চলছে ভিডিয়ো কলে জামাইষষ্ঠী। নিজস্ব চিত্র
করোনায় ছোঁয়াচ ঠেকাতে চলছে লকডাউন। তাই এ বার আর শাশুড়ির আশীর্বাদের হাত সরাসরি পড়তে পারেনি জামাইয়ের মাথায়। আর জামাইয়ের হাত পৌঁছতে পারেনি শাশুড়ির পায়ে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে ওঠা বাঙালিকে তাই বাড়িতে বসে অনলাইনেই জামাইষষ্ঠী সারতে বাধ্য করল করোনা-বিদ্ধ ২০২০। বৃহস্পতিবার বহু বাড়িতেই ভিডিয়ো কলে পালন হল জামাইষষ্ঠী।
বারো মাসে তেরো পার্বণে বিশ্বাস রাখা বাঙালির এ বার প্রতিটি উৎসবই করোনা ফিকে করে দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব-বিধির প্যাঁচে পড়ে পয়লা বৈশাখ, হালখাতা, অক্ষয় তৃতীয়া, রবীন্দ্রজয়ন্তী— মাটি হয়েছে সবই। বাদ গেল না জামাইষষ্ঠীও। শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সকলে একসঙ্গে কব্জি ডুবিয়ে ভূরিভোজ সারার সুযোগ পেলেন না কেউই।
তাই ডিজিটাল মাধ্যমকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সরকারি কর্মচারী প্রদীপ মজুমদার। এ দিন সকাল সকাল বীরভূমের সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লি থেকে প্রদীপবাবুকে ভিডিয়ো কলে আশীর্বাদ জানান তাঁর শাশুড়ি। প্রদীপবাবুর কথায়, “বিয়ের পর টানা আট বছর জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি। এ বার আর সুযোগ হয়নি। তবে সকালেই শাশুড়ি ভিডিয়ো কল করে আশীর্বাদ করলেন। আবার অনলাইনে উপহারও পাঠাচ্ছেন।”
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এ বার শহর ও শহরতলির বেশির ভাগ জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এড়িয়ে গিয়েছেন। এমনকি কাছাকাছির মধ্যে হওয়া
সত্ত্বেও অনেকেই শ্বশুরবাড়ি যাননি। যাদবপুরের বিজয়গড়ের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুরবাড়ি তাঁর নিজের পাড়াতেই।
তাঁর কথায়, “আঠারো বছর ধরে এই দিনে শ্বশুরবাড়ি যাই। এ বার আমার শাশুড়ি ভীষণ অসুস্থ। করোনার
আশঙ্কা থেকেই এ বার জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি যাইনি।”
লকডাউন চলায় অনেক মহিলাই তাঁর জামাইয়ের জন্য অনলাইনেই কেনাকাটা করেছেন। আবার সময় থাকতে তা জামাইয়ের হাতে অনলাইনেই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি শপিং মলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বলেন, “লকডাউনের জন্য মল বন্ধ থাকলেও গত এক সপ্তাহে জামাইষষ্ঠীর কেনাকাটার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করেছিলেন। শ্বশুর-শাশুড়িরা অনলাইনে কেনাকাটা সেরেছেন।”
সল্টলেকের বাসিন্দা নিশারানি মিত্রের জামাই শঙ্কর মুখোপাধ্যায় শ্যামবাজারের বাসিন্দা। তিনিও এ দিন সকালবেলাই ভিডিয়ো কলে জামাইকে আশীর্বাদ করেন। কলকাতা পুরসভার আধিকারিক শঙ্করবাবুর কথায়, “লকডাউনে জামাইষষ্ঠীতে শাশুড়ির ভিডিয়ো কল পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো। অনলাইনে উপহারও দিয়েছেন শাশুড়ি। ভিডিয়ো কলে অনেক ক্ষণ ভাল আড্ডা হল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে।”
এ ভাবে ভিডিয়ো কলে জামাইষষ্ঠী পালন দেখে অনেকেই মনে করছেন, মহামারি, বিপর্যয় মানুষকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু তার মধ্যেও সদ্য তৈরি হওয়া ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সংস্কৃতি মানুষকে পেটের খোরাক জোগানোর রাস্তা দেখাচ্ছে। করোনার আবহেই বাড়িতে বসে অনলাইনে ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেও সংস্কৃতির আদান-প্রদান করেছে বাঙালি। এ বার ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে উৎসবে শামিল হয়ে আত্মীয়তা টিকিয়ে রাখার বিকল্প পথও এ ভাবেই খুলে যাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy