ভুয়ো কল সেন্টারে বিদেশি নাগরিকদের নানা ভাবে ঠকানোর ফাঁদ পাতা হচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
কলকাতা ও বিধাননগরে প্রায়ই হদিস মিলছে একের পর এক ভুয়ো কল সেন্টারের। যেখান থেকে বিদেশি নাগরিকদের নানা ভাবে ঠকানোর ফাঁদ পাতা হচ্ছে। আর তাতেই প্রমাদ গুনছে তথ্যপ্রযুক্তি মহল। তারা মনে করছে, এই সমস্ত ঘটনার জেরে বদনামের ভাগীদার হয়ে বিদেশের বাজার থেকে ব্যবসা আনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ। সমস্যার সমাধানে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছে তারা।পাঁচ নম্বর সেক্টর এবং নিউ টাউন— তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক হিসাবে পরিচিত এই দুইজায়গায় বর্তমানে গজিয়ে উঠেছে অগুনতি কল সেন্টার। যাদের সিংহভাগ গ্রাহকই বিদেশি। ওই সমস্ত ব্যবসার আড়ালেই চলছে বিদেশি নাগরিকদের ঠকানোর দুষ্টচক্র। অথচ, কোন সংস্থায় কী কাজ হচ্ছে, সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘সেক্টর-৫ স্টেক হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-সভাপতি কল্যাণ কর জানালেন, অনলাইন প্রতারণার একের পর এক ঘটনার জেরে জামতাড়া জায়গাটিরই বদনাম হয়ে গিয়েছে। তাঁর আশঙ্কা, তেমনটা ঘটতে পারে কলকাতার ক্ষেত্রেও। কল্যাণের কথায়, ‘‘বিদেশ থেকে কল সেন্টার, বিপিও-সহ নানা ধরনের ক্ষেত্রের ব্যবসা কলকাতায় আসে। বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি বিদেশিরা দেখেন, কলকাতার সংস্থাগুলির কাছে তথ্য সুরক্ষিত থাকছে না, তবে তাঁরা আমাদের ব্যবসাই দেবেন না।’’
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, করোনার পরে গত দেড় বছরে পাঁচ নম্বর সেক্টর ও নিউ টাউনে বহু কল সেন্টার এবং বিপিও তৈরি হয়েছে। তারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভাল কাজ করছে। এমন সময়ে এই ধরনের দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থানা নিলে শুধুমাত্র বদনামের ভাগীদার হয়ে ব্যবসা পাবে না কলকাতার সংস্থাগুলি। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আমরা সন্দেহজনক সংস্থার খবর পেলেও তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। সন্দেহজনক কোনও সংস্থায় চাকরি করে আসা কর্মীকে যোগ্য মনে হলে তাঁকে চাকরিতেও নিয়ে নিই। কিন্তু ওই কর্মীর দেওয়া তথ্য পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে জানাই না। এ বার আমাদেরও সজাগ হতে হবে।’’
নিউ টাউনে গত বুধবার ভুয়ো কল সেন্টার ব্যবসার যে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে, সেই সমস্ত ব্যবসার চাঁইয়েরা এফবিআইয়ের মতো আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থার নাম করে সে দেশের নাগরিকদের ঠকাত বলে দাবি পুলিশের। ‘সেক্টর-৫ স্টেক হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’ মনে করছে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরির প্রশিক্ষণ দেওয়া সংস্থাগুলিকে সজাগ করা প্রয়োজন, যাতে তারা চাকরিপ্রার্থীদের এই ধরনের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ করে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই না বুঝে এই ধরনের সংস্থায় কাজ করতে ঢুকে অল্পবয়সিরা গ্রেফতার হচ্ছেন। তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে কোনও সংস্থা এমন কোনও সন্দেহজনক সংস্থার খবর পেলে যেন পুলিশকে জানায়।
‘নিউ টাউন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ কিংবা নবদিগন্ত শিল্পতালুকের প্রশাসনিক কর্তাদের অবশ্য দাবি, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা এতটা স্পর্শকাতর যে, সব ক্ষেত্রে কড়া ভাবে সবটা খতিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বেশি কড়া হতে গেলে আবার হেনস্থার অভিযোগ উঠবে। তাই যাঁরা ওই সব বাণিজ্যিক বাড়িতে সংস্থা চালাচ্ছেন, তাঁরা সজাগ থাকুন তাঁদের আশপাশ নিয়ে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশকে জানান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy