প্রতিবাদ জারি যাদবপুরে। মিছিলে পড়ুয়ারা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
শুক্রবার রাতের উত্তেজনার রেশ যাদবপুরকে ছুঁয়ে রইল শনিবারও।
শুক্রবার রাতে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে অশান্তির মধ্যেই বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র চার সদস্যের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে শনিবারও উত্তপ্ত ছিল যাদবপুর। এবিভিপি-র বিরুদ্ধে এ দিন মিছিলও করেন সেখানকার পড়ুয়ারা। ইতিমধ্যেই তাঁদের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পাল্টা অভিযোগ করেছে এবিভিপি-ও। আর যাদবপুরে ফের অশান্তির ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে গোটা ঘটনা জানতে চেয়ে রিপোর্ট তলব করেছেন।
রাজ্য বিজেপি বেশ কিছু দিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘দেশদ্রোহীদের আখড়া’ বলে অভিহিত করে প্রচারে নেমেছিল। এক সময় রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ক্ষমতায় থাকলে যাদবপুরে ঢুকে দেশবিরোধীদের কলার ধরে বার করে দিতাম।’’ শুক্রবার রাতের পরে সেই তত্ত্বে ফিরে তিনি বুঝিয়েছেন, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর মতো যাদবপুর নিয়েও অন্য পথে হাঁটবেন তাঁরা। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন দিলীপবাবু। এবিভিপি-র রাজ্য সভাপতি সুবীর হালদার আবার বলেছেন, ‘‘যাদবপুরের পড়ুয়াদের পাল্টা ট্রিটমেন্ট-এর ব্যবস্থা হচ্ছে!’’
সুরঞ্জনবাবু অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি শুধু রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে দায়বদ্ধ।’’ যে রাজ্যপাল এ দিনই সংবাদ সংস্থার কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উৎকর্ষ কেন্দ্র ছিল। তা এখন অশান্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। তাঁদের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।’’ আচার্যের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে জানিয়ে সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘যা যা ঘটেছে, সব জানিয়ে আচার্যের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি।’’
শুক্রবার রাতে উপাচার্য নিজে ক্যাম্পাসে গিয়ে হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি ঘোরালো হতো বলে মনে করছেন অনেকেই। শ্লীলতাহানির অভিযোগে ‘আটক’ এবিভিপি-র চার সদস্যকে তিনিই পুলিশের হাতে তুলে দেন। উপাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘আমি সর্বদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছি।’’ কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যলয়ে পঠনপাঠন ও গবেষণার উন্নত মান অটুট রয়েছে বলেও এ দিন উপাচার্য মন্তব্য করেন।
নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউটে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ছবি: সুমন বল্লভ।
যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘জাতীয়তাবোধে’ উদ্বুদ্ধ করতেই ‘বুদ্ধ ইন আ ট্রাফিক জ্যাম’ নামে ছবিটি দেখানোর আয়োজন করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে বিজেপি। ছবিটিতে অতি-বাম সংগঠনগুলির তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে পড়ুয়াদের মগজধোলাইয়ের বিষয়টি উঠে এসেছে বলে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন ছবির পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
অনেকেই বলছেন, ছবিটির মধ্যে দেশ জুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের প্রতিফলন রয়েছে। জেএনইউ ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ উমর খালিদ এ দিনই ফেসবুকে যাদবপুরের প্রতিবাদীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বিজেপি তথা এবিভিপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তাদের মতাদর্শ ঢোকানোর চেষ্টা করছে সঙ্ঘ পরিবার।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘এ হল সাম্প্রদায়িক শক্তির বিশৃঙ্খলা তৈরির ছক।’’
যাদবপুরের প্রাক্তনী সংসদ প্রথমে ছবিটি ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে দেখানোর অনুমতি দিয়েও তা প্রত্যাহার করে নেয়। বিজেপির দাবি, এর পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাত রয়েছে। যা উড়িয়ে উপাচার্য জানান, ওই হলে সিনেমা দেখানোর বিষয়টা পুরোপুরি প্রাক্তনী সংসদের এক্তিয়ারে। এই নিয়ে কেন বিভ্রান্তি ছড়াল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
শুক্রবার রাতের ঘটনা নিয়ে পুলিশ এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। লালবাজার সূত্রে খবর, যাদবপুরের ডিনের তরফে অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ক্যাম্পাসে ঢুকেছিলেন এবিভিপি সদস্যেরা। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জোরালো তথ্যপ্রমাণ জোগাড় না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ কিছুটা ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy