(বাঁ দিক থেকে) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুরের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। —ফাইল চিত্র।
হস্টেল এবং ক্যাম্পাসে র্যাগিং রুখতে বিশেষ দল তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে এই দল। ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে কোনও রকম অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে কিংবা এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে ওই দল দ্রুত পদক্ষেপ করবে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সিসি ক্যামেরা বসানো, পড়ুয়াদের মানসিক অবস্থা জানার জন্য কাউন্সেলিং করার মতো একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হবে বলেও বৈঠকের পর জানিয়েছেন যাদবপুরের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। তিনি জানান, সিসি ক্যামেরা নিয়ে পড়ুয়াদের আপত্তি থাকলে আলোচনায় বসবেন কর্তৃপক্ষ।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যাদবপুরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে যখন নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তখনই র্যাগিং মোকাবিলায় পদক্ষেপ করতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গাইডলাইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা নেই কেন, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে, সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে ঘোর আপত্তি পড়ুয়া এবং হস্টেলের আবাসিকদের একাংশের। তাঁদের দাবি, এ ভাবে কর্তৃপক্ষ ‘নজরদারির ঘেরাটোপে’ রাখতে চায় পড়ুয়াদের। তবে সোমবারের বৈঠকের পর অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা বসছেই। তিনি বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি এমন নয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সিসি ক্যামেরা আছে। আরও কিছু কিছু ডিপার্টমেন্টে বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আগে ধীর গতিতে কাজ চলছিল। এখন দ্রুত এই কাজ হবে।’’ উপাচার্য বুদ্ধদেব জানান, সোমবারের বৈঠকে গণিত এবং ভূগোল বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের শ্রেণিকক্ষে সিসি ক্যামেরা আছে। উপাচার্যের কথায়, ‘‘সেখানে পড়ুয়ারা কোনও প্রতিবাদ জানাননি। সুতরাং, বাকি বিভাগেও আমরা ক্যামেরা বসাচ্ছি।’’ তিনি জানান, নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলের বিভিন্ন গেটে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। প্রত্যেকটা ভবনের ‘এন্ট্রি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা থাকবে। তা ছাড়া করিডোরে সিসি ক্যামেরা রাখা যায় কি না, আলোচনা করা হচ্ছে।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কেন ‘বহিরাগত’ ঢোকেন, তা নিয়ে পড়ুয়া এবং ছাত্রদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে ‘লগবুক’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, বাইরের কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতে হলে ওই ‘লগবুকে’ নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তা ছাড়া হস্টেলের আবাসিকদের জন্য আলাদা করে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে যাঁদের কাছে ওই পরিচয়পত্র থাকবে, তাঁরা সেটি নিরাপত্তারক্ষীকে দেখিয়ে হস্টেলে প্রবেশ করবেন। বাকিদের ক্ষেত্রে ‘লগবুকে’ নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তারও কয়েকটি গাইডলাইন থাকবে বলে জানাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘কারা এই লগবুকের সাহায্যে এন্ট্রি পাবেন, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’
পড়ুয়াদের মানসিক কোনও সমস্যা রয়েছে কি না এবং তাঁদের মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে। কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন শিক্ষকেরাই। সেখানে পড়ুয়ারা নিজেদের অসুবিধার কথা বলতে পারবেন। র্যাগিংয়ের মতো কোনও ঘটনা ঘটছে কি না, তা নিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলবে কমিটি। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে র্যাগিং রুখতে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি রয়েছে। কিন্তু তার পরেও র্যাগিংয়ের কারণে ছাত্রমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ওই কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ বার অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, গত তিন বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ নিয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত ছাত্র সংসদ তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। সোমবারের এই বৈঠকে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানরা। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy