি জরুরি”, বলতে ভুলছেন না তিনি।
এক সময়ে মেয়েদের ফুটবল প্র্যাক্টিসের মাঠ দখল করতে পাড়ার মাতব্বরদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন, তিনিই বরাবর জাতধর্মের ঊর্ধ্বে সবাইকে দেখতে অভ্যস্ত। পুরসভার স্কুল শিক্ষিকা মা শাগুফতা আখতারিকে দেখেছেন নিরামিষাশী তামিলভাষী বন্ধুর জন্য সমান যত্নে সয়াবিনের বিরিয়ানি রাঁধতে, শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতিতা হিন্দু বাঙালি বন্ধুকে নিজেদের গাদাগাদির সংসারে ঘর ছেড়ে দিয়ে তাঁর সব রকমের অসুবিধার ব্যাপারে সজাগ! সাহিনা বলেন, “ধর্ম মেশানো রাজনীতি দু’চক্ষে দেখতে পারি না! আমি ব্যক্তি জীবনে নিয়ম করে নমাজ পড়ি, তবে সেটা দেখিয়ে ভোট চাইতে যাব না। আবার বাংলা মিডিয়াম স্কুলের বন্ধুদের বাড়ির সরস্বতী পুজোয়
কত মজা করেছি, সেটাও আমার ব্যক্তিগত বিষয়।”
তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের অয়ন চক্রবর্তী, সিপিএমের ইজাজ আহমেদ, বিজেপির অমিয় হাজরাদের নিয়ে ভাবিত নন। নিজের মতো ভেবে এলাকার আগামী দিনের জীবনযাত্রার ‘রোডম্যাপ’ ছকে নিয়েছেন সোশ্যাল ওয়ার্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ৩৩ বছরের তরুণী। রাজাবাজারের বিভিন্ন মহল্লা, চাউলপট্টি, হরিনাথ দে রোডের বস্তি, যোগীপাড়া— সর্বত্র পরিচ্ছন্ন জলের অভাব, নিকাশির সমস্যা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় চেনেন স্থানীয় ‘দুধ কোঠি’র তরুণী। সাহিনা বলছেন, “কিছু জলের এটিএম করতে চাই। আর বায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ঘূর্ণিঝড় ও অতিমারির থেকে শিক্ষা নিয়ে কয়েকটি আশ্রয়-শিবির তৈরিও জরুরি।”
কিন্তু শাসক দলের সঙ্গে থাকলেই কি কাজের বেশি সুবিধা হত না? রাজনীতির তরুণ রক্ত তা মানেন না! “আমি ছোট থেকে কংগ্রেস করি। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এ রাজ্যে একাধিক দলের শক্তিশালী হওয়াটাও জরুরি!” ঘরের মেয়ের সাহসী দৌড় দেখছে রাজাবাজার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy