Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

খুলল কালীঘাট, দূরত্ব-বিধি মেনে পুজো ভক্তদের

বর্তমান অতিমারির সময়ে সামনের সারিতে থেকে লড়ছেন যে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা, তাঁদের সুরক্ষার জন্য বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা করলেন কলকাতা পুরসভার চিকিৎসক সুজাতা চট্টোপাধ্যায়।

নিয়ম: দূরত্ব বজায় রেখে, স্যানিটাইজ়েশন টানেলের মধ্যে দিয়ে কালীঘাট মন্দিরে ঢুকছেন দর্শনার্থীরা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিয়ম: দূরত্ব বজায় রেখে, স্যানিটাইজ়েশন টানেলের মধ্যে দিয়ে কালীঘাট মন্দিরে ঢুকছেন দর্শনার্থীরা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৪:১০
Share: Save:

মন্দিরে একসঙ্গে ঢুকে মাতৃমূর্তি দর্শন করতে দেওয়ার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের কাছে কাকুতিমিনতি করছিলেন নবদম্পতি। কিন্তু অফিসারেরা নাছোড়বান্দা, কিছুতেই দু’জনকে একসঙ্গে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। অগত্যা দূরত্ব-বিধি বজায় রেখেই দর্শন সারলেন ওই দম্পতি। আবার বর্তমান অতিমারির সময়ে সামনের সারিতে থেকে লড়ছেন যে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা, তাঁদের সুরক্ষার জন্য বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা করলেন কলকাতা পুরসভার চিকিৎসক সুজাতা চট্টোপাধ্যায়।

লকডাউনে প্রায় ১০০ দিন বন্ধ থাকার পরে বুধবার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে কালীঘাট মন্দির। সেখানেই এ দিন দেখা গেল এমন টুকরো-টুকরো ছবি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রসাদ, শাঁখা-সিঁদুর, শালপাতা বা ফুল নিয়ে কোনও দর্শনার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গর্ভগৃহে প্রবেশও ছিল নিষিদ্ধ। গর্ভগৃহের সামনের বারান্দা থেকেই মাতৃমূর্তি দর্শন করেছেন ভক্তেরা।

এ দিন সকাল ছ’টায় সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। তার আগে থেকেই দীর্ঘ লাইন পড়ে ভক্তদের। প্রবেশপথ দু’নম্বর গেটে তৎপর ছিলেন পুলিশকর্মী ও মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরা। গেটের বাইরে জীবাণুনাশক সুড়ঙ্গে পা দিতেই মাথার উপরে পড়েছে জীবাণুমুক্তকরণ রাসায়নিক। তার পরে দেহের তাপমাত্রা মেপে দর্শনার্থীদের ঢোকানো হয়েছে। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে তাঁদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। মন্দিরের ভিতরেও একই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে প্রতিমা দর্শন। দর্শনার্থী ও পুরোহিতদের মুখে ছিল মাস্ক। গেট থেকে গর্ভগৃহের সিঁড়ির মেঝে পর্যন্ত লেখা ছিল, ‘মেনটেন সেফ ডিসট্যান্স’। মন্দির কমিটি সূত্রের খবর, পাঁঠা বলিও হয়েছে এ দিন।

কালীঘাট মন্দিরে মূলত পাণ্ডাদের হাত ধরে পুজো দেওয়াই রীতি। যজমান ধরে পুজো করানোর জন্য সকাল থেকেই মাঠে নেমেছিলেন পাণ্ডারা। কিন্তু, মন্দিরে তাঁদের প্রবেশ নিষেধ। তা সত্ত্বেও তাঁরা হাল ছাড়েননি। পুলিশের চোখ এড়িয়ে মন্দিরের বাইরে ছোট্ট মূর্তিতে প্রসাদ ও ফুল দিয়ে একেবারে নিজস্ব যজমানদের দিয়ে পুজো করিয়েছেন তাঁদের অনেকেই। দক্ষিণাও আদায় করেছেন।

মন্দির কমিটি এবং সেবায়েত কাউন্সিলের কর্তাদের দাবি, ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে এ দিন দর্শন সফল হয়েছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ভক্ত মাতৃপ্রতিমা দর্শন করেছেন। যদিও ফুল-প্রসাদ নিয়ে কাউকে মন্দিরে ঢুকতে না-দেওয়ায় আক্ষেপ যাচ্ছে না ওই চত্বরে ফুল-পেঁড়ার পসরা সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের। দিনের শেষে সকলেই একটাই কথা, কয়েক হাজার টাকার ফুল ও প্রসাদী পেঁড়া ফেলে দেওয়া ছাড়া গতি নেই।

আরও পড়ুন: শুধু জরিমানা নয়, মেট্রোয় থুতু ফেললে কঠোর দাওয়াই

কাকভোরে পেঁড়া ও ফুল নিয়ে দোকান খুলেছিলেন শিবানী দাস। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অনেকটাই কমে এসেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। শিবানী বললেন, ‘‘একটাও পেঁড়া বিক্রি হয়নি। প্রায় হাজার দুয়েক টাকার পেঁড়া নষ্ট হল। একই কথা ফুল ব্যবসায়ীদের। আমপানের পরে এমনিতেই ফুলের দাম আগুন। তার উপরে একটিও মালা বিক্রি না-হওয়ায় তাঁদের মাথায় হাত।

তবে মূল মন্দির এবং মন্দির চত্বর জীবাণুমুক্ত করা হলেও সংক্রমণের আশঙ্কায় ভুগছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ভক্তেরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন। দর্শন শেষ করে বেরিয়ে মন্দিরের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই স্থানীয়েরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত। স্থানীয় ক্লাবের তরফে মন্দিরের আশপাশে রাসায়নিক ছড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে।

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, সকালে ৬-১২টা এবং বিকেলে ৪-৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মন্দির। মন্দির কমিটির তরফে কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘প্রথম দিন দর্শনার্থীর সংখ্যা কম ছিল। বিধি মেনে সকলে মা-কে দর্শন করেছেন। ধীরে ধীরে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। সব ব্যবস্থাপনার দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।’’ মন্দির কমিটির তরফে সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূলত মন্দির এবং মন্দির চত্বর জীবাণুমুক্ত করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই কাজের জন্য যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসায়নিক মজুত থাকে, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy