Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বারবার হামলাই ভিত তৈরি করে দেয় প্রতিবাদের

আমরা যাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, তাঁদের কাছে এই বিষয়গুলো নতুন নয়।

উষসী পাল (যাদবপুরের দর্শন বিভাগের ছাত্রী)
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

গোটা ক্যাম্পাস অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছে। লোহার রড, ব্যাট, উইকেট হাতে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ঢুকছে মুখ ঢাকা একের পর এক লোক। যাঁকেই পাচ্ছে, তাঁকেই ধরে মারছে। মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলোয় ভাঙা কাচ, ইটের টুকরো ছড়ানো জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অন্ধকার ঘর থেকে যে ভাবে মেয়েদের চিৎকার ভেসে আসছিল, তা চোখে দেখা যায় না।

তবে ভয়ে নয়, লজ্জায়। আর সেই লজ্জাই প্রতিবাদের আস্ফালন তৈরি করে। গোটা দেশ যে আস্ফালনে আজ পথে নেমেছে। এই পথের প্রতিবাদ থামবে না পুলিশের চোখ রাঙানিতেও। সোমবারই যেমন যাদবপুরের পড়ুয়াদের মিছিলে লাঠি চালাল পুলিশ। আমারও পায়ে লেগেছে।

আমরা যাঁরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, তাঁদের কাছে এই বিষয়গুলো নতুন নয়। এই তো গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় যে দিন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন, সে দিন ক্যাম্পাসে ঢুকে একই ভাবে ভাঙচুর চালিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ছাত্র শাখা এবিভিপি। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ইউনিয়ন রুমের জিনিসপত্র। বাঁকিয়ে দেয় ইউনিয়ন রুমের সিলিং ফ্যানের ব্লেড। দেওয়ালে লেখে ‘এবিভিপি’! তবে ওই ভাবে কী বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নেওয়া যায়? ওরা বোঝে না, বারবার শিক্ষাঙ্গনে হামলা করেও প্রতিবাদ রোখা যায় না। খাদ্যাভাব, অশিক্ষা, জাতপাত-বিভেদের রাজনীতি থেকে ‘আজ়াদি’র স্লোগান উঠবেই।

সে দিন বাবুলের নিরাপত্তারক্ষীদের হাত থেকে বাদ যায়নি মেয়েরাও। ব্যারিকেড করে কালো পতাকা হাতে জমায়েতের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রথমে ধাক্কা মারল, তার পরে আরও কত কী! কালো পতাকার প্রতিবাদের পাল্টা যে ওই হিংস্রতা হতে পারে, ভাবতে পারি না। এবিভিপি-র লোক সে দিন মুখ ঢেকে ক্যাম্পাসে আসে বাবুল বেরিয়ে যাওয়ার পরে।

তার আগে গেটের বাইরে রাখা সাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। তখনও অনেকে ক্যাম্পাসে ক্লাস করছিলেন। মেন সুইচ বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দিতেই শুরু হয় চিৎকার। জেএনইউ-এর ঘটনার সঙ্গে কত মিল!

সত্যি বলতে ভয় করেনি। ভয় করে না। লোহার রড, লাঠি হাতে ওই লোকজনকে দেখেও সে দিন থামায়নি পুলিশ। যেমন থামায়নি জেএনইউয়ে। কমরেড ঐশীর মার খাওয়ার ভিডিয়ো দেখে বরং সাহস হয়। শ্রীজাত-র লেখাটাই ঘুরপাক খায় মনে— ‘তুমি যদি বারংবার কোপ মারতে পারো, ছিন্ন কাঁধে মাথা জন্মাবে আমারও!’

অন্য বিষয়গুলি:

Protest Jadavpur University JNU JNU Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy