মুখর: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পার্ক সার্কাস থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত হেঁটে প্রতিবাদসভায় যোগ দেওয়ার পরেও ক্লান্তি নেই ছিটেফোঁটা। বেলডাঙার শবনম মুস্তারি বা বর্ধমানের কুসুমগ্রামের আঞ্জুম পরভিনেরা নিজস্বী তুলতে গিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। তবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রীই সতর্ক, জাতীয় পতাকার ছবিটা ফ্রেমে ঠিকঠাক আসছে তো!
পাড়াগাঁ থেকে কলকাতায় পড়তে আসা এই তরুণ বাহিনীর অনেকেরই রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু স্কুলে জাতীয় পতাকা হাতে শোভাযাত্রার থেকে এই পথে নামায় আলাদা টান অনুভব করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার বিকেলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মিছিল বা প্রতিবাদসভা এক অন্য ধরনের জাতীয়তাবাদী আবেগই মেলে ধরল। ইংরেজির শিক্ষক তাজুদ্দিন আহমেদ, শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় বা সাংবাদিকতার শিক্ষক মহম্মদ রিয়াজ়েরা ছেলেমেয়েদের মিছিলটাকে ময়দানের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। তখনই হাতে হাত আঁকড়ে তৈরি হল একটি বৃত্ত। সাংবাদিকতার শিক্ষিকা গাজ়ালা ইয়াসমিন ‘উই দ্য পিপল অব ইন্ডিয়া’ বলে ধরতাই দিলেন। দেশের সংবিধানে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র হওয়ার সঙ্কল্প উচ্চারণ করতে গোটা ভিড়টাই থরথর আবেগে কাঁপছিল।
গাঁধী, অম্বেডকরের ছবি হাতে এসেছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের স্বামী বিবেকানন্দের কথা বললেন শিক্ষকেরা। শিক্ষা মানেই হল, মানুষের ভিতরের পূর্ণতার প্রকাশ। শিক্ষাঙ্গনে হামলা সেই পূর্ণতাকেই নষ্ট করার চেষ্টা।
ধনেখালির মনিরুল হক, ডোমকলের স্বপন মণ্ডল বা মালদহের সাদিকুল ইসলামেরা তখন জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন। ‘আমরা বিসমিল-আশফাকের সন্তান’ স্লোগান লিখে পথে নেমেছিলেন ছেলেমেয়েরা। কারও স্লোগান, ‘মানুষে মানুষে ভাগ নয়, হাতে হাতে কাজ চাই’! একটি পোস্টারের ছবিতে ঘাতকের মুখোমুখি হিজাবধারী তরুণী। প্রাণপণে দেশের মানচিত্র আঁকড়ে ধরেছেন তিনি। তলায় লেখা, কোথায় গেল চৌকিদার! এই পড়ুয়ারা কয়েক দিন ধরেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। গত ১৯ ডিসেম্বরের মহামিছিলেও অনেকে গিয়েছিলেন। জেএনইউ-এর হামলায় তাঁদের প্রতিবাদী আবেগ আরও জোরালো।
এ দিন শিক্ষকেরা বলছিলেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী প্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষক সকলেই এককাট্টা। মিছিল থামার পরে সকলে একসঙ্গে ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’ এবং সব শেষে ‘জনগণমন অধিনায়ক’ও গাইলেন। কারও কারও তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলেও শামিল হওয়ার তাড়া। ধর্মের জিগিরের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একসঙ্গে চলার ডাক দিল শীতের বিকেল। জনৈক প্রবীণ শিক্ষকের টিপ্পনী, ‘‘নাহ, মোদী-শাহেরা দেখছি, হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ফাটল ধরাতে গিয়ে উল্টে সবাইকে প্রতিবাদে একজোট করে ছেড়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy