Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মুকুটহীন ‘জনক’ চার্নকের সমাধি অযত্নে

২৪ অগস্ট, এ শহরের জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, শহরের জঞ্জাল-যোগ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। তাই শনিবারও জোব চার্নকের সমাধিস্থলে দেখা গিয়েছে আবর্জনা, প্লাস্টিক।

অবহেলা: সেন্ট জন্‌স গির্জা চত্বরে জোব চার্নকের সমাধি। নিজস্ব চিত্র

অবহেলা: সেন্ট জন্‌স গির্জা চত্বরে জোব চার্নকের সমাধি। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

বিদেশিরা দেখতে এসেছিলেন কিছু দিন আগে। ঘুরে ঘুরে তাঁদের সব দেখানোও হচ্ছিল। এক জায়গার দিকে এগোতেই বিপত্তি। পায়ের সামনে পড়ল ভাত, মাছের কাঁটা-সহ প্লাস্টিক! সেন্ট জন্‌স গির্জা চত্বরের যেখানে প্লাস্টিকটি পড়ল, তার অল্প দূরেই শুয়ে শহরের বিতর্কিত ‘প্রতিষ্ঠাতা’ জোব চার্নক। সমাধিস্থলে প্লাস্টিক ভর্তি নোংরা! বিদেশিরা তাজ্জব। গির্জা কর্তৃপক্ষ তখন লজ্জায় মুখ লুকোচ্ছেন। কিন্তু লুকোলে কী হবে? এ শহরের সঙ্গে জঞ্জালের সম্পর্ক যে গভীর!

২৪ অগস্ট, এ শহরের জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, শহরের জঞ্জাল-যোগ নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। তাই শনিবারও জোব চার্নকের সমাধিস্থলে দেখা গিয়েছে আবর্জনা, প্লাস্টিক। গির্জা কর্তৃপক্ষ জানালেন, সদ্য পরিষ্কার করা হয়েছে। তা না হলে অন্য সময়ে নোংরায় ভরে থাকে পুরো সমাধিস্থল। সেন্ট জন্‌স গির্জার অফিসার রঙ্গন দত্তের কথায়, ‘‘আশপাশের আবাসন থেকে নোংরা পড়ে সমাধিস্থলে। পাশের আবাসনেই পুরসভার এক কাউন্সিলর থাকেন। তাঁর আবাসন থেকেও নোংরা পড়ে।’’ যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সন্তোষ পাঠকের দাবি, ‘‘আমি কেন নোংরা ফেলব? উল্টে লোক লাগিয়ে পরিষ্কার করিয়ে দিতাম।’’

এমনিতে শহরের জন্মদিন ২৪ অগস্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জোব চার্নক—এ দুই নিয়ে কিছু দিন আগে পর্যন্ত বিতর্ক লেগে ছিল। ১৯৮৯ সালের ২৫ অগস্ট, কলকাতার ৩০০তম জন্মদিন উপলক্ষে সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল,—‘কলকাতার জন্মদিন পালিত হল কেক কেটে, প্রদীপ জ্বালিয়ে, মিছিল করে’। কারণ, ১৬৯০ সালের ওই দিনেই সুতানুটির ঘাটে পদার্পণ করেছিলেন জোব চার্নক। তার পর থেকে অলিখিত ভাবে ওই দিন শহরের জন্মদিন মানা হত।

অদূরেই জমে রয়েছে প্লাস্টিক-সহ অন্য আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র

কিন্তু একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ দাবি করেছিল, কলকাতার কোনও জন্মদিন নেই এবং চার্নক এখানে আসার আগেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল। যে মামলার প্রেক্ষিতে ২০০২ সালে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই কমিটি বিভিন্ন নথি, কাগজ, গবেষণাপত্র পরীক্ষা করে জানায়, কলকাতার নির্দিষ্ট জন্মদিন নেই। চার্নকও কলকাতা প্রতিষ্ঠা করেননি। বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে একমত হয়ে ২০০৩ সালের ১৬ মে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ইতিহাস বই ও অন্যান্য নথি থেকে শহরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চার্নকের নাম মুছে দিতে হবে। মুছতে হবে শহরের জন্ম তারিখ।

যদিও ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলছেন, ‘‘জোব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন ঠিকই, কিন্তু শহরের নগরায়ণে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।’’ কলকাতা গবেষক হরিপদ ভৌমিক বলছেন, ‘‘চার্নক আসার আগে থেকেই কলকাতার অস্তিত্ব ছিল। তবে ২৪ অগস্ট দিনটি শহর কলকাতার পত্তনের দিন হিসেবে ধরা যেতে পারে।’’

ফলে শহরের জন্মদিন ঘিরে কথা-আলোচনা-বিতর্ক এ শহরের মতোই অম্লান, বহুমুখী। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, হাইকোর্টের রায়ের পরের কয়েক বছরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে জোব চার্নকের সমাধিস্থলে ছোট অনুষ্ঠান করে শহরের জন্মদিন পালন হত। সময়ের সঙ্গে সে সবও এখন অতীত।

পড়ে থাকে একাকী চার্নকের সমাধি ও নোংরার স্তূপ!

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Job Charnock St. John's Church Tomb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy