—জুনিয়র মৃধা।
ঘূর্ণিঝড় আয়লায় তছনছ চার দিক। গাছ ভেঙে বন্ধ রাস্তা, এলাকা জলে ভাসছে। দুর্যোগ মাথায় করে সে দিনই প্রথম মেয়েটি হাজির হয়েছিল বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয়নগরের ছোট্ট বাড়িটিতে। অমন দুর্যোগের জন্যই ২০০৯ সালের সেই দিনটা আজও স্পষ্ট মনে আছে সমরেশ মৃধার। একমাত্র সন্তান জুনিয়র মৃধার প্রেমিকা হিসেবে পরের দু’বছরে অসংখ্য বার ওই বাড়িতে গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী।
নিজের পরিচয় গোপন করা থেকে শুরু করে প্রিয়াঙ্কার আরও অনেক কিছুই মেনে নিয়েছিলেন মৃধা দম্পতি। সে বিবাহিত জেনেও বিচ্ছেদ হলে ছেলের সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন তাঁরা। সেই প্রিয়াঙ্কারই বদলে যাওয়াটা অবাক করেছিল সমরেশবাবুদের। ছেলে জুনিয়রও মেনে নিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ির বিষয়টি। এমনটাই মনে করেন বৃদ্ধ দম্পতি।
তার পরেও কেন খুন হতে হল তাঁদের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছেলেকে? এর উত্তর আজও খুঁজে চলেছেন মৃধা দম্পতি। প্রিয়াঙ্কা আপাতত সিবিআই হেফাজতে। এ বার ছেলের খুনের কিনারা হবে বলে বিশ্বাস সাড়ে ন’বছর ধরে লড়াই চালানো সমরেশবাবুর। তিনি বলেন, “সত্যিটা সামনে আসুক। কেন খুন হতে হল অমন শান্ত ছেলেটিকে, তা জানতে না পারলে মৃত্যুর পরেও শান্তি পাব না।”
আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কার লুকনো বিয়ে, বহু সম্পর্ক এবং জুনিয়র হত্যাকাণ্ড
বেলঘরিয়ার একটি নামী সংস্থায় চাকরি করতেন সমরেশবাবু। ২০১২ সালে অবসর নিয়েছেন। তার পর থেকে ছেলের মৃত্যু-রহস্য ভেদে শুরু হয়েছে লড়াই। শুধু সত্যিটা জানতে চান তিনি। বুধবার নিজের বাড়িতে বসে ছেলের কথাই আওড়ে যাচ্ছিলেন বার বার। বৃদ্ধ বলেন, “এমসিএ-তে বরাবর ৮৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেত জুনিয়র। ফাইনাল সিমেস্টারের পরে ২০১১ সালের শুরুতে একটি সংস্থায় শিক্ষানবিশ পদে যোগ দিয়েছিল। আজ ও নেই। কিন্তু বেঁচে থাকলে আজ আমেরিকায় চাকরি করত। একটি সংস্থায় সেই চাকরি পাকা হয়ে গিয়েছিল।”
আরও পড়ুন: ৯ হাজারের কম সক্রিয় রোগী, উদ্বেগ কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায়
এমসিএ পড়ার সময়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় জুনিয়রের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়াঙ্কার। সেটা ২০০৮ সাল। সমরেশবাবু বলেন, “প্রথম দিন প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছিল, সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেই সময়ে ময়দানের এক বিখ্যাত ক্লাবকর্তার মেয়ে বলে পরিচয় দিয়েছিল নিজের। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। জুনিয়র না থাকলেও আমাদের বাড়িতে আসত প্রিয়াঙ্কা। আমার স্ত্রীর সঙ্গে ওর সম্পর্ক ভাল ছিল।”
২০১১ সালের গোড়ার দিকে প্রথমে জুনিয়র, পরে সমরেশবাবুরা প্রিয়াঙ্কার বিয়ের কথা জানতে পারেন। জানতে পারেন তাঁর আসল পরিচয়। সমরেশবাবু বলেন, “প্রিয়াঙ্কা নিজের মেয়েকে দাদার মেয়ে বলে পরিচয় দিয়েছিল। ওর পরিচয় জানার পরে আমার স্ত্রী ওকে জুনিয়রের সঙ্গে মিশতে বারণ করেছিলেন। ও কিন্তু শোনেনি। তখন আমার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে বলেন, জুনিয়রকে বিয়ে করতে গেলে সে যেন আগে বিবাহ-বিচ্ছেদ করে। তা-ও করেনি। পরে তো জুনিয়রকে এড়িয়েই যেতে শুরু করে প্রিয়াঙ্কা।”
বৃদ্ধ জানান, মৃত্যুর মাসখানেক আগে থেকেই প্রিয়াঙ্কা ও জুনিয়রের যোগাযোগ প্রায় ছিল না। প্রথম দিকে জুনিয়রও খুব মনমরা থাকতেন। কিন্তু পরে তিনি ব্যাপারটা মেনে নেন। সমরেশবাবু বলছেন, “২০১১ সালের ১২ জুলাই, যে দিন আমার ছেলেকে খুন করা হয়, সে দিন প্রিয়াঙ্কা ওকে ২১ বার ফোন করেছিল। পরে এই তথ্য জানতে পারি। আমার জানা দরকার, সে দিন এত বার ফোন করে ছেলেকে কী বলেছিল প্রিয়াঙ্কা? সিআইডি হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর পায়নি। আশা করব, সিবিআই-কে সেই প্রশ্নের উত্তর ও দেবে।”
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়র যে দিন খুন হন, সে দিন প্রিয়াঙ্কার ফোন নম্বরের সঙ্গে আর একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে এক ব্যক্তির ২৪০ বার কথা হয়েছিল। সিবিআই সেই ব্যক্তির পরিচয় জেনেছে। এত বার তাঁর সঙ্গে কেন এবং কী কথা হয়েছিল প্রিয়াঙ্কার, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সমরেশবাবু বলছেন, “প্রিয়াঙ্কা গ্রেফতার হয়েছে। তাতে এত দিনের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও ফল পেয়েছি। কিন্তু যে আমার ছেলেকে গুলি করেছিল, আমি শুধু তাঁকে গরাদের ভিতরে দেখতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy