ফাইল চিত্র।
জল অপচয় রোধে সচেতনতার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তার পরেও কাজ না হলে অতিরিক্ত জল ব্যবহারের উপরে ‘চার্জ’ বসানোর কথা ভাবছে কলকাতা পুরসভা। নির্ধারিত মাত্রার জল বিনামূল্যে দেওয়ার পরে অতিরিক্ত জলের জন্য এই ‘চার্জ’ বসানো হতে পারে বলে কলকাতা পুর প্রশাসন সূত্রের খবর।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী তথা কলকাতা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে বলছেন, ‘‘জল অপচয়ের বিষয়ে মানুষের হুঁশ না ফিরলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পরে চার্জ বসানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ মন্ত্রীর এ-ও সংযোজন, জলের অধিকার প্রত্যেকের থাকলেও জল অপচয়ের অধিকার কারও নেই। তবে পুর কর্তৃপক্ষের এই ভাবনাকে স্বাগত জানালেও নীতির রূপায়ণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের বক্তব্য, এর আগে একাধিক বার জলকরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বাম আমলে (২০০৫-’১০ সাল) ওয়ার্ডভিত্তিক সমীক্ষার উপরে ভিত্তি করে জলকরের কাঠামো কী হবে, তা-ও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনমোহিনী নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। এক পরিবেশবিদ বলছেন, ‘‘রাজ্যে বর্তমান ক্ষমতাসীন শাসকদলের তো জলকর শব্দটি নিয়েই আপত্তি রয়েছে। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’’
এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জলকর বসানোর কথা বলা হচ্ছে না। নির্ধারিত মাত্রার (কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী শহরের ক্ষেত্রে যে মাত্রা দৈনিক মাথাপিছু ১৩৫ লিটার) বেশি কেউ জল অপচয় করলে তার জন্য চার্জ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তা-ও দরিদ্র বা বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের কাছ থেকে নয়। এমনিতে ‘বাল্ক মিটার’ বসিয়ে বহুতল ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্র থেকে নির্দিষ্ট হারে চার্জ আদায় করে পুরসভা। কিন্তু এ বার আবাসিক বাড়ির ক্ষেত্রেও চার্জের ভাবনা-চিন্তা চলছে।
তবে পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, চার্জ বসাতে গেলে তো আগে শহরের সমস্ত ‘হাউসহোল্ড’-এ জলের মিটার বসানো প্রয়োজন। সরকারি তথ্য বলছে, শহরে ‘হাউসহোল্ড’-এর সংখ্যা হল প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ। সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র নয় হাজার বাড়িতে জলের মিটার বসেছে। অথচ পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বর্ষের বাজেটে জলের অপচয় রোধের জন্য ১-৬ নম্বর ওয়ার্ডে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প ও তার বাস্তবায়নে দরপত্র ডাকার কথা বলা হয়েছিল। আবার ২০১৭-’১৮ আর্থিক বর্ষের বাজেটে সেই কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল। এক নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর তরুণ সাহার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সে সময়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হলেও মিটার বসানো শুরু হয় ২০১৯ সাল নাগাদ।’’
কিন্তু এই হারে মিটার বসানোর কাজ চলতে থাকলে সাড়ে ন’লক্ষ বাড়িতে মিটার বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হতে কত বছর লাগবে, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না কেউই। আর মিটার বসানোর কাজ সম্পূর্ণ না হলে জলের চার্জও নেওয়া সম্ভব নয়। এক পুরকর্তার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সাড়ে ন’লক্ষ বাড়িতে মিটার বসানোর প্রয়োজন না-ও হতে পারে। যেমন ১-৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে ২৫ হাজার বাড়িতে মিটার বসানোর হিসেব ধরা হয়েছিল। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যায়, জল-সংযোগ রয়েছে, এমন বাড়ির সংখ্যা ১৮ হাজারের মতো।’’
আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের কথা বলছেন পুরকর্তারা। তা হল, একমাত্র ‘ভলিউমেট্রিক ওয়াটার ট্যারিফ’-এর ক্ষেত্রেই সমস্ত হাউসহোল্ডের প্রশ্ন আসছে। কিন্তু দরিদ্র বা বিপিএল তালিকাভুক্ত বাড়ি বাদ দিয়ে আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ পরিবারের কাছ থেকে একটা ‘ফ্ল্যাট চার্জ’ (যা বহুতল বা আবাসিক বাড়ির ক্ষেত্রে আলাদা-আলাদা হতে পারে) যে কোনও সময়েই নেওয়া সম্ভব। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অজিতাভ রায়চৌধুরী আবার বলছেন, ‘‘বহু প্রাকৃতিক সম্পদের মতো জলের উৎসও সীমিত হয়ে আসছে ক্রমশ। ফলে অপচয় বন্ধের জন্য মিটার বসিয়ে বা বিকল্প পদ্ধতিতে জলের চার্জ গ্রহণের নীতি অবলম্বন করা উচিত।’’
কিন্তু সেই ‘উচিত’ আর নীতির ‘বাস্তবায়ন’-এর মধ্যে যে বিপুল ফারাক, তা কবে মিটবে, সে উত্তর কারও কাছেই নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy