হাই কোর্টের নির্দেশে কড়া পুলিশি প্রহরায় যোগেশচন্দ্র আইন কলেজে রবিবার সরস্বতী পুজো হল। পড়ুয়ারা চেয়েছিলেন, বিতর্কে ইতি ঘটুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হল না। রবিবার দুপুরে বিক্ষোভ দেখালেন যোগেশচন্দ্র ডে কলেজে পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো করতে দেওয়া হয়নি তাঁদের। বাধ্য হয়ে কলেজের বাইরে ইন্দ্রাণী পার্কের সামনে পুজোর আয়োজন করেছেন তাঁরা। এই নিয়ে আঙুল তুলেছেন কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়ের দিকে। অন্য দিকে, অধ্যক্ষ কলেজের ভিতরে নিজের উদ্যোগে ছোট প্রতিমা বসিয়ে পুজো করেছেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন, হাই কোর্টের নির্দেশে পুজোর জন্য কমিটি গড়ে দিয়েছেন। টাকা দিয়েছেন। তার পরেও তাঁকে পুজো নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সেই টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হয়েছে, তা তিনি জানেন না।

ক্যাম্পাসের বাইরে যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের পুজো। — নিজস্ব চিত্র।
রবিবার দুপুরে যোগেশচন্দ্র কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে যখন আইন বিভাগের পুজো চলছে, তখন বাইরে ব্যানার টাঙিয়েছেন ডে কলেজের পড়ুয়ারা। সেখানে অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়কে নিশানা করা হয়েছে। পড়ুয়াদের দাবি, ‘নোংরা রাজনীতি’র কারণেই তাঁরা ক্যাম্পাসের বাইরে পুজো করতে বাধ্য হয়েছেন। পঙ্কজকে ‘বিজেপির দালাল’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে ব্যানারে। কলেজ প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, ক্যাম্পাসে নির্মাণকাজ চলায় ডে কলেজের পুজো সরাতে হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।

কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো করছেন যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়। — নিজস্ব চিত্র।
অন্য দিকে, ডে কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ ক্যাম্পাসের ভিতরে নিজের দায়িত্বেই চেয়ারে ছোট প্রতিমা বসিয়ে পুজো করেছেন। পড়ুয়াদের অভিযোগ তিনি মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, গাড়ি বারান্দায় পুজো করতে হবে। সেই মর্মে কমিটি গড়ে টাকা দিয়েছি। কিন্তু তা দেওয়ার পরেও আমায় কিছু জানানো হয়নি। টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে, জানি না। এখন শুনছি কলেজের বাইরে পুজো হচ্ছে।’’ তার পরেই তিনি কলেজের ভিতরে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কর্তব্য রয়েছে। তাই নিজ উদ্যোগে পুজো করছি।’’ পড়ুয়ারা তাঁকে ‘বিজেপির দালাল’ বলেছে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে পঙ্কজ বলেন, ‘‘আমার ৪০ বছরের শিক্ষক জীবনে এ রকম দশা হয়নি যে রাজনৈতিক দল করতে হবে। কে বা কারা কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’’ তাঁর আরও দাবি, পড়ুয়াদের একাংশের নৈতিক সমর্থন রয়েছে বলেই এই পুজো তিনি করতে পেরেছেন। ডে কলেজের অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘নৈতিক সমর্থন রয়েছে বলেই পুজো করতে পারলাম। বহিরাগতদের আনাগোনায় সকলে ভীত। অনেকেই ফোন করে জানিয়েছেন সে কথা।’’
আরও পড়ুন:
যোগেশচন্দ্র আইন কলেজ এবং যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের ক্লাস হয় একই ক্যাম্পাসে। যোগেশচন্দ্র কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো করা নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইন বিভাগের এক পড়ুয়া। মামলাকারী অভিযোগ করেছিলেন, যে জায়গায় তাঁরা পুজো করে এসেছেন, তা দখল করেছে ডে কলেজ। আদালতে ডে কলেজের তরফে দাবি করা হয়, পুজোর জায়গায় অস্থায়ী নির্মাণ তৈরি করেছেন বহিরাগতেরা। এই বহিরাগতদের কলেজে প্রবেশের উপর আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি কলেজে এই বহিরাগতদের ‘উপদ্রব’ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শুক্রবার পুলিশ মোতায়েন করে সরস্বতী পুজো করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই যোগেশচন্দ্র কলেজে সরস্বতী পুজোর দিন বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, স্থানীয় সাংসদ তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য মালা রায়কে দেখে স্লোগান দিলেন একদল আইনের পড়ুয়া। অন্য দিকে, মূল ক্যাম্পাসে পুজো করতে না পেরে বিক্ষোভ দেখান যোগেশচন্দ্র ডে কলেজের পড়ুয়ারাও।