প্রতীকী ছবি।
পরিবারের কেউ কিডনি দিলে ভাল। তা না হলে কারও দু’টি কিডনি বিকল হওয়ার পরে অঙ্গদানের মাধ্যমে বাইরে থেকে কিডনি পেতে হলে অন্তত দু’বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও কারণে মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরে তাই অঙ্গদানের প্রবণতাকে আরও বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেউ কিডনি চেয়ে নাম নথিভুক্ত করালে এখন প্রায় চারশো জনের পরে নাম জমা পড়ছে। এই রাজ্যে সপ্তাহে দু’টি করে কিডনি পাওয়া গেলে মাসে আটটি, বছরে প্রায় একশোটি কিডনি পাওয়া যাচ্ছে। চারশো জনের পরে নাম থাকলে কবে কিডনি পাওয়া যাবে তা সহজেই অনুমেয়। দেশের ক্ষেত্রে নাম নথিভুক্ত হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার জনের পরে। সে ক্ষেত্রেও দু’বছরের আগে কিডনি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দিব্যি হাঁটাচলা করছিলেন, শরীরে কোনও উপসর্গই ছিল না ২৮ বছরের অনির্বাণ দত্তের। দার্জিলিঙে সরকারি উচ্চপদে কর্মরত। আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি আচমকা দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। দার্জিলিঙে চিকিৎসককে দেখিয়ে চশমা নেন। কিন্তু, তিন দিন পরে আবার চোখের সামনে অন্ধকার।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত সশস্ত্র পুলিশের ইনস্পেক্টর
আরও পড়ুন: বিসর্জনের আগেই ভস্মীভূত এফডি ব্লকের মণ্ডপ, প্রতিমা
চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি রক্তচাপ মেপে দেখেন উপরেরটা ২০০। সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ দেওয়া হয়। অনির্বাণকে বলা হয় কলকাতায় গিয়ে বিশেষজ্ঞদের দেখাতে। সঙ্গে কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শও দেওয়া হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আসার পরে অনির্বাণ সেই পরীক্ষা করান এবং দেখা যায় তাঁর দু’টি কিডনিই মারাত্মক ভাবে জখম। অনির্বাণের বন্ধু অনন্যা রায় জানিয়েছেন, কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর ডায়ালিসিস হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দু’টি কিডনিই খারাপ। নতুন কিডনি চাই। ছোটবেলায় প্রস্রাব করতে গিয়ে আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে সেই সমস্যা স্কুলে পড়াকালীনই ঠিক হয়ে যায়। চিকিৎসকদের সন্দেহ, তবে থেকে কিডনিতে সংক্রমণ থেকে যায় এবং দু’টি কিডনিকেই বিকল করে দেয়। অথচ এত দিন অনির্বাণের সাধারণ জীবনযাপন করতে কোনও অসুবিধাই হচ্ছিল না।
অনন্যা জানিয়েছেন, বাড়িতে মা ও মামিমার সঙ্গে অনির্বাণের রক্তের গ্রুপ মিলে গেলেও দু’জনেরই শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। অনন্যার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনায় বা অন্য কোনও কারণে মস্তিস্কের মৃত্যু হলেও তো সেই ব্যক্তির অঙ্গ অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আমি ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লানটেশন অর্গানাইজেশন (নোটো)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। সেখানে নাম নথিভুক্ত করতে বলছে। এ নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে কিডনির জন্য লাইনটা সারা দেশে ছ’হাজারের কাছে পৌঁছেছে। এখন নাম নথিভুক্ত করলে কিডনি পেতে দুই থেকে আড়াই বছর লাগবে। আত্মীয়দের কেউ দিতে না পারলে কী ভাবে বাঁচবে অনির্বাণ?’’
এ প্রশ্নের উত্তর নেই চিকিৎসক অর্পিতা রায়চৌধুরীর কাছে। এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজির প্রধানের কথায়, “এই লকডাউনের মাঝে মার্চ থেকে অক্টোবরের মধ্যে পরিবার থেকে পাওয়া যায়নি এমন মাত্র চার জনের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। অথচ পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাটা কম নয়। এ ছাড়াও অন্য কারণে মস্তিষ্কের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু, অঙ্গদানে এগিয়ে আসছেন না বেশির ভাগ মানুষ।”
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে অনাত্মীয়ের কিডনি নেওয়া যায় না। পরিবারের নিকটাত্মীয় ছাড়া শুধুমাত্র সদ্য মৃতের শরীরের কিডনিই ভরসা।নেফ্রোলজিস্ট অভিজিৎ তরফদারও অঙ্গদানের উপরে জোর দিয়ে বলেন, “অন্যান্য রাজ্যে তুলনায় বেশি হচ্ছে। আমাদের এখানে এখনও টাকার বিনিময়ে অনাত্মীয়দের কাছ থেকে কিডনি নেওয়ার চল রয়েছে। সেটা প্রথমে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দুই, তালিকায় পিছনে নাম থাকলেও সেই তালিকা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে যুবা বয়সের রোগীর এক জন বয়স্ক রোগীর থেকে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা।”
দেহদান আন্দোলনের কর্মী ব্রজ রায়ও মনে করেন সারা বিশ্বেই অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই সচেতনতার অভাব আমাদের মধ্যে আরও বেশি। পথ দুর্ঘটনা এবং মস্তিস্কের মৃত্যুর সংখ্যা যত হচ্ছে, সেই তুলনায় অঙ্গদানের সংখ্যা কম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy