বিমর্ষ: ল্যান্ডার বিক্রমের খবর না মেলায় হতাশ পড়ুয়ারা। শুক্রবার রাতে, বিআইটিএমে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
রাত ১টা ৫০ থেকে ১টা ৫৩ মিনিট। হৃৎস্পন্দনটাও যেন শোনা যাচ্ছিল! একটি মেয়ে তো ভয়ে চোখই খুলছিল না। কোন রাজ্য থেকে সে এসেছিল কে জানে। আশপাশের সবাই কত করে বলল, তবু তাকাল না! তার পর কী যে হল!
শনিবার দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় ফেরার বিমানে বসে কথাগুলো বলছিল বেলেঘাটার সৌমিল সেন। দেশের ৭৪ জন পড়ুয়ার মতোই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ইসরোর ‘স্পেস থিয়েটারে’ বসে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযান প্রত্যক্ষ করার ডাক পেয়েছিল কলকাতার এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র সৌমিলও। তবে শেষ মুহূর্তের গোলযোগে বিষাদের চেয়ে মহাকাশ রহস্য সন্ধানের আঁতুড়ঘরে বসে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাসই এ দিন বেশি করে ধরা পড়ল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের গলায়। বলল, ‘‘কাল একটা রাতে কত কী হয়ে গেল। কত কিছু দেখলাম। বাড়ি ফিরেই আগে মাকে সব বলতে হবে।’’
পরীক্ষা থাকায় সৌমিলের চন্দ্রযান-অভিযান অবশ্য অর্ধেক দিন পিছিয়ে শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাকি পড়ুয়ারা শুক্রবার সকালেই বেঙ্গালুরু পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সৌমিলের পরীক্ষা ছিল বৃহস্পতিবারও। তাই বাবার সঙ্গে কলকাতা থেকে বিমানে বেঙ্গালুরু পৌঁছতে শুক্রবার দুপুর পেরিয়ে যায় তার। বিমানবন্দর থেকে গেস্ট হাউজ় পৌঁছে দ্রুত খাওয়া সেরে ইসরোর বাসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে তাকে পৌঁছতে হয় ‘কন্ট্রোল রুমে’। তার বাবা সাগ্নিক অবশ্য গেস্ট হাউজ়েই থেকে গিয়েছিলেন। সৌমিল বলে, ‘‘ওখানে পৌঁছতেই মোদী স্যরের সই করা বই দিয়েছে। টি-শার্টও দিয়েছে। এর পরে সাড়ে আটটা পর্যন্ত আমাদের ডিনার চলে। তার পরে সবাই মিলে বসে যাই চন্দ্রযান দেখতে। তার মধ্যেই মোদী স্যর চলে আসেন।’’
পর্দায় যখন যেমন দেখিয়েছে, তা ঘিরেই উত্তেজনার পারদ ওঠানামা করেছে সৌমিলদের। প্রথম বার জায়েন্ট স্ক্রিনে চাঁদের মাটি দেখাতেই প্রবল হাততালি। কলকাতার ছাত্রটি জানায়, রাত দেড়টা থেকে কেউ কেউ উত্তেজনায় চোখ বুজে ফেলে। কেউ আবার সামনে রাখা কাগজে পেন দিয়ে আঁকতে শুরু করে। তার পাশের এক ছাত্র আবার হঠাৎ কাগজে এক থেকে একশো পর্যন্ত লিখতে শুরু করে। শেষে যখন বিরাট স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে গোটা ঘরে স্তব্ধতা ছড়িয়ে দেয়, তখনও প্রথম শব্দ শোনা যায় পড়ুয়াদের মধ্যে থেকেই। সকলের তখন প্রশ্ন, ‘‘বিক্রম পৌঁছে গিয়েছে? কী হল!’’
১০ মিনিটে ২০টা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ডাক পাওয়া সৌমিলও একই প্রশ্ন করেছেন বাবার কাছে গেস্ট হাউজ়ে ফিরে। প্রথমে কথা ছিল, চাঁদে চন্দ্রযান নেমে যাওয়ার পরে মোদী ভাষণ দেবেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ পড়ুয়াদের বাসে করে গেস্ট হাউজ়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু, রাত তিনটেতেই পড়ুয়াদের নিয়ে গেস্ট হাউজ়ের দিকে রওনা দেয় বাস। বাবার কাছে ফিরে ঘুম জড়ানো চোখে সৌমিলও জানতে চেয়েছে, ‘‘শেষ মুহূর্তে কী হল বাবা?’’
ইসরোর বিজ্ঞানীরা তো বটেই এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে গোটা দেশ। বেঙ্গালুরু ছাড়ার আগে বিমানের সিট বেল্ট বেঁধে নিয়ে সৌমিল বলল, ‘‘আমাদের প্লেনও এ বার উড়বে। বিক্রমের জন্য খারাপ লাগছে। তবে কত কী যে, দেখলাম! মাকে, বন্ধুদের সব বলতে হবে তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy