জুনিয়র ডাক্তারদের সাংবাদিক সম্মেলন। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘আমাদের বেশ কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে শুধুমাত্র আশ্বাসের পর্যায়েই তা রয়েছে। শুধুমাত্র ১০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছি, এটা বললেই তো হাসপাতালের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা আসে না। আমরা সুপ্রিম কোর্টের আগামী শুনানির আগেই সরকারের তরফে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ আশা করছি। আমরা যদি দেখি যে শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি, তাহলে আবার আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে।’’
চিকিৎসকেরা সাংবাদিক বৈঠকে জানান, বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামীণ বাংলার কথা ভেবে তাঁরা আন্দোলন সাময়িক ভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘আমাদের একটি দল ইতিমধ্যে পাঁশকুড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। সেখানকার বন্যাবিধ্বস্ত মানুষদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। এ ভাবেই নিজেদের অধিকার, দাবির জন্য প্রতিবাদ এবং সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের কর্তব্য পালন করে যাব। এই আন্দোলন চলবে। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। যত দিন না চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার পাচ্ছি, আমরা আমাদের লড়াই চলে যাব।’’ শুধুমাত্র ‘অপরিহার্য’ বা এসেনশিয়াল সার্ভিস চালু রাখবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
জুনিয়র ডাক্তার পারমিতা বলেন, ‘‘গত ৯ অগস্ট যে ঘটনা ঘটেছে, তা বিশ্বকে শিহরিত করেছে। ঘটনার ভরকেন্দ্র যেখানে, সেখানে থেকে আমরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। তার পর সুযোগ নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে আরজি করে আক্রমণ হয়েছে। প্রতিবাদ মঞ্চ ভাঙা হয়েছে। জেনারেল জরুরি বিভাগ ধুলিসাৎ করা হয়েছে। আমরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন শুরু করি। কেন আমাদের সঙ্গে এ সব হচ্ছে প্রশ্ন করি। সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ যে তাঁরা আমাদের আন্দোলনের প্রথম থেকে পাশে রয়েছেন। মাথা উঁচু করে লড়াই করে যাচ্ছি আমরা।’’
চিকিৎসক পারমিতা ভান্ডার প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিবাদের ৪২ দিন। গত শেষ ১১ দিন আমরা রাত জেগে রাস্তায় কাটিয়েছি। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জেগেছি। চড়া রোদ থেকে ভারী বৃষ্টি, কোনও কিছুই আমাদের টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়ার কিছুটা সরকার মেনে নিয়েছে। আমরা দেখেছি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই, ডিএইচএস বদল করেছে রাজ্য সরকার। গ্রেফতার হয়েছেন সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি। আপাতত খানিক জয়ের পর আমরা আমাদের আরজি কর ক্যাম্পাসে ফিরেছি।’’
‘‘আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকেরা রোগীদের ফেরাবেন না। তাঁরা যথাযথ চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনারাও বিচারের দাবিতে যেমন আমাদের পাশে ছিলেন, তেমনই পাশে থাকুন।’’ পাশাপাশি চিকিৎসকদের ধর্না চলবে বলেও ঘোষণা করা হয় আরজি কর হাসপাতাল থেকে।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জুড়েছিলেন এমন প্রচুর মানুষ, যাঁরা এখন বন্যাবিধ্বস্ত। আমরা তাঁদের জন্য ‘অভয়া ত্রাণশিবির’ খুলেছি। সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন তাঁরা। আমরা আগামিকাল (শনিবার) থেকে জরুরি পরিষেবা দিতে ফিরছি। আজও আমাদের জেনারেল এমার্জেন্সি বিভাগ ধ্বংসস্তুপের আকারেই রয়েছে।’’
আরজি করে ফিরে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলনের চাপে গ্রেফতার হয়েছেন আরজি করের কুখ্যাত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টালা থানার ওসি। পদচ্যুত হয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তা ছাড়া হাসপাতালের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা পেলেও বহু দাবি পূরণ হওয়া এখনও। তার মধ্যে মূল হল চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার, ডিসি (নর্থ) এবং স্বাস্থ্য দফতরের ডিএমই, ডিএইচএস বদল করেছে রাজ্য সরকার। সে অর্থে আন্দোলনকারীদের ‘বড় মাপের জয়’ হয়েছে। কিন্তু তার আগে ৪৩ দিনের ইতিহাস দেখেছে অন্দরের টানাপড়েন, মতানৈক্য এবং দ্বন্দ্ব। যা শুরু হয়ে গিয়েছিল আন্দোলনের ১৫ দিনের মাথায়। বৃহস্পতিবারের জিবি (জেনারেল বডি) বৈঠকেও তা গড়িয়েছিল তীব্র টানাপড়েনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy