ছবি রয়টার্স।
কে সংক্রমিত আর কে সংক্রমিত নন, ক্রমশ সে বিভাজনরেখা মুছে যাচ্ছে। যেমন ভাবে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে সংক্রমণের উৎস নিয়ে। ‘চেন অব ট্রান্সমিশন’, অর্থাৎ সংক্রমণের প্রবাহরেখাও আর নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সব বিষয় একটি দিকেই ইঙ্গিত করছে। তা হল— গোষ্ঠী সংক্রমণ!
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের বক্তব্য, সে কারণেই সারা দেশ যখন আনলকের দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছে, তখন ঠিক তার উল্টো পথে হেঁটে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বেশ কিছু অংশে ফের লকডাউন চালু হল। যে ভাবে প্রতিদিন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়টিকে আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, ফের লকডাউন চালুর অর্থই হল গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে, সেটাই পরোক্ষে স্বীকার করে নেওয়া। যদিও সরকারি ভাবে গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা এখনও বলা হয়নি।
‘ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর (আইপিএইচএ) সেক্রেটারি-জেনারেল সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। এমন বহু আক্রান্তকে পাওয়া যাচ্ছে, যাঁদের সংক্রমণের উৎসই বোঝা যাচ্ছে না। সংক্রমণের উৎস যখনই বোঝা যাবে না, তখনই ধরে নিতে হবে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও তার পরিবর্তে লকডাউন কোনও সমাধান হতে পারে না বলে জানাচ্ছেন তিনি। প্রয়োজনে ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট হতে পারে, কিন্তু রাস্তা বন্ধের প্রয়োজন নেই। কারণ, তাতে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মনে করছে আইপিএইচএ।
তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক তথা ম্যাথমেটিক্যাল-বায়োলজি বিশেষজ্ঞ প্রীতিকুমার রায়ের বক্তব্য, সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই এই মুহূর্তে। কারণ, কে সংক্রমিত আর কে সংক্রমিত নন, সেটাই এখন আর বোঝা যাচ্ছে না। সামান্যতম উপসর্গ নেই, এমন কাউকে পরীক্ষা করার পরে দেখা যাচ্ছে যে তিনি করোনা পজ়িটিভ। প্রীতিকুমারবাবুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা খুব সচেতন, তাঁরাও এই মুহূর্তে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেন। কী ভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন, তা ধরা যাচ্ছে না। সংক্রমণ আটকানোর পথই হল দূরত্ব-বিধি ও অন্যান্য নিয়ম মানা। সেই সঙ্গে ক্রমাগত পরীক্ষা করে যাওয়া। কিন্তু এ সবের কোনওটিই মানা হচ্ছে না বলেই লকডাউনের বিকল্প নেই।’’
লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে কোনও রকম নিয়ম না-মেনে লোকজনের অবাধ যাতায়াত সংক্রমণের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, লকডাউন শিথিল হতেই বেশি সংক্রমিত এলাকা থেকে সংক্রমণ নেই বা কম রয়েছে, এমন এলাকায় মানুষ যাতায়াত করছেন। সংক্রমণ রোখার জন্য মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখার মতো নিয়ম না মেনেই ‘হাই এন্ডেমিক’ এলাকা থেকে ‘লো এন্ডেমিক’ এলাকায় অবাধ যাতায়াত চলেছে। বেশি সংক্রমিত এলাকার লোকজনের অবাধ যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সংক্রমণের বৃত্ত ক্রমশ প্রসারিত হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কুণালকান্তি মজুমদারের কথায়, ‘‘হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ার পিছনে জনসাধারণের এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াত (পপুলেশন মুভমেন্ট) বড় কারণ। আরও একটি কারণ নিয়ম না-মানা। এখনও বেশির ভাগ লোকের মুখে মাস্ক নেই। ফলে সংক্রমণ থামবে কী ভাবে?’’
কানপুরের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’-র ‘ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স’-এর অধ্যাপক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে সব থেকে জরুরি সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করে গণ্ডিবদ্ধ করা। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, তাঁরা যাতে রোগ ছড়াতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে নতুন করে কেউ সংক্রমিত না হন, তা-ও দেখতে হবে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর কাজটা এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্তের ঘনিষ্ঠ পরিসরে, অর্থাৎ ব্যক্তিগত বা কর্মক্ষেত্রেও করোনা পরীক্ষা করা ভীষণ জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy