প্রতীকী চিত্র।
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি। তাই প্রাক্তন সহকর্মীর ব্যক্তিগত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছিলেন এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। সেই মামলায় ওই ব্যক্তিকে ২ বছর কারাদণ্ডের সাজা শোনাল বিধাননগর মহকুমা আদালত। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট গঠিত হওয়ার পর তথ্য প্রযুক্তি আইনে সেখানকার কোনও মামলায় এই প্রথম সাজা শোনালো আদালত।
অভিযোগকারিণী নিজেও এক জন তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী। আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা ওই তরুণী সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি নামী তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থায় অভিযুক্ত জিতেন্দ্রর সঙ্গে চাকরি করতেন। সেই সূত্রেই জিতেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গতা হয় এবং পরে তাঁরা একটি সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, সেই সময়েই ওই তরুণীর বেশ কিছু ব্যক্তিগত মূহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো চলে আসে যুবকটির কাছে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেলে, ওই যুবক বার বার তরুণীকে বিয়ে করার জন্য চাপ তৈরি করতে থাকেন বলে অভিযোগ। এর পরেই ওই তরুণী চাকরি ছেড়ে দেন। তা-ও পিছু ছাড়েননি জিতেন্দ্র। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, ওই তরুণীর নামে পাঁচটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে জিতেন্দ্র সেই ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় ছবিগুলি আপলোড করে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করেন। এমনকি ওই তরুণীর পরিবারের সদস্যদেরও নিজের পরিচয় গোপন রেখে হুমকি দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন: ‘ধূসর তালিকা’তেই থাকছে পাকিস্তান, জানিয়ে দিল এফএটিএফ
এই পরিস্থিতিতে ২ এপ্রিল, ২০১৮ ওই তরুণী বিধাননগর পুলিশ কমিশারেটের সাইবার থানায় অভিযোগ জানান। ওই মাসেরই ২০ তারিখ গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। পরের মাসেই জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ।
এ দিন রায় শোনানোর সময় বিচারক ই লেপচা উল্লেখ করেন, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট থেকে প্রমাণিত হয় ওই অ্যাকাউন্টগুলি ভুয়ো। অভিযুক্তের অফিস থেকে তাঁকে গ্রেফতার করার সময় বাজেয়াপ্ত করা হয় সেই ল্যাপটপ এবং মোবাইল যেখান থেকে ওই ভুয়ো অ্যাকাউ্ন্ট তৈরি করা হয়েছিল। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টেও তা প্রমাণিত হয়। সেই রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে যে, ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিয়ো এবং ছবি অভিযোগকারিণী তরুণীর। প্রযুক্তিগত তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে আদালত অভিযুক্তকে দোষী স্যব্যস্ত করে বলে জানান বিচারক।
ওই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী ছিলেন বিভাস চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত জিতেন্দ্র সিংহ গ্রেওয়ালকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪ডি (সম্ভ্রমহানি), ৫০০ (মানহানি), ৫০৯ (ভয় দেখানো), ৫০৭ (নিজের পরিচয় গোপন রেখে হুমকি দেওয়া), তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬সি (ডিজিটাল দুনিয়ায় ভুয়ো পরিচয় দেওয়া) এবং ৬৭ এ (ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারও অশালীন ছবি প্রচার)— সব ক’টি ধারাতেই বিচারক দোষী স্যবস্ত করেছেন।” তবে সাজার মেয়াদ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সরকারি কৌঁসুলি। বিভাস এ দিন বলেন, ‘‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৭এ ধারায় ৫ বছর পর্যন্ত সাজার সংস্থান আছে। বিচারক জিতেন্দ্রকে ওই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু ওই ধারায় মাত্র ২ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বিচারকের কাছে ওই ধারায় উল্লিখিত সর্বোচ্চ মেয়াদের সাজা ঘোষণা করার জন্য ফের আবেদন করব।”
আরও পড়ুন: এক ঘরে ঢুকিয়ে মহিলা কর্মীদের নগ্ন করে ‘ফিটনেস টেস্ট’, তোলপাড় সুরত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy