Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Junior Doctor Hunger Strike

পুজো দেখার পাশাপাশি সপ্তমীর মহানগর নামল প্রতিবাদেও

ষষ্ঠীর মতো এ দিনও ভিড় টেনেছে উত্তর ও দক্ষিণের বড় পুজোগুলি। সন্ধ্যার পরে অবস্থা এমনই হয় যে, পুজোর পাসের লাইনেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।

র্মতলায় আমরণ অনশন মঞ্চে (সপ্তমীর দিন) বিভিন্ন চিত্র l অনশন মঞ্চে হাজির সাধারণ মানুষরা, বড়দের সঙ্গে চিন্তিত ও একটু দেখার চেষ্টা শিশুরও।

র্মতলায় আমরণ অনশন মঞ্চে (সপ্তমীর দিন) বিভিন্ন চিত্র l অনশন মঞ্চে হাজির সাধারণ মানুষরা, বড়দের সঙ্গে চিন্তিত ও একটু দেখার চেষ্টা শিশুরও। —ফাইল চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১৬
Share: Save:

ষষ্ঠীর দিন উৎসবের সঙ্গেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল শহর। উৎসব এবং প্রতিবাদের সেই রেশ নিয়েই ষষ্ঠীর রাত শেষে শুরু হয়েছিল সপ্তমীর সকাল। দেখা গেল, রোদ ও মেঘের লুকোচুরি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই রাজপথে ঢল নেমেছে আমজনতার। রেস্তরাঁর সামনে দীর্ঘ লাইন। মণ্ডপে মণ্ডপে জমে উঠেছে আড্ডা। পরের দিকে বিকেল গড়িয়ে রাত যত বেড়েছে, বিভিন্ন পুজোয় দর্শনার্থীদের ভিড়ও তত বেড়েছে। তবে, উদ্‌যাপনের পাশাপাশি প্রতিবাদের ছবি দেখা গিয়েছে সপ্তমীতেও।

তিথি মেনে বৃহস্পতিবার সকাল সকাল মণ্ডপে মণ্ডপে সপ্তমীর পুজো শুরু হলেও ছুটির আমেজে রাস্তাঘাট সেই সময়ে ছিল কার্যত ফাঁকা। ষষ্ঠীতে সারা রাত জাগার পরে অনেকেরই সপ্তমীর সকাল শুরু হয়েছিল কিছুটা দেরিতে। রাস্তায় তখন ছিল হাতে গোনা কিছু গাড়ি। যদিও বেলা বাড়তেই বদলাতে থাকে শহরের উত্তর এবং দক্ষিণের চিত্র। বেলার দিকে ভিড়ের বহর দেখে অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এত ক্ষণ এঁরা ছিলেন কোথায়? পিল পিল করে পুজো জনতা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে। ঠেলা-গুঁতো খেতে খেতেই গা-হাত-পা ব্যথা হওয়ার জোগাড়!’’

ষষ্ঠীর মতো এ দিনও ভিড় টেনেছে উত্তর ও দক্ষিণের বড় পুজোগুলি। সন্ধ্যার পরে অবস্থা এমনই হয় যে, পুজোর পাসের লাইনেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। হাতিবাগান সর্বজনীনের পাসের লাইনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ বললেন, ‘‘ঘুরে ঘুরে পাসের লাইন খুঁজতেই নাজেহাল অবস্থা। যদিও বা সেই লাইনের দেখা মিলল, সেখানেও প্রবল ভিড়। এর পর থেকে রাতে বেরোনোর ভুল আর করব না।’’ এ দিন বিকেলের পর থেকে ভিড় বেড়েছে উত্তরের কলেজ স্কোয়ার এবং সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে। শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেই অধিকাংশ মানুষ এই দুই মণ্ডপের দিকে পা বাড়িয়েছেন। বিকেলে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের লাইনে দাঁড়ানো এক যুবক বললেন, ‘‘কাল রাতে বারাসত থেকে এসেও ভিড় দেখে ফিরে গিয়েছিলাম। আজ তাই সকাল-সকাল দেখে দক্ষিণে যাব।’’

দক্ষিণ কলকাতাতেও সপ্তমীর বেলা থেকেই ছিল একই রকম চিত্র। সন্ধ্যার পরে রাসবিহারী সংলগ্ন একাধিক রাস্তায় ভিড়ের কারণে অবস্থা এমন হয় যে, গাড়ির চাকা থমকে থাকে দীর্ঘক্ষণ। রাস্তা জুড়ে শুধু কালো মাথা দেখা গিয়েছে ওই চত্বরে। লেক কালীবাড়ি, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারা সম্মিলনী, একডালিয়া এভারগ্রিন, হিন্দুস্থান পার্ক— সর্বত্রই ছিল একই ছবি। হিন্দুস্থান পার্কের পুজোর লাইন থেকে জুতো হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন এক মহিলা। তাঁকে থামাতেই বিরক্তির সুরে বললেন, ‘‘স্রোতের মতো লোক আসছে। ঠেলাঠেলিতে নতুন জুতোটাই ছিঁড়ে গেল। এখন ঠাকুর দেখব না জুতো সারাইয়ের লোক খুঁজব!’’

সল্টলেক এবং নিউ টাউনের পুজো মণ্ডপগুলিও এ দিন সন্ধ্যা থেকে চলে গিয়েছিল ভিড়ের দখলে। কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া পুজোগুলির সামনেও ছিল লম্বা লাইন। ভিড় দেখে নিউ টাউনের প্রকৃতি বান্ধব সমিতির পুজোর এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘নিউ টাউনে তো সাধারণত পুজোয় কেউ আসতেই চায় না। কিন্তু এ বছর যে পরিমাণ লোক আসছে, তা নিঃসন্দেহে আমাদের উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’’

যদিও উৎসবের আবহে শহর জুড়ে ছিল আর জি কর-কাণ্ডের বিচার চেয়ে প্রতিবাদও। বুধবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ম্যাডক্স স্কোয়ার, দেশপ্রিয় পার্ক, ত্রিধারায় শোনা গিয়েছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। রাতে পুলিশ কয়েক জনকে আটক করে লালবাজারে নিয়ে যায়। পরে ন’জনকে গ্রেফতার করার কথা জানানো হয়। তার পরে সেই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ষষ্ঠীর রাতেই লালবাজারের সামনে বিক্ষোভ চলে। যার রেশ ছিল সপ্তমীর সকালেও। ধর্মতলা চত্বরে জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চেও এ দিন ভিড় ছিল গত দিনের তুলনায় বেশি। দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে এসেছিলেন সব বয়সের মানুষ। চিকিৎসকদের অনশন মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে এমনই এক জন বললেন, ‘‘উৎসব হচ্ছে হোক। কিন্তু যাঁরা চেয়ারে বসে রয়েছেন, তাঁরা কি এঁদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেন না?এঁদের বিচার চাওয়ার দাবিটা কি খুব অমূলক?’’

এ দিন যাদবপুর এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। বিচার চেয়ে সন্ধ্যায় একটি মিছিল যায় কলেজ স্কোয়ারের দিকে। পুলিশ মিছিল আটকানোয় সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। যাদবপুরেও ময়দানের খেলাপ্রেমীদের তরফে প্রতিবাদ সংগঠিত হয় এ দিন সন্ধ্যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Hunger strike Kolkata Doctor Rape and Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy